ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

বন্ধু আছে, আর কি লাগে?

জলি রহমান

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৪ আগস্ট ২০২৪

বন্ধু আছে, আর কি লাগে?

.

‘পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমি অন্যদিক, সবাই বলে করছ ভুল আর তোরা বলিস ঠিক, তোরা ছিলি তোরা আছিস জানি তোরাই থাকবি, বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কী লাগে?’- গানটি গেয়েছেন সংগীতশিল্পী তপু। এ গানটি আজ কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। 
আমরা যারা নব্বই দশকে বেড়ে উঠেছি, আমাদের ছোটবেলা ছিল দুরন্তপনায় ভরপুর। ভোরের আলোর দেখা মিললেই আর বিছানায় থাকা হতো না। ছোটাছুটি আর খেলাধুলায় কেটে যেত দিন। কিভাবে সময় কাটত তা কখনো টেরই পেতাম না। স্কুল ছিল আরেক মজার পাঠশালা। আমাদের শিক্ষকরা এ কালের শিক্ষকদের মতো এত কড়া ছিলেন না। শিক্ষকদের যেমন সম্মান করতাম তারাও খুব স্নেহ করতেন। তাই পড়ালেখার জীবনটাও ছিল বেশ উপভোগের।

আর শৈশব থেকে খেলাধুলা ও পড়ালেখায় সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি প্রিয় বান্ধবী তানিয়াকে। সারাদিনের খুনসুটি ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। কথা না বলে কাটত না একটি দিনও। খুব ছোটবেলায় একবার চুল টানাটানিও করেছি। তবে কখনো মারামারি হয়নি। ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে গিয়ে একবার লিচুগাছে উঠেছিলাম। তানিয়া পা ধরে টান দিয়ে ফেলে দেয়।

মাথা ফেটে অনেক রক্ত ঝরেছিল, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। এর পরও ওর প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ জন্মায়নি। কারণ খুব মায়া কাজ করত। এটা যে বন্ধুত্বের মায়া বুঝতাম না। একদিন আমাদের বাড়ির পেছনের ছোট খালে গোসলে নেমে সাঁতরাতে না পেরে আমাকে পানির মধ্যে ঠেসে ধরে। অনেক কষ্টে ওকে নিয়েই উঠি। পরে শুধু বলেছিলাম পানিতে নামলে আমার কাছাকাছি থাকবি না। পাশাপাশি ঘরে দুজন বেড়ে উঠেছি। দুজনের কষ্ট কখনো আলাদা মনে হয়নি। ভালোলাগাগুলো মনে হতো একই রকম। পড়ালেখাও করতাম দুজন প্রতিযোগিতার সঙ্গে।

কে কত তাড়াতাড়ি একটা পড়া শেষ করতে পারি। এভাবেই কেটে গেল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি। হাজারো স্মৃতিতে ভরপুর আমাদের শৈশব-কৈশোর। এরপর ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় দুজনার পথ আলাদা হয়ে গেল। ভাগ্যিস তখন সেল ফোনের যুগ চলে এসেছিল। তাই দিনশেষে আমরা সারাদিনের জমানো কথা শেয়ার করতে পেরেছি। একটা সময় কর্মব্যস্ততা আমাদের অনেক দূরে সরিয়ে দিল ঠিকই। কিন্তু এখনও দুজনার আত্মা একই। ভিডিও কলে মুখটা দেখলেই মনে হয় এ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি। হ্যাঁ, এমন বন্ধু থাকা খুব দরকার। যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায়। নিঃসঙ্কচে সবকিছু শেয়ার করা যায়। দুঃখগুলো কথার ভাঁজে উড়িয়ে দেওয়া যায়। 
বন্ধুকে মনে হয় নিজের সবটুকু ভালোবাসা বিলিয়ে দেই। ভালো লাগে প্রিয় জিনিস উপহার দিতে। এ কারণেই শৈশব থেকে আমরা ছোট ছোট জিনিস উপহার দিয়ে নিজের ভালো লাগা জানান দেই। বন্ধু দিবস এলেই ছেলেমেয়েরা খুঁজে ফেরে নতুন কিছু বন্ধুকে উপহার দেওয়ার জন্য। আর বন্ধুত্বের বন্ধনকে আলাদা মাত্রা দিতে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও এক্সেসরিজ দোকানেও থাকে নানা আয়োজন। 
হালে বন্ধুদের মাঝে উপহার বিনিময় করা একটি ট্রেন্ডও বলা যায়। বন্ধুর সঙ্গে কাটানো স্মৃতি সুন্দর করতে শুধু বন্ধু দিবসে কেন, আপনি চাইলে যেকোনো সময় দিতে পারেন তার কোনো প্রিয় জিনিস। নিশ্চয়ই জানবেন এই মুহূর্তে আপনার বন্ধুর কী প্রয়োজন বা কোন জিনিস তার পছন্দ, তেমন কিছু দিন। আপনার বাজেট অনুযায়ী ঘড়ি, মোবাইল, বই, জুয়েলারি, স্কার্ফ, পোশাক ইত্যাদি উপহার দিতে পারেন। তথ্যানুযায়ী, জাতিসংঘ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ বন্ধু দিবস পালন করলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়।           

×