
ছবি: সংগৃহীত।
পুরান ঢাকার ইফতার মানেই শত বছরের ঐতিহ্য, অনন্য স্বাদ এবং হরেক রকমের খাবারের সমাহার। রমজান মাস এলেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জমে ওঠে ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। আজ জানাবো, কেন এত বিখ্যাত এখানকার ইফতার, আর এর বিশেষত্বই বা কী।
ইফতার সংস্কৃতির শিকড়
পুরান ঢাকার ইফতার সংস্কৃতি মূলত মোঘল ও নবাবী আমলের খাবার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন রাজকীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার ইফতারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখানকার ইফতার আইটেমগুলোতে মসলার অনন্য ব্যবহার, সুগন্ধি এবং বিশেষ রান্নার কৌশল দেখা যায়।
বিশেষ কিছু আইটেম
একজন দোকানি বলছিলেন, “আমার দোকানে সবচাইতে ফেমাস হলো মোরগ পোলাও। প্রতিদিন আমি দুটো মোরগ পোলাও বিক্রি করি। আমাদের এখানে রোস্ট আছে, গরুর রেজালা আছে, আচার কারি, চিকেন ললি, জালি কাবাব, শাহী রুটি ও শাহী ফিরনি আছে। বিশেষ করে শুক্রবার আমরা ৭৫০ টাকার একটি স্পেশাল প্যাকেজ দিই, যা ছয়জনের জন্য যথেষ্ট। মাছ পোলাও চাল দিয়ে ভাজা হয় এটি, তবে সারা বছর পাওয়া যায় না, শুধুমাত্র রমজান মাসে পাওয়া যায়। তাই এটি একটু বেশি জনপ্রিয়।”
পুরান ঢাকার সবচেয়ে আলোচিত ইফতার আইটেমগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। তবে এর আসল নাম ‘সেক্সুর ভর্তা’, যা ব্রিটিশ আমলে বিক্রি হতো কাঁঠাল পাতার ডালায়। এটি ১২টি মসলা ও ১২ রকম উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এক দোকানি বলেন, “এটা বাংলাদেশে কেউ বানাতে পারে না, শুধু আমাদের তিন পুরুষ ধরে এই রেসিপি জানে। আমি নিজে ৩০ বছর ধরে বেচছি, আমার বাবা ৫০ বছর ধরে বেচেছেন।”
স্বাদের পরিবর্তন ও ভেজালের অভিযোগ
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে খাবারের ধরন এবং পরিবেশনে কিছুটা পরিবর্তন এলেও পুরাতন দোকানিরা ধরে রেখেছেন সেই ঐতিহ্য। তবে কিছু মৌসুমী অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ইফতারের মান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
এক ভোক্তা বলেন, “আগে চকবাজারের স্পেশাল আইটেম যেমন ছিল, এখন তা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। আগে যেই বাজার পাইতাম, এখন পাই না। খাবারের টেস্ট অনেক বাজে হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আগে যেরকম স্বাদ ছিল, এখন তা নেই। কিছু ব্যবসায়ী সারা বছর অন্য কাজ করে, রমজানে এসে ইফতার বিক্রি করে, যার কারণে খাবারের গুণগত মান ধরে রাখতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, “চিকেন পরোটার ভেতরে শুধু পেয়াজ, চিকেনের কোনো নমুনা নেই। হাইপ তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু খাবারের স্বাদ আর আগের মতো নেই।”
ভোজনরসিকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য
তুলনামূলক কম দাম এবং অতুলনীয় স্বাদের কারণে পুরান ঢাকার ইফতার শুধু স্থানীয় নয়, বরং দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয়। ইফতারের স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনরসিকরা।
রমজানের এই বিশেষ সময়ে ঐতিহ্যবাহী ইফতার উপভোগ করতে চাইলে পুরান ঢাকা হতে পারে আপনার জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য।
নুসরাত