ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বিরল দৃশ্য বটে। গ্রামের কোনো হাটে নয়, রাজধানী ঢাকার রাস্তায় দেখানো হচ্ছে সাপখেলা। ঐতিহ্যবাহী সাপখেলার ছবিটি গত রবিবার বাবুবাজার এলাকা থেকে তোলা

ও বাবু, সেলাম বারে বার/আমার নাম গয়া বাইদ্যা, বাবু/বাড়ি পদ্মা পাড়...। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বর্ণনায় ওঠে আসা এই গয়া বাইদ্যার কথা অনেকেরই হয়তো মনে আছে। আরও বহু গানে কবিতায় উপন্যাসে বাইদ্যাদের, মানে, বেদেদের নানা কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। আর ইতিহাস সৃষ্টি করা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমার কথা বলাই বাহুল্য। সিনেমাটি গোটা দেশের সব হলে দিনের পর দিন চলেছে। বাস্তবেও বাংলাদেশের খুব উল্লেখযোগ্য একটি সম্প্রদায়ের নাম বেদে। একসময় সারাদেশেই বিচরণ ছিল এই সম্প্রদায়ের মানুষের। সাপ নিয়ে তাদের কারবার। ঝুড়িতে সাপ ভরে নিয়ে গ্রামে গঞ্জে ঘুরে খেলা দেখাতেন। কৌতূহল থেকে ছেলে বুড়ো সকলেই পিছু নিত তাদের। বেদেদেরই আরেকটি অংশ সাপুড়ে নামে পরিচিত।

সাপ ধরায় খুবই দক্ষ তারা। গ্রামীণ হাট বাজারে লোকজন জড়ো করে সাপখেলাও দেখান। তাবিজ ওষুধ ইত্যাদি বিক্রি করলেও সাধারণের মূল আগ্রহ সাপখেলায়। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তবে কালের বিবর্তনে অনেক কিছুই দেশ থেকে হারিয়ে গেছে। সাপখেলাও এখন তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামে নেই। শহরে তো আরও কম। কিন্তু মজার বিষয় হলো, রাজধানী শহর ঢাকায় এখন দেখা যাচ্ছে বিরল এই খেলা! কয়েক দিন আগে বাবু বাজার এলাকায় গিয়ে বড় জটলা দেখে উঁকি দিতেই চোখ ছানাভরা! ব্যস্ত রাস্তার এক পাশে দিব্যি খেলা চলছিল। মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ঝুড়ি থেকে সাপ বের করে রীতিমতো ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে লেজটা ধরে টান দিচ্ছিলেন একটু পরপরই। ফলে সাপ বেশি দূর যেতে পারছিল না। উত্ত্যক্ত বোধ করায় ফুঁসে ওঠছিল সে। তাতেই বেশ মজা পাচ্ছিলেন গোল হয়ে বসা দর্শক। তবে মূল খেলাটা ছিল বেজির সঙ্গে। সাপের সামনে একটি বেজিও ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেই জমে ওঠে লড়াই। লড়াই দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কিন্তু ঢাকায় এই খেলা নিয়ে কারা এলো? কোথা থেকে এলো? উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, বেদেরা গাওয়াল করছে এখন। ‘গাওয়াল’ মানে জীবিকার প্রয়োজনে ভ্রমণ। সাধারণ সময়ে নৌকোয় অথবা নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বাস করেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। গাওয়ালের সময় নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য অঞ্চলে গিয়ে নোঙর করেন। খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে কিছুদিনের জন্য বসবাস করতে দেখা যায় তাদের। সেখান থেকে আশপাশের হাট বাজারে বা জনবহুল রাস্তার ধারে সাপের খেলা দেখায়। বছরের বিভিন্ন সময়ে গাওয়াল হয়। বিশেষ করে কৃষকের ফসল ঘরে তোলার সময়টিকে তারা বেছে নেন। সেই হিসেবে এখন অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কাটার মুহূর্তে দল বেঁধে বের হয়েছেন। তাদেরই একজন খেলা দেখাচ্ছিলেন বাবু বাজারে। না, মানুষের ভিড় ঠেলে তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে শৈশব স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য মনে মনে একবার ‘ধন্যবাদ’ বলতেই হলো তাকে। 
অনন্য সংগীতসন্ধ্যা বেঙ্গলে ॥ অনেকদিন পর চমৎকার একটি সংগীতসন্ধ্যা উপহার দিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। ধানমন্ডিতে তাদের  নিজস্ব ভবনে বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন ধ্রুপদী পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ছিলেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিল্পীরা। এই শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগ করার সুযোগ শ্রোতারা হাত ছাড়া করতে চান না। ফলে আগেভাগেই ভর্তি হয়ে গিয়েছিল মিলনায়তন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আয়োজনের সূচনা করা হয়। এরপর ধ্রুপদ, সরোদ, খেয়াল এবং তবলার পরিবেশনা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেন শ্রোতা। যারা কোনো কারণে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের জন্য বলি, আজ শুক্রবার ছায়ানটে চলে যেতে পারেন। বাঙালির গর্বের প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে আজ অনুষ্ঠিত হবে শ্রোতার আসর। এই আসরটিও ভীষণই উপভোগ্য হয়ে থাকে। শুনে আসুন।  
 

×