ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ডিসেম্বর ঘিরে চলছে উৎসব প্রস্তুতি

যুদ্ধ জয়ের স্মৃতি জেগে ওঠার মন্ত্র

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ০০:১৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

যুদ্ধ জয়ের স্মৃতি জেগে ওঠার মন্ত্র

বিজয় দিবস সামনে রেখে জাতীয় পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত দর্জি। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা

কী যে দুঃসময় পার করে এসেছে বাঙালি! আজ এতকাল পর ভয়ঙ্কর সেই অতীতের দিকে তাকালে গা শিউরে ওঠে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতি প্রান্তে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানিরা। বেদনাবিধুর সেই সব স্মৃতি কোনোদিনও ভুলবার নয়। তবে ডিসেম্বর মাস এলে যুদ্ধ জয়ের স্মৃতিই বড় হয়ে ধরা দেয়। নয় মাস বীরদর্পে লড়াই করে এ মাসের ১৬ তারিখ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াকু মানসিকতা, সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে আজও। প্রতি বছরের মতো এবারও যুদ্ধ জয়ের স্মৃতি, জেগে ওঠার মন্ত্র হয়ে এসেছে ডিসেম্বর। আর মাত্র কদিন পর ১৬ ডিসেম্বর। নানা উৎসব অনষ্ঠান আলোচনাসভা প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে যুদ্ধ জয়ের ইতিহাসটি তুলে ধরা হবে। এখন চলছে জোর প্রস্তুতি।  
ইতোমধ্যে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রলালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের সূচনা করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। রাষ্ট্রপতি মু. সাহাবুদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত  থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিশাল এ আয়োজন সফল করতে এখন কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর অধিদপ্তর। 
বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও  বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক ছায়ানট ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলা মাঠে বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক লায়সা আহসেদ লিসা জানান, বিগত বছরগুলোর মতো এবারও দেশবোধকে প্রাধান্য দিয়েই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখন চলছে রিহার্সাল। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত রিহার্সাল করছেন। সব ঠিক থাকলে এবারের আয়োজনটিও সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।      
প্রস্তুতি নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও। জাদুঘর আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে বিজয় উৎসবের সূচনা করবে। চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উৎসব প্রসঙ্গে জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উৎসবে সংগীত নৃত্য কবিতা আবৃত্তি চিত্রাঙ্কন চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজ রাখা হবে। এ সবের মধ্য দিয়ে শুধু উদ্যাপন নয়, আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল  ইতিহাসকে স্মরণ করব। এখন আশপাশে তাকালে হতাশ হওয়ার মতো অনেক কিছু এখন দেখা যায় বটে। এ সবের বিপরীতে ডিসেম্বর আসে অনুপ্রেরণা দিতে। জাগাতে আসে। এবারের বিজয় উৎসবও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এ নাট্যজন। 
ঢাকার বেশ কয়েকটি মঞ্চে একসঙ্গে বিজয় উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সম্মিলিত সাংস্কৃকি জোট। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্যাপিত হবে এই উৎসব। প্রথম দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। এখানে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ১৪, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর উৎসবের আয়োজন করা হবে রায়ের বাজারে। ধনিয়ায় বিজয় উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর। আদি ঢাকা সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে বাহাদুর শাহ পার্কে। এসব স্থানের বাইরে মিরপুর ও উত্তরা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে উৎসব। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, এরই মাঝে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন তারা। অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিকেল থেকে চলবে অন্যান্য অনুষ্ঠান। 
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর বিভিন্ন প্রদর্শনী ও উৎসব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে টিএসসি কেন্দ্রিক সংগঠনগুলোও। 
এদিকে, বিজয় দিবস সামনে রেখে জাতীয় পতাকায় লেগেছে নতুন ঢেউ। রাজধানীর রাজপথে অলিতে গলিতে উড়তে শুরু করেছে লাল-সবুজ পতাকা। বিক্রেতারা পতাকা নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করছেন। পতাকা তৈরির কাজে ব্যস্ত এখন দর্জিরাও। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাতের ওপর মেশিন নিয়ে বসে পতাকা সেলাই করতে দেখা যাচ্ছে। পছন্দ মতো পতাকা সংগ্রহ করে গাড়িতে বাড়িতে ওড়ানো হবে। বিজয়েরমাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া বিভিন্ন স্যুভেনিরও  বিক্রি হচ্ছে দেদার। টিশার্টে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রণাঙ্গনের ইতিহাস। শীতে শালে, উত্তরীয়তে উঠে এসেছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। যার নামে মুক্তিযুদ্ধ সেই মহান নেতা শেখ মুজিব দৃশ্যমান হচ্ছেন বিচিত্র শিল্পভাষায়। এখন শুধু মাহেন্দ্রক্ষণ ১৬ ডিসেম্বরের অপেক্ষা।

×