ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

পাঁচ দেশ ঘুরে ‘রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ’ বাংলাদেশে

​​​​​​​সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঁচ দেশ ঘুরে ‘রাইজিং ফ্রম দ্য  অ্যাশেজ’ বাংলাদেশে

তেজগাঁওয়ের আলোকি গ্যালারিতে রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

শিল্পের কোনো সীমারেখা নেই। সেই সুবাদে শিল্প হচ্ছে সর্বজনীন। তাই নান্দনিকতার স্বকীয়তাকে ধারণ করে শিল্প বিচরণ করে দেশ থেকে দেশান্তরে। তেমনই এক শিল্পায়োজনের শিরোনাম রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ। পৃথিবীর পাঁচটি দেশ ঘুরে এই প্রদর্শনীটি এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে।

তেজগাঁওয়ের আলোকি গ্যালারিতে। শিল্পরসিকদের নয়নে প্রশান্তির অনুভব ছড়ানোর পাশাপাশি প্রদর্শনীটির নেপথ্যে রয়েছে মানবিক এক  আবেদন।  তুরস্কে  ভয়াবহ ভূমিকম্পের  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মের বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে। চিত্রকর্মের সঙ্গে আলোকচিত্রের সম্মিলনে সেজেছে এই আয়োজন। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে তুরস্ক বাংলাদেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম। এই প্রদর্শনীর গল্পটা শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি থেকে। তুর্কি শিল্পী তুবা আহসান ইস্তান্বুলের সিমাল আর্ট গ্যালারির শিল্পী বন্ধুরা মিলে একটি প্রদর্শনী করছিলেন। সেই সময় তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ঘটে ভয়াবহ ভূমিকম্প। সেই ভূমিকম্পে ন্ডভন্ড হয়ে যায় উত্তর পশ্চিম সিরিয়া এবং দক্ষিণ মধ্য তুরস্ক। সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয় তুরস্ক। দেশটিতে প্রাণহানি ছড়ায় ৫০ হাজার, আহত হয় লক্ষাধিক মানুষ। যা দেখে মানবতাবাদী মানুষের মতোই তুবা তার বন্ধুরা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। ভাবতে থাকেন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে সহায়তা করা যায়।

সেই ভাবনা থেকেই তুবার মাথায় আসে, তিনি যা ভালো পারেন, সেই শিল্পের মাধ্যমেই সাহায্য করতে পারেন আর্ত মানুষদের।রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজনাম দিয়ে শুরু করেন তারা প্রদর্শনী। শুরুটা নিউইয়র্ক দিয়ে হলেও একে একে কাতার, কুয়েত, ইতালিসহ পাঁচটি দেশ পরিভ্রমণ করে এই প্রদর্শনী। চলমান সে যাত্রায় রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে।

তুবা এবং তার বন্ধু শিল্পীদের দল প্রদর্শনী থেকে শিল্পকর্ম বিক্রয়লব্ধ অর্থের একটা বড় অংশ দিয়ে তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বানিয়ে দেন। এমনকি নিজেদের কাজে অসাধারণ দক্ষ এসব শিল্পী পরিবেশবান্ধব এসব বাড়ির নকশাও করে থাকেন। টেকসই  এই বাড়িগুলো এমনভাবে বানানো হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারে।

এই প্রদর্শনীর অন্তর্গত বিষয় হিসেবে ধরা দিয়েছে মানুষের সম্মিলিত শক্তি কিংবা ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। শত ধ্বংস আর প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ যে ফিনিক্স পাখির মতোই ছাই থেকে জীবন্ত হয়ে ওঠে-সেই বারতা দিয়েছে এই শিল্পায়োজনটি।    সেই  প্রতিফলনের দেখা মেলে কখনো শিল্পীর ক্যানভাসে কিংবা ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার চোখ দিয়ে।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী তুরস্কের শিল্পীরা হলেন- ইলহামি আতালায়, চেমাল তয়, মেদিহা আতালায়, কানান আয়দোয়ান, জাফর ওরস, রুবেইদা গোরমেজোলু, তুবা আহসান, ফারুক এরচেতিন, কুবরা ওকমেন, ফুরকান তুরকিলমাজ, এলিফ তারাকচিসহ অন্যরা। ছাড়া এই প্রদর্শনীর বাংলাদেশে যে আয়োজন তাতে প্রথমবারের মতো স্থানীয় শিল্পীরাও অংশ নিচ্ছেন। আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল, স্থানীয় শিল্পীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রদর্শনীতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করা। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ তুরস্কের বন্ধুত্বের শৈল্পিক অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটবে।

বাংলাদেশে প্রদর্শনীর আয়োজক হিসেবে তুবার সঙ্গে আছেন সামিরা জুবেরী হিমিকা। তিনি বলেন, তুবার এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পেরে ভালো লাগছে। আয়োজনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীরা। আশা করছি এই ধরনের সমন্বিত প্রদর্শনীগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্পযাত্রার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন আজিজি খান, সামিরা জুবেরী হিমিকা, রাকিবুল আনোয়ার, সাদিয়া খালিদ রীতি, জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তি, হৃদিতা আনিশা, মাসুদা খান, অনন্যা মেহপার আজাদ, সুবর্ণা মোরশেদা, অন্তরা মাহরুখ আজাদ তায়ারা ফারহানা তারেকের শিল্পকর্ম। তাদের রং-তুলির আঁচড়মাখা চিত্রকর্মের সঙ্গে  রয়েছে আলোকচিত্রী রাহুল রায়ের ফটোগ্রাফি।

২৩ সেপ্টেম্বর সূচনা হওয়া প্রদর্শনীর শেষ দিন আজ মঙ্গলবার। বেলা তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দর্শনার্থীকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

×