ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেষ মেসেজ পাঠিয়েই চিরতরে নিখোঁজ টাইটান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৭, ২৩ মে ২০২৫

শেষ মেসেজ পাঠিয়েই চিরতরে নিখোঁজ টাইটান

ছবি: সংগৃহীত

আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ওশানগেটের সাবমেরিন টাইটান ধ্বংসের মুহূর্তের শব্দ ধরা পড়েছে এক ভিডিও ফুটেজে। এই ভিডিওতে দেখা গেছে, সাবমেরিনটির সহায়ক জাহাজে বসে থাকা ওশানগেটের সিইও স্টকটন রাশের স্ত্রী ও কোম্পানির পরিচালক ওয়েন্ডি রাশ কম্পিউটারে বসে টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটি দরজা বন্ধ হওয়ার মতো আওয়াজ শোনা যায়। তখনই তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “ওটা কী আওয়াজ?”

টাইটান সাবমেরিনটি ২০২৩ সালের ১৮ জুন টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে প্রায় ৯০ মিনিট পর সমুদ্রের ৩,৮০০ মিটার গভীরে ইমপ্লোড করে—অর্থাৎ হঠাৎ চাপের মুখে ভেঙে পড়ে। এতে পাঁচ আরোহীই ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সাবমেরিনটিতে ছিলেন: ওশানগেটের সিইও স্টকটন রাশ, ব্রিটিশ ধনকুবের ও অভিযাত্রী হ্যামিশ হার্ডিং, ফরাসি ডুবুরি পল-অঁরি নারজিওলে, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান দাউদ।

বিবিসি নির্মিত নতুন তথ্যচিত্র “Implosion: The Titanic Sub Disaster”-এ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়েন্ডি রাশ কম্পিউটারে বসে টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটি দরজা বন্ধ হওয়ার মতো আওয়াজ শোনা যায়। তখনই তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “ওটা কী আওয়াজ?” পরে সাবমেরিন থেকে একটি বার্তা আসে: “দুটি ওজন ফেলে দেওয়া হয়েছে।”

তবে ইউএস কোস্ট গার্ড (USCG) জানায়, শব্দটি আসলে সাবমেরিন ধ্বংসের আওয়াজ ছিল। বার্তাটি ধ্বংসের ঠিক আগেই পাঠানো হলেও সেটি পৌঁছাতে দেরি হয়, ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

USCG জানায়, সাবমেরিনের কাঠামোতে ব্যবহৃত কার্বন ফাইবারের স্তর এক বছর আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০২২ সালের একটি ডাইভে সাবমেরিনে জোরালো আওয়াজ শোনা যায়, যেটি তখন গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি। তদন্তে দেখা যায়, তখন থেকেই কাঠামোর ডিলামিনেশন (স্তর আলাদা হয়ে যাওয়া) শুরু হয়। এটিই ছিল ‘শেষের শুরু’।

বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই সাবমেরিনটির কাঠামো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এটি কখনোই স্বাধীন কোনো নিরাপত্তা যাচাই বা আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন পায়নি। কার্বন ফাইবার গভীর সমুদ্রে ব্যবহার উপযোগী নয় বলে মনে করেন গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানকারীরা।

ব্যবসায়ী ওআইসিন ফ্যানিং, যিনি সাবমেরিনটির শেষ দুটি ডাইভে অংশ নেন, বলেন, “আজ যদি সব জানতাম, তাহলে কখনোই যেতাম না।” অভিযাত্রী ভিক্টর ভেস্কোভো বলেন, “আমি স্টকটন রাশকেও সতর্ক করেছিলাম, এটি একদিন ধ্বংস হবেই।”

ঘটনার পর ওশানগেট কোম্পানি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ইউএস কোস্ট গার্ডের তদন্ত এখনও চলমান। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষে তারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

মুমু

×