ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯

মুদ্রানীতি বনাম মূল্যস্ফীতি

ড. মিহির কুমার রায়

প্রকাশিত: ০১:৩১, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

মুদ্রানীতি বনাম মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতো। তবে ২০১৬ সালের পর বছরে একবার করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় এই সংস্থা। আসন্ন সংকট সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ঋণের অন্যতম শর্ত বছরে অন্তত দু’বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা যা পর্যায়ক্রমে প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে।

সূত্র মতে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ দেশ সুদহার বাড়িয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা অপরিবর্তিত আছে। যে কারণে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় টাকার হাতবদলও কমেছে। 
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ কমিয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ফলে সরকারের প্রথম নিট ঋণ বেড়েছে মাত্র ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া সিএমএসএমই, রপ্তানি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও কারখানা সবুজায়নে ৪৫ হাজার কোটি টাকার চারটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর বাইরে প্রতিদিনই রেপো, বিশেষ তারল্য সহায়তাসহ নানা উপায়ে ব্যাংকগুলোকে প্রচুর ধার দেওয়া হচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমায় চলতি অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ব্যাংক খাতের আমানত ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, আর গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যেখানে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

যদিও বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। রেপোর সুদহার বাড়ানো হলেও ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশেই ধরে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে এ সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতদিন মৌখিকভাবে ভোক্তাঋণের সুদহার অতিরিক্ত ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমতি ছিল।

ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার পরিবর্তিত না হলেও ব্যাংক আমানতের সুদহারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রাহকদের সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। এ মুহূর্তে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে, বেশকিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেদের নির্ধারিত সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণেও ব্যর্থ হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য হলো বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে, এসব তহবিলের সুদহার দেড় থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও তারল্য সংকটের চাপের মধ্যেও নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী জুন পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও দেশে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি এখন ৮ শতাংশের ঘরে। সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনে নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়েছে বলে মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় রেকর্ড ৮৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ইতিহাস সৃষ্টি করা এ আমদানি দায় দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যকে নাজুক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাপক কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রত্যাশা অনুযায়ী আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, এ হিসেবে আমদানি ব্যয় কমেছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থবছর শেষে আমদানি ব্যয় ৮০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সেটি হলে চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, অর্থবছর শেষে এ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামতে পারে। আবার রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হতে পারে বলে মুদ্রানীতিতে আভাস দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছর শেষে এ ঘাটতি ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে থামবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে। ৮ জানুয়ারি রিজার্ভের গ্রস পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। তবে চলতি অর্থবছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের অভিমত হলো ঘোষিত মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে খুব বেশি সহায়তা করবে না বরং আরও উসকে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে নীতি নির্ধারণী সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, এতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে।

অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে, মানুষের আয় কমবে,  টাকার ক্ষয়জনিত কারণে মানুষ চাপে পড়বে ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে স্থানীয় বাজারে আরও বাড়তে পারে। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে মুদ্রানীতির বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা নেওয়া হয়েছে তা বিপরিতমুখী।

শীর্ষ সংবাদ:

বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৭৭ রানে জয় পেল বাংলাদেশ
নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান-ম্যাপ পৌঁছে দিচ্ছে ডাক বিভাগ :প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতু দিয়ে মোটর সাইকেল চলতে চার সপ্তাহ অপেক্ষা
ঈদ উপলক্ষে ৯ এপ্রিল বাজারে আসছে নতুন নোট
বুধবারের মধ্যে ইবির তিন অভিযুক্ত ছাত্রীদের কে জবাব দেওয়ার নির্দেশ
পিরোজপুরে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ডিবি ওসিসহ আহত ৪
দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ: বিবিএস
জামিন পেলেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী আর নেই
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে মাত্র ‘২৪ ঘণ্টা’লাগবে: ট্রাম্প
মেক্সিকোর অভিবাসী কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বেড়ে ৪০