ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

রাজশাহী নগরীর উন্নয়ন নিয়ে ‘খোলা চিঠি’

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১২ জুলাই ২০২৪

রাজশাহী নগরীর উন্নয়ন নিয়ে ‘খোলা চিঠি’

.

রাজশাহী নগরীর বদলে যাওয়া রূপ নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক . মুসতাক আহমেদ। একই সঙ্গে জনগণের নানা বিপত্তির কথাও বলেছেন তিনি। অধ্যাপক . মুসতাক তার নিজ ফেসবুকে রাজশাহীর উন্নয়ন নিয়ে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খোলা চিঠি লিখেছেন।

সেখানে অধ্যাপক . মুসতাক উল্লেখ করেন, ‘আপনার নগরে ২৮ বছরের বেশি সময় থেকে বসবাস করছি। সেই বিবেচনায় চোখের সামনেই এই নগরকে বদলে দেওয়া, সৌন্দর্যের মডেল নগর তৈরি হলো আপনার হাতের ছোঁয়া কনস্ট্রাক্টিভ এবং পরিকল্পনা দিয়েই। এই রাজশাহী মহানগরের মাটি, মানুষ, সবুজ ঘাস, পদ্মা নদীÑ সব কিছুর প্রতি আপনার (মেয়র) ভালোবাসা অতুলনীয় এবং হাজার কোটি গুণ বেশি।রাজশাহীর মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের হাত ধরে যে এসব উন্নয়ন হয়েছে, তা খোলা চিঠির মাধ্যমে বর্ণনা করেন তিনি।

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে রাজশাহী মহানগরীর কারিগর জাদুকর উল্লেখ করে তিনি খোলা চিঠিতে লেখেন, এই আটাশ বছরে একটা পিছিয়ে থাকা নগর চোখের সামনে সৌন্দর্যের এক লীলাভূমিতে পরিণত করার কারিগর আপনি, জাদুকরও আপনি দেখছি। এত দ্রুত কম সময়ের মধ্যে অন্য কোনো নগরের উন্নয়ন হয়েছে কি না, যেটা রাজশাহীতে হয়েছে, হচ্ছে।

তবে অধ্যাপক . মুসতাক আহমেদের খোলা চিঠির মূল বিষয়বস্তু হলোÑ রাজশাহী মহানগরে বাসস্ট্যান্ড বাস টার্মিনাল। তিনি বিষয়ে  লেখেন, যখন রাজশাহী আসি, শিরোইল বাস টার্মিনাল চিনতাম এবং শুনতাম নওগাঁ রোডের পাশে নগর থেকে বেশ দূরে নতুন বাস টার্মিনাল হবে। এই শোনা আটাশ বছর আগে থেকেই। তখন ভাবতাম আর মনে মনে কষ্ট পেতাম এই ভেবে যে, শহর থেকে অত দূরে আবার বাস টার্মিনাল হয় নাকি! এখন কষ্টটা ঠিক উল্টা।মহোদয় আপনার কাছে নিশ্চয় উপাত্ত আছে আপনার নগরের বুকের ভেতর থেকে কতটা জায়গা থেকে বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যায় এগুলো টার্মিনাল নয়, কিন্তু ভয়ংকর অসুন্দর, শহরে জ্যাম, গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করছে, উন্নয়নের চিত্রে স্পট যা দাগ লাগাচ্ছে।

বাসস্ট্যান্ড বাস টার্মিনাল নিয়ে তিনি আর বলেন, যদি বলি রুয়েটের সামনে বিআরটিসি, তালাইমারী রাস্তার ওপর খানিকটা দম নেওয়া স্টপেজ, পথচারীদের তুলতে টানাটানি ভদ্রা মোড়ে। এটা বাসস্ট্যান্ড না টার্মিনাল বোঝা মুশকিলই শুধু নয়, জটিল সমীকরণ। ভদ্রা থেকে শিরোইল বাস টার্মিনাল টু বিন্দুর মোড়Ñ পুরো রাস্তার দুই পাশে সারি সারি থামিয়ে রাখা বাসগুলো, ট্রে থেকে নামা কিংবা ঢাকা বাসস্ট্যান্ডÑ এখানে যেন যাত্রীর ভিড়ে আর হেলপারদের চিল্লাচিল্লিতে মোচ্ছব লেগে থাকে। আপনি হয়তো জানেন না, শুভ পেট্রোল পাম্প থেকে বিন্দুর মোড় যেতে কি পরিমাণ জ্যাম লেগে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ যেন অসহায় এখানে। অন্য রাস্তার মতো যাওয়া-আসার পথ কোনটা, তা বোঝা মুশকিল। এখানে অনিয়মকারীদের সঙ্গে কথা বললেই বাড়িতে ফিরে পেন কিলার নাপা খেতে হবে। এরা বেপরোয়া।

