
ছবি: সংগৃহীত
বায়ু শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে যমুনার তীরে 'সিরাজগঞ্জ বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র' নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি টাকা, যার মাধ্যমে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের কথা রয়েছে।
২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চরমালশাপাড়া এলাকায় যমুনা নদীর ক্রসবার বাঁধ-৩ এর দক্ষিণ পাশে দেশের তৃতীয় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ওই বছরই কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও চালু হয়নি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো প্রকল্পটি সম্পন্ন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করেনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি এখানে আনা হয়েছিল। বাস্তবতায় কোনো কার্যকর অগ্রগতি না হওয়ায় এখন প্রকল্পটি অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ৪২ কোটি টাকার এই অপরিকল্পিত প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। অন্যদিকে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যেনতেনভাবে প্রকল্পটি হস্তান্তর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শহরের মালশাপাড়া এলাকার যমুনা নদীর পশ্চিম পাড় ঘেঁষে ক্রসবার-৩ এলাকায় ২০১৮ সালে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ‘প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৮টি টাওয়ার নির্মাণ করে পাখার মাধ্যমে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এতে করে বিদ্যুতের ঘাটতি কিছুটা কমার কথা ছিল।
কিন্তু বাস্তবে ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্প আদৌ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে কি না, তা নিয়েও এখন সংশয় দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর পশ্চিম পাড় ঘেঁষে ক্রসবার-৩ (চায়না বাঁধ-৩) এলাকায় নির্মিত ৮টি টাওয়ার এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু পাখাগুলো ঘুরছে না, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, পাখাগুলো এত নিম্নমানের যে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এর আগে একটি টাওয়ারের পাখা ভেঙে নিচে পড়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন হোসেন বলেন, “দীর্ঘ সাত বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তাও কেউ জানে না। মূলত সরকারি টাকা লুটপাট ও আত্মসাতের জন্যই এ প্রকল্প এখানে আনা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন সম্ভব হবে না।”
সিরাজগঞ্জ শহরের বাসিন্দা আব্দুল আলাল হোসেন বলেন, “আমরা মাঝে মধ্যে এখানে ঘুরতে আসি, কিন্তু কখনো টাওয়ারের পাখাগুলো ঘুরতে দেখি না। বিদ্যুৎ উৎপাদন তো দূরের কথা। যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, এ জিনিসটা কোনো কাজেই আসবে না। সরকারি টাকা পুরোপুরি অপচয় ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।”
সিরাজগঞ্জ ছাত্র সমন্বয়ক ইমরান হোসেন বলেন, “যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজটি পেয়েছে, তারা খুব নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করেছে। যার কারণে আজও প্রকল্পটি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।”
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, “করোনার কারণে এবং টাওয়ারের উচ্চতা কম হওয়ায় নির্মাণে কিছুটা সময় লেগেছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এটি চালু করা হবে।”
সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ (নেসকো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অসীথ পোদ্দার বলেন, “বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমাদেরকে কেউ অবগত করেননি। এটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।”
এ বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সদস্য (পি অ্যান্ড ডি) মোঃ শামসুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিচালক মোঃ শামীম হাসান বলেন, “বর্তমানে প্রকল্পটির কাজ থমকে আছে। কবে কাজ শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।”
আসিফ