ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

​​​​​​​অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২৬ মার্চ ২০২৩

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

.

পবিত্র মাহে রমজানের চতুর্থ দিবস আমরা অতিবাহিত করছি। রমজানে মুসলমানের জীবন, মুসলমানদের সংস্কৃতি একটু আলাদা, একটু ভিন্ন। হৃদয়কাড়া নানা আয়োজনে  রাতদিন মুমিন মন থাকে মশগুল। আপনি রমজানের মৌসুমে জনপদের যে প্রান্তেই অবস্থান করুন, ভোর রাতে নানা ধরনের গজলের সুর কানে আসবেই। মুসলিম শিশু-কিশোর স্বেচ্ছাসেবী দল নানা কোরাস তুলে ঘণ্টাধ্বনি কিংবা সাইরেন দিয়ে সাহরি গ্রহণের জন্য রোজাদারদের নিদ্রাভঙ্গে প্রয়াস চালায়। যেমন কোথাও কোথাও কিশোররা মসজিদের মাইক থেকে ভোর রাতে গেয়ে ওঠে:

রমজানেরই রাতের শেষে/ঘুমিয়ে কেন তুমি এখন

সাহরির যে সময় হলো/ ওঠো ওঠো মুমিনগণ।

সাহরি অর্থ কোনো কিছু পানাহার পূর্বক প্রত্যুষে সুবহে সাদিকের আগে রোজার শুভ সূচনা করা (আমাদের অনেকে সাহরিকেসেহেরী বলে, এটা শুদ্ধ নয়। তবুও এটা প্রচলিত হয়ে আছে) উল্লেখ্য, সাহরি ভোররাতে নিছক একটি খানাপিনার আয়োজন নয়। এটি ইসলাম ধর্মে ইবাদতের মধ্যে শামিল। এক পবিত্র মুহূর্ত। আল কুরআনে সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে : তোমরা পানাহার করো, যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য সাদা সুতা কালো সুতা হতে সুস্পষ্ট না হয়। রাসুলূল্লাহ (.) ইরশাদ করেছেন তোমরা সাহরি খাও। কেননা এতে বড় বরকত নিহিত। Ñবুখারী শরীফ।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত যায়িদ ইবনে সাবিত (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা প্রিয় নবী হুজুরে কারীম (.) এর সঙ্গে সাহরি খেয়েছি। পরে তিনি ফজরের নামাজ পড়েছেন। সাহাবী যায়েদ (রা) স্মৃতি রোমন্থনের সময় একজন জানতে চাইলেন, তখন আজান সাহরির মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? উত্তরে তিনি জানালেন, ৫০ আয়াত তিলাওয়াত করতে যে সময় লাগে, সে সময় পরিমাণ। রাসূলে আকরাম (.) অন্যত্র বলেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেস্তারা সাহরি গ্রহণকারীর ওপর রহমত দোয়া প্রেরণ করেন। -(ফাজায়েলে তাবরানী)

সুতরাং আমরা যেন সাহরি অনুষ্ঠানকে রমজানের পালনীয় একটি অন্যতম সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করি। কোনো ধর্মীয় ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কিংবা কৃত্রিমতার আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। আল্লাহপাক বান্দাকে শুধু উপোস রেখে পরীক্ষা করতে চান তা নয়, পবিত্র হালাল পন্থায় পানাহারের যে তাগিদ রয়েছে সাহরির প্রতি ইসলামের উৎসাহ প্রদান সে ইঙ্গিত বহন করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (.) তো স্পষ্টত বলে ফেলেছেন- ‘আমাদের রোজা আহলে কিতাবদের রোজার পার্থক্য হচ্ছে সাহরি খাওয়া নিয়ে। (ইমাম মুসলিম হাদিসটি আমর ইবনুল আসের (রা) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন)

সাহরি যথাসম্ভব দেরি করে খাওয়া ভালো। তবে এত দেরি করা উচিত নয় যে, যখন সুবহে সাদিক হওয়ার আশঙ্কা হয়। কেউ যদি সাহরি খুব জলদি খায়, কিন্তু তারপর পান-চা-পানি ইত্যাদি অনেক্ষণ পর্যন্ত খেতে থাকে এবং সুবহে সাদিক হওয়ার অল্প পূর্বে কুলি করে ফেলে তবুও দেরি করে খাওয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি কারও রাতে ঘুম না ভাঙে এবং সে জন্য সাহরি খেতে না পারে, তখন সাহরি না খেয়ে রোজা রাখবে। সাহরি না খাওয়ার কারণে রোজা ছেড়ে দেওয়া বড়ই কাপুরুষতার লক্ষণ। আমরা যেন এসব বিধি বিধান পালনে সতর্ক হই, তাহলেই আল্লাহ তায়ালার রহমতের যে বারিধারা মৌসুমে প্রবহমান তা আমাদের সিক্ত করবে।

×