ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

‘সুরের মাঝে বেঁচে থাকবেন  সুজেয় শ্যাম’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘সুরের মাঝে বেঁচে থাকবেন  সুজেয় শ্যাম’

.

সুরের আশ্রয়ে তিনি অংশ নিয়েছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গণে। অস্ত্রের পরিবর্তে সংগীতকে হাতিয়ার করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে শিল্পকে সঙ্গী করে যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ একুশে পদকজয়ী এই শিল্পী হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম। শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যায় স্মরণ করা করা হলো বরেণ্য এই সুরকার ও সংগীত পরিচালককে। গান ও কথনের সম্মিলনে সজ্জিত ছিল স্মরণের এ আয়োজন।  সুজেয় শ্যামকে নিবেদিত কথনপর্বে বক্তারা বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবেন তিনি। আপন সৃষ্টির কারণেই উচ্চারিত হবে তার নামটি।  সুরের মাঝে বেঁচে থাকবেন সুজেয় শ্যাম। রাজধানীর পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে স্মরণসভাটির আয়োজন করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সুজেয় শ্যামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। স্মরণসভায় সুজেয় শ্যামের সংগীত জীবনের কীর্তির কথা উচ্চারণের পাশাপাশি তাকে নিয়ে স্মৃতি চারণ করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শব্দসৈনিক শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন খান, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সহ-সভাপতি ফকির সিরাজ এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব  করেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান।
মনোয়ার হোসেন বলেন, এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবেন সুজেয় শ্যাম। তিনি না থাকলেও তার কাজ  রয়ে যাবে। দেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লে উচ্চারিত হবে তার নামটি। সুরের মাঝে বেঁচে থাকবেন সুজেয় শ্যাম। আপন সৃষ্টির মাঝেই চিরকাল প্রাসঙ্গিক থাকবেন তিনি। 
মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, একজন আদি ও অকৃত্রিম মানুষ ছিলেন সুজেয় শ্যাম। তার জীবনযাপন থেকে চলাফেরায় একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পীর অবয়ব মিশেছিল। নির্লোভ এই মানুষটি ছিলেন এদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। এ সময় আক্ষেপ করে সুইট বলেন, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমিতে এই স্মরণসভার আয়োজন  করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভেন্যু  বরাদ্দ না দেওয়ায় সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজনটি করেছি। 
কথন শেষে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। সম্মেলক কণ্ঠাশ্রিত সুরের শ্রোতধারায় গাওয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতারে পরিবেশিত সুজেয় শ্যামের সুরারোপিত একগুচ্ছ গান।  সত্যেন  সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেবশন করে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ ও ‘আয়  রে চাষী মজুর কুলি’ শীর্ষক সংগীত। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘এই পৃথিবীর থেকে ওই আকাশ বড়’ ও ‘কালো রাজপথ যেন মনে হয়’ শিরোনামের গান। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে সুজেয় শ্যামের সুরারোপিত সেই কালজয়ী গান ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’। এ ছাড়া তারা গেয়ে শোনায় ‘নোঙ্গর তোল তোল’ শীর্ষক সংগীত। ‘ও আকাশ আর কেঁদে না’ শীর্ষক শোক সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা। এ ছাড়া দলটি গেয়ে শোনায় ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’। একক কণ্ঠের পরিবেশনায় আবিদা রহমান সেতু শুনিয়েছেন ‘জোড়া শালিক দেখলে নাকি যাত্রা শুভ হয়’। ফকির সিরাজ গেয়েছেন ‘ভয় কি মরণে’ শীর্ষক সংগীত। স্মরণের এ আয়োজনে সুজেয় শ্যামের জীবনী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য আলেকজেন্ডার আজাদ। 

×