ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে গণশৌচাগারের দুরবস্থা

​​​​​​​ সাজেদ রহমান, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৩১ মার্চ ২০২৩

যশোরে গণশৌচাগারের দুরবস্থা

যশোর শহরের গণশৌচাগারের অবস্থা শোচনীয়

লাখ মানুষের যশোর শহরে পাবলিক টয়লেট (গণশৌচাগার) মাত্র ১০টি। এর মধ্যে ৮টির অবস্থাই শোচনীয়। দুর্গন্ধ, নোংরা পরিবেশ, ভাঙা দরজা, নেই পানির ব্যবস্থা। অবস্থায় প্রয়োজনে ঘরের বাইরে আসা, নানা কাজে গ্রাম থেকে শহরে আসা ভাসমান মানুষদের দুর্ভোগের ভাষা বর্ণনার বাইরে। বিশেষ করে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন।

যশোর পৌরসভা তথ্য মতে, পৌরসভায় মোট ১০টি গণশৌচাগার রয়েছে। এগুলো হচ্ছে চাঁচড়া চেকপোস্ট, গোহাটা সড়ক, মাছ বাজার, পৌর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, পালবাড়ী বাজার, যশোর জেনারেল হাসপাতাল, যশোর ইনস্টিটিউট, কালেক্টরেট, পৌরপার্ক এবং খুলনা বাসস্ট্যান্ড। এর মধ্যে ইজারা দেওয়া আছে মাত্র ৪টি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের গণশৌচাগারের মধ্যে মাত্র দুটি চলন সই। বাকিগুলোর সমস্যা প্রকট। পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের গণ-শৌচাগার সংস্কারের নামে ভেঙে ফেলা হয়েছে। টাউন হল মাঠের গণশৌচাগার খোলা হয় অনুষ্ঠানের দিনে। অন্যদিনগুলোতে বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় মানুষ শৌচাগারের বাইরেই কাজ সারে। ফলে খোলা থাকলেও বাইরের পরিবেশ মাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। আবার ভেতরে প্রবেশের পর পানির অভাবে নোংরা অবস্থায় বের হয়ে আসেন অনেকে। এই শহরে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের পদচারণা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে নানা কাজে শহরে আসে মানুষ। অনেকে দিনের কাজ দিনে শেষ করে ফিরে যান বাড়িতে। কিন্তু এই ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত মানুষের বাথরুমের বেগ আসতেই পারে। ঠিক সময় সমস্যায় পড়তে হয় অধিকাংশকেই। খুঁজে বেড়াতে হয় শৌচাগার। গণশৌচাগার পেলেও যাওয়ার পরিবেশ থাকে না সেগুলোর। অবস্থায় কেউ দায় ঠেকে ওই পরিবেশেই টয়লেট ব্যবহার করেন আবার কেউবা একটু ভালো স্থানের সন্ধান করেন। তবে অবস্থায় খুব বিপাকে পড়েন নারীরা। পুরুষরা যেখানে সেখানে পরিবেশ নষ্ট করে কাজ সারতে পারলেও মহিলারা প্রস্রা চেপে রাখতে বাধ্য হন। যাতে প্রকারন্তে তার শারীরিক ক্ষতিই হয়।

রাতের অন্ধকারে, আড়ালে আবডালে উন্মুক্ত স্থানে বাথরুমের প্রয়োজন মেটানোর প্রবণতা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু পরিবেশ সম্মত গণশৌচাগার না থাকায় প্রয়োজনে যেখানে সেখানেই চলছে প্রয়োজন মেটানোর কাজ। ফলে নোংরা হচ্ছে শহর। তবে খোলা স্থানে মল ত্যাগকারীর সংখ্যা অতি নগন্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর শহরের অধিকাংশ গণশৌচাগারে রয়েছে নানা ধরনের সমস্যায়। খুলনা বাসস্ট্যান্ড বা মনিহার রোডে গণশৌচাগার রাস্তা সংস্কারের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। খোলা স্থানে বাথরুম চালু করেছে মণিহার এলাকায় অবস্থান নেওয়া মানুষরা। সেখানে যেখানে চোখ যায় সেখানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। যশোর বাস টার্মিনালের গণশৌচাগারের অবস্থাও ভালো নেই। প্রায় দরজাগুলো ভাঙ্গা। নেই পানির কোনো সুব্যবস্থা। বাথরুমের দেওয়াল এবং ভেতরে বসার স্থানও ভেঙে গেছে। চেকপোস্টের গণশৌচাগারে টাইলস করা থাকলেও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ভেঙে গেছে বাথরুমের দরজা এবং ভেতরের বাথরুমের বসার স্থান। এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের গণশৌচাগারে বিকেল ৪টার পরে তালা পড়ে যায়। আবার যশোর বড়বাজারের গণশৌচাগারের অবস্থাও খুবই খারাপ। ভেঙে গেছে দরজা, শৌচাগারের পাশে খোলা স্থানে ময়লার স্তূপ।

