ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১১ জুলাই ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার পরও ঢাকার রাস্তা ছাড়ছে না কোটাবিরোধীরা। চরম দুর্ভোগের শিকার হন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অসুস্থ রোগীরাও

কোটার বিরোধিতা করে যে হল্লা শুরু হয়েছিল, এখনো তা অব্যাহত। সরকারি চাকরির বেলায় কোটা সুবিধা রাখা যাবে না। রাখলেও সেটি প্রায় শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। এই হলো দাবি। দাবির পক্ষে ক্ষণে ক্ষণে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার ব্যস্ত সড়ক। গোটা কয়েক বালক যখন তখন একত্রিত হয়ে ব্যস্ত সড়কের মোড়ে বসে পড়ছে। তারা সেখানে ক্রিকেট ইত্যাদি খেলছে। আর চারপাশে আটকা পড়ছে অগণিত মানুষ। শত শত গাড়ি নড়তে পারছে না।

শহরের অলিগলি সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন নগরবাসী। কিন্তু এই দুর্ভোগের তো শেষ হতে হবে। এভাবে কতদিন? সবাই সমাধানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন যখন তখন কার্যকর একটি সমাধান এসেছিল উচ্চ আদালত থেকে। আদালতের রায় কোটাবিরোধীদের সম্পূর্ণ পক্ষে গেছে। আর চূড়ান্ত সমাধানের জন্য এক মাস ধৈর্য ধরার কথা বলা হয়েছে আদালত ও সরকারের পক্ষ থেকে। এর পরও কোটাবিরোধীরা বিশৃঙ্খলার পথ বেছে নিয়েছেন।

ফলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঢাকা। জনদুর্ভোগে অতিষ্ঠ মানুষজনও ফুঁসে উঠছেন। তারা বলছেন, কোটা বিরোধিতায় নেমেছেন যারা তাদের পরিচয় নিয়ে আমরা সন্দিহান। কারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সব সময়ই একটা আলাদা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। এসব আন্দোলন মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ক্যাম্পাসনির্ভর হয়। কিন্তু কোটাবিরোধীরা বাইরে এসে রাজধানীর সড়কে সড়কে বসে পড়ছে। কয়েক ছেলেছোকরা মিলে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। অগণিত মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে তারা। এভাবে গোটা রাজধানী বা দেশকে অচল করে দেওয়ার উচ্চাভিলাষ তো কেবল রাজনৈতিক দলগুলো দেখাতে পারে।

শুধু শিক্ষার্থী হলে নিজেদের সীমাবদ্ধতা বোঝার কথা। যেহেতু তারা বুঝছে না, সেহেতু এটিকে আর স্টুডেন্ট মুভমেন্ট বলে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। 
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মঞ্চ নয় তো ॥ কোটা বিরোধিতা? নাকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মঞ্চ? এই প্রশ্নও উঠছে জোরেশোরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অহর্নিশ কাজ করে চলা ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে আছেন বটে। তবে স্টিয়ারিং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির হাতে। প্ল্যাটফর্মটিকে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশ্যে সুসংগঠিতভাবে অপমান অপদস্থ করার সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জন্মের পর মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার নিয়ে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে এত কুৎসিত কথা কেউ কোনো দিন বলেনি। আজ বলছে। এই অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য। গত কিছু দিনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তারা বলছেন, যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দাবি আদায়ের লড়াইয়ে আমরা জাতীয়সংগীত গাই। স্বাধীন বাংলা বেতারের জাগরণী গানগুলো করি। এভাবে গান কবিতা হয়ে ওঠে আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু এই কোটাবিরোধীদের আমরা কোনো গান গাইতে দেখছি না। এরা গান জানে না।

এরা জাতীয় সংগীতের ধার বোঝে না। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান মুখে তোলে না এরা। বঙ্গবন্ধুর নাম নেয় না। এর আগেরবার কোটার বিরোধিতা করে যারা নেতা হয়েছেন তাদের রাজনৈতিক আদর্শও এখন জাতির সামনে পরিষ্কার। ফলে আজকের মঞ্চটিকে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মঞ্চ বলে মানতে রাজি নন। প্রশ্ন তুলছেন। এই প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যাবে সহসাই?

×