ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংশোধিত এডিপির ৯২ ভাগ বাস্তবায়ন

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৩ জুলাই ২০১৫

সংশোধিত এডিপির ৯২ ভাগ বাস্তবায়ন

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সদ্যসমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) বাস্তবায়িত হয়েছিল ৯৫ শতাংশ, তার আগের বছর ছিল ৯৬ শতাংশ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ৯৩ শতাংশ। পুরো বছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে প্রায় ৭১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রাথমিক হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছিল ৬৭ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে বাস্তবায়ন হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে বলেছিলেন, নতুন অর্থবছর থেকে (অর্থাৎ চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছর) এডিপি বাস্তবায়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যাতে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়। তিনি জানান, অর্থবছরের প্রথম তিন মাস প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা যায় না। এটি বাস্তবতা ও যুক্তিসঙ্গত। পরবর্তীতে ওই তিন মাসের কাজ মেকাপ করতে গিয়ে অর্থবছরের শেষদিকে বাস্তবায়ন বেশি মনে হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একই কথা বার বার বলতে ভাল লাগে না। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় কাজ হয়ে যায়, কিন্তু বিল পরিশোধ বাকি থাকে। অর্থবছরের শেষদিকে এসে ওই বিল পরিশোধ করা হয় বলে একবারেই অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায়। ফলে শেষ মাসে এসে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন বেশি হয়। সূত্র জানায়, ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৫০ হাজার ১০০ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ সময় ব্যয় করতে না পারার আশঙ্কায় মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে যায় ৫ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপির সরকারী তহবিল থেকে কমছিল ২ হাজার ১১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে কমে যায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা কমানো হয়েছিল। মূল এডিপির ১ হাজার ২২৪টি প্রকল্প থেকে কমিয়ে করা হয় ১ হাজার ২০৪। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১৪টি, কারিগরি প্রকল্প ১৬৯টি এবং জাপানী ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ২১টি প্রকল্প। সংশোধিত এডিপি অনুমোদনের সময় পরিকল্পনা কমিশন থেকে ৭২ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত এডিপির খসড়া উপস্থাপন করা হয় এনইসিতে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা আরও ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থবছর শেষে বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় মাত্র ৯১ শতাংশে। সূত্র জানায়, এর আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে ৯টি বাধা চিহ্নিত করেছিল পরিকল্পনা কমিশন। এগুলো হচ্ছে- নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও এমটিবিএফের মধ্যে পার্থক্য, প্রকল্পের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ও বাজেট নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা কমিশনের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ও টেকনিক্যাল প্রকল্প প্রস্তাবে (টিপিপি) গুনগতমানের দুর্বলতা, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এডিপির মধ্যে দুর্বল সংযোগ, প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে আইএমইডির সীমিত কর্তৃত্ব, ঘনঘন প্রকল্প সংশোধন, কর্মকর্তাদের ঘনঘন বদলি এবং দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা। বলা হয়েছে এসব কারণেই সরকারের উন্নয়ন বাজেটের কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে উঠে না। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল।
×