ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রযুক্তি ও আধুনিক সাংবাদিকতা

​​​​​​​জলি রহমান

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৩১ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ২১:০৬, ৩১ মার্চ ২০২৩

প্রযুক্তি ও আধুনিক সাংবাদিকতা

.

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবন ধারায়। প্রযুক্তির সেবায় বদলে গেছে সকল কাজের ধরন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অফিস পাড়ায় এখন ব্যবহার করা হয় কম্পিউটার ও ল্যাপটপ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতেও স্মার্ট ফোন। কোনো খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পরে বিশ্বব্যাপী। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনতে হয়েছে অফিস আদালতের কাজেও। সাংবাদিকের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এক যুগ আগেও যে কোনো খবরের জন্য টিভি অথবা ভোরের খবরের কাগজের অপেক্ষায় থাকতে হতো পাঠকদের। এখন পছন্দনীয় অনলাইন পত্রিকায় সাবস্ক্রাইব করে রাখলে নতুন খবর এসে নোটিফিকেশনে নক করে। অনলাইন পত্রিকা চলমান ঘটনা প্রকাশের একটি প্রক্রিয়া। যেখানে আর্কাইভ থাকে, পাঠক ইচ্ছা করলেই তার পছন্দনীয় বিষয় নির্বাচন করে পড়তে পারে। প্রয়োজনে খবরের লিঙ্ক অন্যকে পাঠাতে পারেন। আবার প্রিন্ট করে সংগ্রহেও রাখা যায়। যখন যেখানে ইচ্ছা মোবাইল ফোনেই দেশের সকল খবরাখবর অনলাইনে পাঠক পড়তে পারছেন অনলাইন পত্রিকায়। এজন্য প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে অনলাইন মিডিয়ায় বেশি ঝুকছেন পাঠকরা। সংবাদের সবচেয়ে আধুনিক মাধ্যমে পরিণত হয়েছে অনলাইন সাংবাদিকতা। অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের সাধারণত চারটি মাধ্যম রয়েছে- লেখা, অডিও, ভিডিও ও ছবি। অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমে যা সম্ভব নয়। বর্তমানে অধিকাংশ দৈনিক পত্রিকারই রয়েছে অনলাইন ভার্সন। 

জানা যায়, ১৯৭৪ সালে ব্রুস পারেলউ ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনলাইন সংবাদপত্র চালু করেন। ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া সরকারি মালিকানাধীন ব্রাজিলীয় সংবাদপত্র ‘জার্নালদোদিঅ্যা’ নব্বই দশকের দিকে অনলাইন সংস্করণের সূচনা করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে শতাধিক সংবাদপত্র অনলাইনে প্রকাশনা শুরু করে ১৯৯০ সালের শেষ দিকে। তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার শুরু ২০০৫ সালের দিকে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা না থাকায় ২০১০ সাল পর্যন্ত এ মাধ্যমের পাঠক ছিল হাতেগোনা। যখন ইন্টারনেট মানুষের নাগালের মধ্যে আসে, তখনই বাড়তে থাকে অনলাইন পত্রিকার পাঠক। তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে অনলাইন মিডিয়ার সংখ্যা হাজারেরও অধিক। আমাদের দেশে রয়েছে মিশ্র নিউজ পোর্টাল, বিশেষায়িত নিউজপোর্টাল, বিশেষ সংবাদ ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল, ডেইলি ইভেন্ট নিউজ পোর্টালসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সংবাদপত্র। স্মার্ট ফোন বা ইলেক্ট্রনিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে যখন কোনো ব্যক্তি সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা ও প্রচারের কাজ করেন তাকে মোবাইল সাংবাদিকতা বা সংক্ষেপে মোজো বলা হয়। মোবাইল সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ধরনের বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সহায়তায় সংবাদ তৈরি, সম্পাদনা ও নিজের কমিউনিটিতে দ্রুত ভাগাভাগি করা যায়। মোবাইল সংবাদিকতা বর্তমানে জনপ্রিয় একটি সংবাদ মাধ্যম। প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আধুনিক সাংবাদিকতা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জাতীয় তথ্য কমিশনের সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. মো. গোলাম রহমান। তিনি মোবাইল জার্নালিজমে কন্টেন্ট তৈরি, শট নেওয়া ও সম্পাদনার বিভিন্ন দিকের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

অনলাইন সাংবাদিকতায় সম্পাদনার ক্ষেত্রে যা জানা প্রয়োজন, যে কোনো ভিডিও কন্টেন্টের প্রথম তিন সেকেন্ড বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কন্টেন্ট বা টেক্সটের সাইজের বিষয়টির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি ভিডিও স্টোরি বোঝাতে অন্তত ছয়টি শট জরুরি। যথাযথভাবে ভিডিও আপলোড করতেও জানতে হবে সাংবাদিকদের। এজন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক সাংবাদিকতায় দক্ষ বানাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে অনেক কিছুই হয়েছে পরিবর্তিত। তেমনি সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমেও এসেছে পরিবর্তন। মধ্য বয়সী নর-নারীরা অনলাইন সংবাদের ওপরই বেশি নির্ভরশীল বর্তমানে। তবে এখনো ঘরের বয়স্ক সদস্যদের ভোরবেলা এক কাপ চায়ের সঙ্গে খবরের কাগজ পড়া অভ্যাসে পরিণত হওয়ায় অনলাইন পত্রিকার পাশাপাশি প্রিন্ট মিডিয়াও চলছে সমান ভাবে।

×