
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী ইউনিয়নের ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হেপাটাইটিস বি টিকা প্রদানকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে জনপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান রিনেটা কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে দিয়ে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয়বার হেপাটাইটিস বি টিকা পুশ করান, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি সরকারের বিধি লঙ্ঘন।
জানা যায়, গত বুধবার (২০ মে) ছাত্র-ছাত্রীদের হেপাটাইটিস (বি)’র টিকা প্রদান করেন বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান। আর এই টিকা প্রধান কার্যক্রম পরিচালনা করেন প্রধান শিক্ষকের নিকট আত্মীয় রেনেটা কোম্পানির কর্মরত নান্টু নামের এক ব্যক্তি। শুরুতেই ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান করা হয়। অথচ সরকারি ভাবে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের হেপাটাইটিস (বি)'র টিকা দেয়া হয়েছে ২০২২ সালে। আর হেপাটাইটিস বি এর ডবল টিকা দেওয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও সকল নিয়মকানুন উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাক নিয়ে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানের উদ্যোগে হেপাটাইটিস (বি) টিকা দেয়া হয় তাও অভিজ্ঞহীন লোক দিয়ে।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমিন জাহান অর্ষা বলেন, “৪০০ টাকার বিনিময়ে আমাকে হেপাটাইটিস বি টিকা দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রধান শিক্ষক বলেছেন এটিকে না দিলে আমাদের বড় ধরনের রোগ হবে। সেই ভয়ে আমরা টিকে দিয়েছি।”
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি সোহাগ হাওলাদার জানান, “বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপহার হিসেবে ফুটবল বিতরণ করতে আসলে টিকা প্রদানের কার্যক্রম দেখতে পাই। তখন প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। তবে সরকারের নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ডবল টিকা প্রদান করেছে কার নির্দেশে সেটা আমার ভালো জানা নেই। তবে আমি বিষয়টি দেখার পরে সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের টিকে প্রদান কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।”
স্থানীয়রা জানায়, “প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময় বিদ্যালয় থেকে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিজের পকেট ভারি করতে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ডাবল-টিকা প্রদান করেছে। এছাড়াও সম্প্রীতিক সময়ে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের সরকারি পুকুর থেকে স্থানীয় সুনীল মালীর নিকট বিদ্যালয়ের পুকুরের মাটি বিক্রি করে দিয়েছে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান।”
এছাড়াও ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা বাবদ ৫০০ টাকা করে গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে এই বিতর্কিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এসব অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ স্থানীয়দের।
বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম.মনজুর-এ-এলাহী বলেন, “বর্তমানে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হেপাটাইটিস (বি) এর টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু নেই। যদি কেউ টাকার বিনিময়ে টিকা প্রদান করে থাকেন তারা প্রতারক চক্র। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, “ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে টিকা প্রদান ও পুকুরের মাটি বিক্রির বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মিরাজ খান