ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চাকুরী, খুশিতে কাঁদলেন ১৭ নবীন পুলিশ

জামাল বাদশা, লালমনিরহা

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২৩ মে ২০২৫

স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চাকুরী, খুশিতে কাঁদলেন ১৭ নবীন পুলিশ

ছবি : জনকণ্ঠ

মাত্র ১২০ টাকার আবেদন ফি দিয়েই ঘুষ ও তদবিরমুক্ত এক স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া পেরিয়ে লালমনিরহাট জেলা পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন ১৭ জন তরুণ-তরুণী। বৃহস্পতিবার(২২ মে) সন্ধ্যায় লালমনিরহাট পুলিশ লাইন্স মাঠে আয়োজন করা হয় ফলাফল ঘোষণা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, যেখানে পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম নবনিযুক্ত সদস্যদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

 

 

পুলিশ ও পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সুযোগ পাওয়াদের দাবি, এই নিয়োগের প্রতিটি ধাপেই ছিল কঠোর যাচাই ও নিরপেক্ষতা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা নিজেদের মেধা, শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কেউ দিনমজুরের ছেলে, কেউবা রিকশাচালকের মেয়ে, কেউ চা বিক্রেতার মেয়ে৷ অনেকের পিতা নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হওয়া অধিকাংশরাই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই নিয়োগ শুধু একটি চাকরি নয়, বরং একটি পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের সূচনা

পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সুযোগ পাওয়া জাহিদ হাসান বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নানির বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। জীবন কেটেছে অভাব-অনটনের মাঝে। আমার পরিবার কিংবা মামা সবসময় সাহস দিয়েছে। তাদের অনুপ্রেরণা আর নিজের চেষ্টা, এই দুইয়ে ভর করেই আজ পুলিশে সুযোগ পেলাম।”

 

 

চূড়ান্ত ফলাফলে নিজের নাম শুনে আবেগে কেঁদে ফেলেন পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সুযোগ পাওয়া শাহ জালাল। তাঁর বাবা আশরাফুল ইসলাম একজন বর্গাচাষি। অন্যের জমিতে চাষ করেই চলে তাদের সংসার। শাহ জালাল বলেন, "বিশ্বাসই করতে পারছি না। ঘুষ ছাড়াই আমার চাকরি হলো!" ফলাফল পেয়ে চোখে জল এনে মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ বলেন, “প্রথম দিন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি। নিয়োগের প্রতিটি ধাপ ছিল চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু প্রতিটা ধাপে নিজেকে প্রমাণ করেছি।”

চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে নিয়োগ সংক্রান্তে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা এবং আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এবার আমরা শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছি। কোনো ধরণের তদবির, ঘুষ বা সুপারিশ এখানে স্থান পায়নি। আমরা চাই—যোগ্য, সৎ ও মেধাবীরাই পুলিশের সদস্য হোক। আজকের এই ফলাফল তারই প্রমাণ। যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা যেন সৎ থেকে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেন, এটাই প্রত্যাশা।” তিনি আরও বলেন, “আমি প্রত্যেক তরুণ-তরুণীকে আহ্বান জানাবো, নিজেকে গড়ে তুলুন। পুলিশের চাকরিতে এখন দালাল, তদবির, ঘুষের কোনো স্থান নেই। একমাত্র মেধা, দক্ষতা ও শারীরিক সক্ষমতাই আপনাকে এই চাকরির যোগ্য করতে পারে।”

পুলিশ সদস্য নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন ৩০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। উত্তীর্ণ হন ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে আরও ৩ জনকে।

 

পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদের চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শাহাদত হোসেন, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য এ কে এম ওহিদুন্নবী, লালমনিরহাট জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের চোখে ছিল অশ্রু, ঠোঁটে ছিল বিজয়ের হাসি এই দিনটি ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে গর্বের ও স্মরণীয় দিন।

আঁখি

×