
ছবি- চাম্বি লেক
চারদিকে সবুজের সমারোহ। পূর্বপাশে সমতল ভূমি, বাকি তিন পাশ সবুজ পাহাড়ে ঘেরা। লাল মাটির উঁচুনীচু টিলা ও আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হয়ে দেখা মেলে চাম্বি লেকের। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির চাম্বি লেক সম্ভাবনাময় এক পর্যটন কেন্দ্র। চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামের জয়নগরে চাম্বি খালে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হয় চাম্বি রাবার ড্যাম। আর এই রাবার ড্যামকে ঘিরে গড়ে উঠছে পর্যটন। চুনতি চাম্বি রাবার ড্যাম বদলে দিয়েছে এই এলাকার কৃষি ও পর্যটন।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশার জয়নগর এলাকার চাম্বি খালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ ও রাবার ড্যামকে ঘিরে একটি পর্যটন এলাকা সৃষ্টির উদ্যোগ নেন। এলজিইডির অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টর প্রকল্পের অধীনে রাবার ড্যামের বাস্তবায়ন শুরু হয়।
ওই সময় দেশের ১০টি রাবার ড্যাম প্রকল্পের মধ্যে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে ড্যামের বাস্তবায়ন শুরু হয়। ওই এলাকার কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয় চাম্বি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। এলজিইডির অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ সেক্টর প্রকল্পের অধীনে উত্তর-দক্ষিণে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই রাবার ড্যাম নির্মিত হয়। ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের পর ড্যামের জমানো পানি দিয়ে চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা, ফারাঙ্গা ও নারিশ্চার প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি চাষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। মূলত এটি একটি সেচ প্রকল্প। এলজিইডির উক্ত প্রকল্পের নির্দেশনা মোতাবেক চাম্বি খাল ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি রাবার ড্যামের কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন স্পট দেখাশুনা করে এবং এলজিইডি মনিটরিং করেন। এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের পর্যটন স্পটে ৯ জন কর্মচারী রয়েছে। রাবার ড্যামের জমানো পানি দিয়ে প্রতিবছর চুনতির পানত্রিশা, ফারাঙ্গা ও নারিশ্চার প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়। আর ৫ শতাধিক একর লেকের জায়গার জমানো পানিতে (যা উজানে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত) মৎস্য চাষ হয়। একদিকে রাবার ড্যামের জমানো পানি উজানে সৃষ্টি করেছে আকর্ষণীয় চাম্বি লেক। স্থলভাগে গড়ে উঠেছে পর্যটন এলাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাবার ড্যামের বাঁধের ওপর মনোরম একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। রাবার ড্যামের জমানো পানি উজানে সৃষ্টি করেছে আকর্ষণীয় চাম্বি লেক। লেকের জমানো পানি উজানে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। লেককে আনা হয়েছে মৎস্য প্রকল্পের আওতায়।
পূর্বপাশে সমতল, বাকি তিন পাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ পানির চাম্বি লেক। চাম্বি লেক থেকে একটু দ‚রে রয়েছে হাতির প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে ৩টি কৃত্রিম পানির ফোয়ারা, বিভিন্ন পাখি ও প্রাণির ভাস্কর্য ১০টি, উম্মুক্তভাবে বানর ৫টি, স্পিড বোট দুইটি, প্যাডেল বোট ৪টি, লাইফ বোট ২টি ও নৌকা ৩টি। এছাড়াও রয়েছে ফ্যামিলি ট্রেন। রয়েছে দেড়শ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘আজব গুহা’। যেখানে রয়েছে আদিম থেকে আধুনিক যুগের ঐতিহ্য ঢেঁকি, গরুর গাড়ি, ইলেকট্রিক প্যাডেল ঘোড়া, মিউজিক ঘোড়া।
পর্যটকদের জন্য রেস্টুরেন্ট। লেকের মাঝখানে আছে মায়া দ্বীপ। যেখানে যাওয়ার জন্য রয়েছে ড্রামভেলা। পাহাড়ের টিলায় তিনটা গোলঘর; যেখান থেকে পুরো পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এক পলকে উপভোগ করা যায়।
এ ছাড়াও পর্যটকদের অবকাশযাপনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে রিসোর্ট। লেকে রয়েছে মনোরম পিকনিক স্পট। এই শীতে চাম্বিলেক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এ লেকে যারা একবার এসেছেন প্রকৃতি তাদের বারবার আসতে বাধ্য করবে।
চাম্বি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মাহাবুবর রহমান চৌধুরী জানান, চাম্বি রাবার ড্যামের কারণে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। রাবার ড্যামের জমানো পানি দিয়ে প্রতি বছর ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী চুনতি ইউনিয়ন শাখার আমীর মোঃ সলিম উল্লাহ জানান, চাম্বি লেক দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট। চাম্বি লেকে যাতায়াতের জন্য জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে লেক পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন খুবই দরকার। এই লেক উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এছাড়া তিনি চাম্বি লেককে সরকারিভাবে পর্যটন স্পট ঘোষণা করার দাবি জানান।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইনামুল হাসান জানান, চুনতি পানত্রিশা রাবার ড্যাম প্রকল্প সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ও এটি কৃষি, মৎস্য সেক্টরে অবদান রাখছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এটির আরও সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।
সাব্বির