৮০তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত কার্টুনিস্ট রনবী
রফিকুন নবী, মানে, রনবী বলে কথা! খ্যাতিমান শিল্পীকে সবাই এমনিতেই ঘিরে থাকতে পছন্দ করেন। জন্মদিন হলে সমাগম আরও বেড়ে যায়। কিন্তু মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর শুধু জন্মদিন ছিল না। এদিন ৮০ বছর পূর্ণ করেন রনবী। এত বড় উপলক্ষ কি আর হেলাফেলায় যেতে পারে? শিল্পী সমাজ তাই অনেক আগেইভাগেই কাজে নেমে পড়েছিল। কী অনুজ, কী অগ্রজÑ সবাই একাট্টা হয়েছিলেন। চাইছিলেন জন্মদিনটি স্মরণীয় হয়ে থাক। হলোও তা-ই। বিকেলে চারুকলার বকুলতলায় শিল্পী শিল্পপ্রেমী শিল্পী সমালোচক থেকে শুরু করে শিল্পপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। নাট্যজন গায়ক মন্ত্রী রাজনীতিবিদ ব্যাংকার কেউ বাদ যাননি। আর চারুকলার সাধারণ ছাত্রছাত্রী শিক্ষকরা তো ছিলেনই। সবাই মিলে লম্বা সময় ধরে ঘিরে ছিলেন রনবীকে। ফুলে ফুলে শিল্পীকে এদিন ভরিয়ে দেওয়া হয়।
ছিল কেক কাটার আয়োজনও। খোলা চত্বরে এদিন ৮০ পাউন্ডের কেক এনে রাখা হয়েছিল। বিশাল কেকের চার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন রনবী। এ সময় বিপুল করতালির মাধ্যমে প্রিয় শিল্পীকে অভিনন্দিত করা হয়। জানানো হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আরেক কিংবদন্তি শিল্পী হাশেম খান পাশে ছিলেন। নিজ হাতে রনবীর মুখে কেক তুলে দেন তিনি। কী যে সুন্দর দেখাচ্ছিল এই দৃশ্যটি! শিল্প সমালোচক নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানসহ অন্যরাও শিল্পীর মুখে এক টুকরো করে কেক তুলে দেন। একপর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ৮০ পাউ- কেক রনবীকে একাই খেতে হবে! অগত্যা অন্যদের মধ্যে বিলি বণ্টন শুরু হয়।
এদিন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বকুলতলার মঞ্চটি। অসংখ্য ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কাঁচা ফুলের রঙ, মিষ্টি ঘ্রাণ যেন রনবীকে এদিন ছুঁয়ে ছিল। ফুল হাতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে ভক্ত অনুরাগীরা তাদের প্রিয় শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
একই সময় চলছিল আলোচনাও। রফিকুন নবীকে নিয়ে কথা বলার কত মানুষ! সবারই কিছু না কিছু বলার আছে। তবে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হাশেম খান, নজরুল ইসলাম ও ড. আতিউর রহমানসহ কয়েকজনকে। এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী দিপু মনিও। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন তারা। ভক্তরা এ সময় ব্যক্তি রনবী ও তার ছবি আঁকার জগৎটিকে যেন নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়াস নেন। মজার মজার স্মৃতিচারণ করেন অনেকে। ঘুরে ফিরেই আসে কার্টুন প্রসঙ্গ। রনবীর অনন্য সাধারণ সৃষ্টি টোকাই নিয়ে কথা হয়।
কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে শিল্পী কীভাবে সমাজ দেশ এমনকি বিশ্ব রাজনীতির, সমাজ নীতির চিত্র তুলে ধরেছিলেন, তা মনে করে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। পারমাণবিক অস্ত্র আছে এমন অভিযোগ করে ইরাকে কী ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। কত মানুষ মেরেছিল তারা! প্রাচীন সভ্যতার অসংখ্য নিদর্শন বোমা মেরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ পরে দেখা গেছে, ইরাকে পরমাণু অস্ত্র বা পরমাণু প্রযুক্তি বলতে কিছু নেই। এ সত্য প্রমাণিত হওয়ার অনেক আগে রনবী কার্টুন এঁকে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ইরাক আক্রমণের ছবি এঁকে তার এক পাশে লিখে দিয়েছিলেন, ‘সব দোষ নন্দ ঘোষ।’ জন্মদিনের উৎসবে বিখ্যাত এই কার্টুনচিত্রের উদাহরণ টেনেছেন অনেক বক্তা। দেশীয় রাজনীতির দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসও খোঁজা হয়েছে রনবীর ক্যারিকেচারে। সব মিলিয়ে বেশ নষ্টালজিক হয়ে উঠেছিল সময়টা।
বিপরীতে রনবী খুব কম কথাই বলেছেন। সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। সবার মাঝে থেকে বাকি জীবন এভাবেই ছবি এঁকে যাওয়ার প্রত্যাশার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ব্যানারে জন্মোৎসবের মূল আয়োজক যারা, নাম ধরে বললে, অধ্যাপক নিসার হোসেন, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য, মনিরুল ইসলামরা এদিন অত সামনে আসেননি। নেপথ্যে থেকেই এত দারুণ একটি উৎসব উপহার দিয়েছেন তারা। স্মরণীয় এ উৎসবের জন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
এদিকে, জন্মদিনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হিসেবে শুরু হয়েছে রনবীর কার্টুন ও পোস্টার প্রদর্শনী। চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম দিন দর্শনার্থীরা বড় বড় চোখ করে প্রদর্শনী দেখেছেন। বিস্ময় কাটতে চাইছিল না তাদের। আরও কয়েকদিন প্রদর্শনী চলবে। ঘুরে আসুন। বিরল কিন্তু আয়োজনটি!