ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্যাপনে প্রস্তুত রাজধানী

গান কবিতায়, পতাকার লাল সবুজে মূর্ত হবে স্বাধীনতা 

-

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২৫ মার্চ ২০২৩

গান কবিতায়, পতাকার লাল সবুজে মূর্ত হবে স্বাধীনতা 

স্বাধীনতার গৌরব জাতীয় পতাকা হাতে দুরন্ত কিশোর

 জনকণ্ঠ ফিচার

--------------------

বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এসেছিল একাত্তর। পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে গোটা জাতি এক হয়ে প্রতিবাদ করেছিল। মার্চের শুরুর দিকে যা ছিল প্রতিবাদ প্রতিরোধ, শেষ দিকে তা বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপ লাভ করে। ২৫ মার্চের রক্তনদী অতিক্রম করে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করা হলেও, ভূখণ্ড তখনো দখলে রেখেছিল পাকিস্তানিরা।

ফলে দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করতে, বিতাড়িত করতে শুরু হয় সংশস্ত্র সংগ্রাম। সাধারণ বাঙালি যার যা ছিল তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার পর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। পাকিস্তানিদের পরাস্ত করে স্বাধীনতাকে নিশ্চিত ও সুদৃঢ় করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই থেকে বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানোর, এগিয়ে যাওয়ার মূল মন্ত্র হিসেবে কাজ করে আসছে ২৬ মার্চ। 
প্রতি বছর বিপুল আবেগ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বহুবিধ  প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ গান কবিতায়, পতাকার লাল সবুজে মূর্ত হবে স্বাধীনতা। গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কের দুই পাশ ইতোমধ্যে জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। উঁচু ভবনে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। লাল সবুজ আলোয় চেতনার রং। পোশাকেও আজ দৃশ্যমান হবে লাল সবুজের আবেগ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামবে।

সর্বস্তরের মানুষ সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে রণাঙ্গনে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নির্মম মৃত্যুর শিকার হওয়া সাধারণ মানুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে থাকবে আরও নানা কর্মসূচি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগঠন তাদের মতো করে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। 
সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হবে ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা।’ শেষ হবে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে। গত ১১ বছর ধরে আয়োজন করা হয়ে আসছে ব্যতিক্রমী এ পদযাত্রার। প্রথমে উদ্যোগটি গ্রহণ করে পর্বতারোহীদের সংগঠন অভিযাত্রী। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ১৯৭১ সালে একদল অভিযাত্রী দেশমাতার মুক্তির অভিপ্রায়ে ‘বিশ^ বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’য় অংশ নিয়েছিলেন।

ঐতিহাসিক ঘটনাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আজকের এই উদ্যোগ। বিভিন্ন বয়সী মানুষ এতে অংশ নেবেন। না, সাধারণ হেঁটে যাওয়া নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান স্থাপনা পরিদর্শন ও ইতিহাস অনুসন্ধান করতে করতে হেঁটে যাবেন তারা। আয়োজকরা বলছেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে সূচনা করা হবে পদযাত্রার। একাত্তরে স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবে এ পদযাত্রা। 
একই দিন ছায়ানট সকাল ১০টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গান ও কবিতার ভাষায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করবেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে একাত্তরে হারানো শহীদ স্বজনদের। সবশেষে দেখানো হবে ‘জলগেরিলা৭১’ শিরোনামের একটি তথ্যচিত্র। 
জাতীয় জাদুঘরে আরও আগে থেকে চলছে স্বাধীনতা দিবসের প্রদর্শনী। নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে আয়োজন করা প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, স্মৃতি নিদর্শন, সে সময় প্রকাশিত দুর্লভ পুস্তিকা, দলিল দস্তাবেজ প্রদর্শন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। টেলিভিশন বেতার ও পত্রপত্রিকায় থাকবে বিশেষ আয়োজন। তবে শুধু আনুষ্ঠানিকতায় নয়, ভেতর থেকে জাগ্রত হওয়া চাই। তবেই সার্থক হবে উদ্যাপন।

×