 যশোরে ১০টি গণ-শৌচাগারের মধ্যে মোটামুটি পরিচ্ছন্ন রয়েছে যশোর পৌরপার্কেরটা। বাকি ৯টিতেই আছে বিভিন্ন সমস্যা।

চেকপোস্টের পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রেম লাল জানান, আমরা প্রতি ব্যক্তির নিকট হতে প্রস্রাবের জন্য টাকা এবং বাথরুম করলে ১০ টাকা নিয়ে থাকি। প্রতিদিন হিরোনকে ৩শ টাকা করে দিতে হয়। তবে আমাদের কষ্ট হচ্ছে বাথরুমের পানি দূর থেকে নিয়ে আসতে হয়। মাস আগেও পানির ট্রাঙ্কি বসানোর জন্য পৌরসভা থেকে দেখে গেছে। ভেতরের জায়গা অনেক কম। বাথরুমের প্যান ভাঙার কথা বললেও এখনো ঠিক করে দেয়নি। আমি নিজেই সিমেন্ট দিয়ে কোনো রকম ঠিক করে ব্যবহার করার উপযোগী করেছি। মণিহার রোডে পান চা বিক্রেতা রুহুল আমিন জানান, এখানে বাথরুম ভাঙার পরে সবারই সমস্যা হয়। বর্তমানে আমরা যেটায় যাই সেটা আগের নষ্ট পুরাতন বাথরুম। এই বাথরুম ব্যবহারের কোনো পরিবেশ নেই।

বাসের স্টাফ আলিমুল জানান, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। রাত-দিন গাড়িতেই থাকি। কিন্তু যশোরে আসলে প্রস্রা-পায়খানায় অনেক কষ্ট পায়। পানি নেই দরজা ভাঙা এবং প্রচুর দুর্গন্ধ। বাথরুমে গেলে বমি চলে আসে। শাহনাজ বেগম নামে একজন জানান, ‘আমরা কয়েকজন মহিলা মণিহারের আসপাশেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি।

প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টার্মিনালের বাথরুম ব্যবহার করতাম। কিন্তু কয়েক মাস আগে রাস্তার কাজ করার জন্য নতুন বাথরুম ভেঙে ফেলেছে। কারণে আগের সেই পুরাতন বাথরুম চালু করেছে। আর বাথরুমের অবস্থা আগেই তো খারাপ ছিল যার কারণে নতুন করে করা হয়েছিল। বড়বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, এখানকার টয়লেটের করুণ খুবই অবস্থা। যাওয়ার কোনো পরিবেশই নেই।

বাহির থেকে যা দেখছেন তার থেকে ভেতরের অবস্থা আরও খারাপ। তারপরেও বিকেল ৫টায় তালা দিয়ে চলে যায়। এরপর আমরা বাথরুম আসলে বেশিরভাগ সবাই মসজিদে যায়। বড়বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আসরাফ জানান, ‘টয়লেটে যাওয়া কোনো পরিবেশ নেই। তারপরও আমাদের যেতে হয়। বাহির থেকে আপনি নিজেই দেখুন। কি পরিবেশে আছে এখানকার টয়লেট।

যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু বলেন, আগের চেয়ে যশোরের গণ-শৌচাগার অনেক ভালো। ইজারা দেওয়াগুলোই তেমন সমস্যা নেই। তবে অন্যগুলোই একটু সমস্যা আছে। কিন্তু যে ৪টি ইজারা দেওয়া আছে সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। আর কয়েকটি আছে শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের সময় খোলা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হলে পরিষ্কার করে বন্ধ করে রাখা হয়। তবে বছর ৫টি শৌচাগার ইজারা দেওয়া হবে।

পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, মনিহারের পাশে গণ-শৌচাগারটি রাস্তার কাজের জন্য ভাঙা হয়েছে। এখানে খুব দ্রুত নতুন টয়লেটের কাজ শুরু হবে। পৌরসভার ভেতরে যেগুলোর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেগুলোর টেন্ডারের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পাস হয়ে গেলেই কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। গণশৌচাগার এবার নতুন করে সংস্কার হবে।

×