তিনি বলেন, বিন্দুর মোড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার লোকাল গেটলকখ্যাত বাসগুলোর দম নেওয়ার স্ট্যান্ড। একদিকে শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর থেকে রেললাইন পার হয়ে রেলভবনের সামনে নওগাঁ, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, মঙ্গলবাড়ীগামী বাস, সিএনজি, স্কুটারের স্ট্যান্ড, অন্যদিকে আলুপট্টিতে আরেকটা বাসস্ট্যান্ডÑ বিআরটিসি। শহরের ভেতরে কোন বাহনগুলো চলবে আর কোনগুলো চলবে না, তার কোনো নীতিমালা আছে কি না- আমার জানা নাই। সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা প্রতিদিন হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর চালকদের ন্যূনতম ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে হয়নি এখনো। কিনছে আর রাস্তায় নেমে যাচ্ছে।

স্বপ্নের শহর দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক মুসতাক বলেন, ‘আপনার স্বপ্নের শহর দুঃস্বপ্নের শহরে পরিণত হচ্ছে প্রতিদিন জ্যামিতিক গতিতে। আমি এটাও জানি, বাস মালিক সমিতি কিংবা বাসশ্রমিক সমিতির ক্ষমতা দাপট আকাশছোঁয়া। আটাশ বছরে দেখলাম না টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে শহরে না ঢুকে বিভিন্ন রুটে চলে যাওয়া। সব বাস কোনো না কোনোভাবে নগরের ভেতর দিয়েই বিভিন্ন রুটে যাচ্ছে। এতে নগরের ভেতরে আপনার গড়া রাস্তাগুলো (এভিনিউ) দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। আমরা কি সেটাই চাই!!

নগরবাসী মেয়রকে নিয়ে গর্ব করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় মেয়র মহোদয়, আপনি বেশ কয়েকটি বাইপাস রোড করেছেন। নগরবাসী আপনাকে নিয়ে গর্ব করে। বিদেশী পর্যটকদের মন কেড়েছেন আপনি। আপনি সিটি করপোরেশন আশপাশে যত রাস্তার করেছেন, সেগুলোর আধুনিকায়ন করেছেন, সজ্জিত করেছেন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি, যা  অন্য কোনো মেয়রের সামর্থ্যে ছিল না। ভবিষ্যতেও হয়তো অন্য কারও সামর্থ্য হবে না। এর কারণ হিসেবে বলতে পারি, রাজশাহীর মাটির প্রতি আপনার ভালোবাসা কমিটমেন্ট।

গাড়ি চলাচলে বিভিন্ন অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, সিটি করপোরেশন বা সিটি করপোরেশনের বাইরে থেকে অনেকে ব্যাটারিচালিত ইজি-অটোরিক্সা কিনছে, তারা কেউ লাইসেন্স পায়, কেউ পায় না। তার চেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলোÑ এই অটোরিক্সা চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে হয় না। শহরে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণহানি হচ্ছে, যেগুলো কষ্টদায়ক। ইদানীং সিএনজিচালিত যানও শহরে ঢুকছে দাপটের সঙ্গে।

পরিচ্ছন্ন নগরী দ্রুত অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে যা দাঁড়ায় তা হলো- আপনার পরিশ্রম, আপনার ভালোবাসার নগর, সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্য, পরিচ্ছন্ন নগরী দ্রুত অপরিচ্ছন্ন আয়ুহীন হয়ে পড়ছে।

×