
.
একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে ঢাকায়। উৎসবে বিভিন্ন দেশের সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে। কিন্তু দর্শক খরা কাটেনি। আয়োজকদের সীমাবদ্ধতা ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল, আছে। কিন্তু দর্শকেরও তো আগ্রহ থাকা চাই। কেন যেন সেই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফলে গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া উৎসব এখনো বিবর্ণ।
রাজধানীতে গত শনিবার শুরু হয়েছিল ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ৭৫ দেশের ২২০ চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসব আয়োজন করে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। সংসদের স্লোগান : ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ।’ এই স্লোগানের প্রথম অংশটি, মানে, ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র’ ঢের রাখা হয়েছে উৎসবে। আয়োজকদের সরবরাহ করা তালিকা পর্যবেক্ষণ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের নির্মাতাদের নতুন চলচ্চিত্র, স্বতন্ত্র শিল্পভাষা উৎসবের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছে। কয়েকটি বিভাগের আওতায় দেখানো হচ্ছে এসব সিনেমা। এই যেমন, এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরামা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্ম, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেনস ফিল্ম। এসব বিভাগ থেকে অনায়াসেই নিজের পছন্দের সিনেমা খুঁজে দেখে নেওয়া সম্ভব। ভেন্যুগুলোও দূরে নয়। মূল ভেন্যু জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন এবং কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন। দুটি মিলনায়তনে প্রতিদিন একাধিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আরেকটি ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা। ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনসহ আরও কয়েকটি মিলনায়তনে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। উল্লেখ না করলেই নয় যে, দেশী-বিদেশী এসব সিনেমা বিনামূল্যে দেখার সুযোগ রাখা হয়েছে। এত কিছুর পরও দর্শক নেই! উৎসব শুরুর পর থেকে বুধবার পর্যন্ত প্রায় সবকটি ভেন্যু ঘুরে দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র। কোনো কোনো মিলনায়তনে সাকুল্যে দর্শক ছিলেন দুই বা তিনজন। সকাল এবং দুপুরের প্রদর্শনীগুলো, বলা চলে, আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় দর্শক কিছুটা বাড়ে বটে। প্রত্যাশার তুলনায় কম।
কেন এই অবস্থা? জানতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বুধবার বিকেলে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল শাওন নামের এক দর্শকের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী তার মেয়ে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিনেমা দেখে বের হয়েছিলেন। কথা প্রসঙ্গে বললেন, এসব উৎসবের প্রাণ তো তরুণরাই। কিন্তু এখন সবাই নেটফ্লিক্সে মুভি দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অটিটি প্ল্যাটফর্মে সিরিজ ইত্যাদি দেখে সময় কাটিয়ে দেয়। এটা দর্শক কমার অন্যতম কারণ বলে মত দেন তিনি।
শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমা দেখতে আসা জুয়েল হাসান আবার বলছিলেন, উৎসবটির প্রচার কম হচ্ছে। উৎসব যে হচ্ছে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। কবে কোন সিনেমা দেখানো হবে তা আগে জানার সুযোগ কম। এসব কারণেও দর্শক কমে যায়। অবশ্য দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থাকেও দর্শক খড়ার কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে উৎসবে প্রদর্শনী ছাড়াও সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে। ১২ থেকে ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ‘একাদশ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স।’ কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন পারভীন হাসান। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক ঝ্যাং ইয়ুদি।
আগামী শুক্র ও শনিবার থাকছে মাস্টারক্লাস। জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্লেক্স মিলনায়তনে মাস্টারক্লাসের আয়োজন করা হবে। এতে কথা বলবেন ঝ্যাং ইয়ুদি, সার্বিয়ার অধ্যাপক ড্রেগেন মিলিনকোভিচ, নরওয়ের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক অগি হোফার্ট এবং বাংলাদেশের চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান। আগ্রহীরা নিবন্ধনের মাধ্যমে মাস্টারক্লাসে অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
প্রদর্শনী প্রসঙ্গে ফেরা যাক, বুধবার জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে দেখানো হয় ৫টি সিনেমা। এগুলোর মধ্যে ছিল সিরিয়ার হোসেন হামোর ২৭ মিনিটের ছবি ‘ওয়েনিং’। এর পর পরই দেখানো হয় ভারতীয় নির্মাতা অভিলাষ শর্মা পরিচালিত ১০০ মিনিটের ছবি ‘ইন দ্য নেম অব ফায়ার’। দুটি ছবিই ছিল ‘স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশন’ থেকে নেয়া। দুপুরে দেখানো হয় উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত চীনের ছবি ‘হানড্রেড ইয়ার্ডস’। ১০৯ মিনিটের এই ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন হাওফেং ঝু এবং জুফেং ঝু। পরে ‘ওয়েড এঙ্গেল সেকশন’ থেকে প্রদর্শিত হয় চীনের পরিচালক নানার ছবি ‘দ্য লাস্ট ফ্রেঞ্জি।’ মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের আরেক ছবি ‘সামার টাইম’। মাহমুদ কালারি পরিচালিত ইরানি ছবিটি দেখানো হয় বিকেল ৫টায়। এদিনের শেষ সিনেমাটি ছিল ‘নীল পদ্ম’। তৌফিক এলাহি পরিচালিত বাংলাদেশী এই সিনেমাটি দেখানো হয় ‘বাংলাদেশ প্যানারোমা’ বিভাগে থেকে। এ ছাড়াও এদিন সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অন্তত ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা দেখানো হয়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে দেখানো হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য ৩টি সিনেমা। শিল্পকলার দুটি স্ক্রিন, নর্থ ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির দুটি মিলনায়তনে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় বলেও জানা যায়।
আজ বৃহস্পতিবারও বেশ কিছু ভালো সিনেমা প্রদর্শনের কথা রয়েছে। এই প্রদর্শনী চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। সুযোগ করে দেখে আসুন। এত এত সিনেমা দেখার সুযোগ খুব কম পাওয়া যায় কিন্তু!