ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চাঙ্গা মুদ্রণ শিল্প

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২২ এপ্রিল ২০১৫

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চাঙ্গা মুদ্রণ শিল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের মুদ্রণ শিল্প। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ তিন সিটির নির্বাচন সামনে রেখে ঘুম হারাম হয়ে গেছে মুদ্রণ শিল্পের কারিগরদের। ঢাকা ও চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে দেশের এই শিল্প খাতের বিকাশ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু এই নির্বাচন সামনে রেখে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত তিন মাসের টানা হরতাল-অবরোধের মুখে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠে মুদ্রণ শিল্প খাত চাঙ্গা হয়ে উঠবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, মুদ্রণ ও প্রেস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি বলছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা এ পর্যন্ত যত পোস্টার, লিফলেট ও ব্যাজ ছাপিয়েছেন এবং সামনের দিনগুলোয় ছাপাবেন টাকার অঙ্কে তা দাঁড়াবে ২৫-৩০ কোটি টাকায়। এটা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৫-২০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে এই নির্বাচনকে ঘিরেই। এই নির্বাচনী পোস্টার-লিফলেটের ওপর ভর করে মুদ্রণ শিল্প চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আগামী ২৮ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নির্বাচনী পোস্টার ছাপানোর ডামাডোলে সাধারণ অর্ডার নেয়া বন্ধই করে দিয়েছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মুদ্রণ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় ৭ হাজার প্রিন্টিং প্রেস আছে। এর মধ্যে ঢাকায় আছে ৩ হাজার। ঢাকার বাইরে আছে বাকি ৪ হাজার প্রেস। ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল আর পল্টনেই আছে হাজারখানেক প্রিন্টিং প্রেস। আর চট্টগ্রামে প্রায় ২০০ প্রিন্টিং প্রেস দিনরাত নির্বাচনী পোস্টার ছাপানোর কাজ করে যাচ্ছে। রাজধানীর আরামবাগ, ফকিরাপুল ও পুরানা পল্টন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি প্রেসেই ছাপা হচ্ছে নির্বাচনী পোস্টার। কর্মীরা জানালেন, সারা রাত তারা কাজ করেন। উপায় নেই। দু-তিনজন প্রেস মালিক বললেন, নতুন কোন অর্ডার নেয়ার মতো সক্ষমতা তাদের প্রেসের নেই। সমিতির আরেকটি হিসাব বলছে, বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উপকরণ ছাপানো হয়। কিন্তু এবার বেশি হবে। তবে নির্বাচনের বছর হওয়ার পরও ২০১৩ সালে তেমন কাজ হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০১৪ সালও ভাল যায়নি। কিন্তু এবার ভাল যাবে। শুরুটাই ভাল। কারণ এবারের তিন সিটি কর্পোরেশনের বিপুলসংখ্যক প্রার্থী ছাপানোর অর্ডার দিচ্ছেন। তাই এবার বাজার বেশ চাঙ্গা। এ প্রসঙ্গে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত জানিয়েছেন, সরকারী বই ছাপানোর কাজ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আনুষঙ্গিক আরও কিছু কাজ হয় মার্চ পর্যন্ত। এর পরের সময়টা আমাদের অফ-সিজন। সে কারণে এই সময়ে নির্বাচনটা আমাদের জন্য বাড়তি পাওনা। তিনি বলেন, নির্বাচনের কারণে এই শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র প্রার্থী ১৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা প্রায় ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ পোস্টার ছাপাবেন। ডিএনসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৭৭ জন। তাঁরা গড়ে ৫০ হাজার করে পোস্টার-লিফলেট ছাপালে এর সংখ্যা দাঁড়াবে দেড় কোটিতে। আবার ঢাকা উত্তরে সংরক্ষিত নারী আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ৮৮ জন। তাঁরা সব মিলে প্রায় ৫০ লাখ পোস্টার-লিফলেট ছাপাবেন। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়র প্রার্থী ২০ জন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ পোস্টার ছাপাবেন। বাকি সব প্রার্থী মিলে ছাপাবেন ৫০ লাখ পোস্টার। ডিএসসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ৩৮৬ জন। সব মিলিয়ে এসব প্রার্থীরা পোস্টার, লিফলেট ও ব্যাজ বাবদ খরচ পড়বে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামেও প্রার্থীরা নির্বাচনী এসব উপকরণ বাবদ প্রায় আরও ১৫-২০ কোটি টাকা খরচ করবেন। তাই সব মিলিয়ে এ শিল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। বাজেটে আট দফা ॥ মুদ্রণ শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য অত্যাধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সংবলিত অবকাঠামো এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মুদ্রণ যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহারের নিশ্চয়তা আর বিদ্যমান শুল্ক বৈষম্য দূর করে একটি স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ আট দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি (বামুশিস)। সমিতির কার্যালয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তৈরির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই) সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই প্রস্তাবনা দেয়া হয়।
×