
ছবিঃ সংগৃহীত
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তাদের আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভর্তি করার অনুমতি বাতিল করেছে। অর্থাৎ, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড আর কোনও বিদেশি ছাত্র বা স্কলারকে (F-1 বা J-1 ভিসায়) রাখতে পারবে না — যদি না তারা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের ছয়টি কঠিন শর্ত পূরণ করতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থার ওপর বড় এক ধাক্কা।
ঘটনার পেছনের কারণ কী?
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির দাবি—হার্ভার্ডের ক্যাম্পাস নাকি "অনিরাপদ", যেখানে ইহুদি ছাত্রদের প্রতি বিদ্বেষ, হামাসপন্থী মনোভাব এবং "বৈষম্যমূলক" নীতির চর্চা হচ্ছে। এমনকি তারা অভিযোগ করেছে, হার্ভার্ড নাকি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত একাধিক গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করেছে।
এছাড়া বলা হয়েছে—বিদেশি ছাত্রদের কেউ কেউ সহিংসতা, হুমকি কিংবা অন্যের অধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত।
সরকার যা চাচ্ছে, হার্ভার্ডকে তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে:
১. গত ৫ বছরে বিদেশি ছাত্রদের জড়িত অবৈধ কাজের নথি
২. সহিংসতার ঘটনা
৩. হুমকি সংক্রান্ত রেকর্ড
৪. কারও অধিকার খর্ব করার অভিযোগের প্রমাণ
৫. ২০২০ সালের পর থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের রেকর্ড
৬. প্রতিবাদের ভিডিও-অডিও ফুটেজ
যদি এসব তথ্য সত্য নয় বা গোপন কিছু থাকে, তবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা পর্যন্ত হতে পারে।
ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কী হবে?
হার্ভার্ডে এই মুহূর্তে প্রায় ৮০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী পড়ছে। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই বছরের টিউশন ফি, থাকার খরচ ইত্যাদিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এখন হঠাৎ করে বলা হচ্ছে—তাদের হয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফার নিতে হবে, নয়তো যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। এই সিদ্ধান্ত ভারতসহ বহু দেশের পরিবারে হতাশা, ক্ষোভ এবং অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নেতা অজয় ভুটোরিয়া একে "রাজনৈতিক প্রতিহিংসা" বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়, “এটা শুধু ছাত্রদের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং আমেরিকার বৈশ্বিক শিক্ষা নেতৃত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে।”
হার্ভার্ড কী বলছে?
হার্ভার্ড এখন পর্যন্ত খুব সংযত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের পাশে আছে এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — কী হতে চলেছে?
আমরা এখন এক দুঃসহ বাস্তবতার মুখোমুখি—বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা বহু দেশ থেকে প্রতিভাবান ছাত্রদের আকর্ষণ করে, এখন বিদেশি ছাত্রদের রাখতেই পারবে না—যদি না সরকারকে সন্তুষ্ট করা যায়।
এই মুহূর্তে সবার চোখ ৭২ ঘণ্টার দিকে। হার্ভার্ড কী করবে, সরকার কতটা কঠোর অবস্থানে থাকবে—সেই উত্তরই নির্ধারণ করবে হাজার হাজার ছাত্রের ভবিষ্যৎ।
এই ঘটনাটি শুধু হার্ভার্ডকে নয়, গোটা আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে: শিক্ষাঙ্গন কি সত্যিই রাজনীতিমুক্ত থাকতে পারবে?
মারিয়া