ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২৪ মার্চ ২০২৩

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

.

রহমত, মাগফিরাত নাজাতের মাস মাহে রমজানের আজ দ্বিতীয় দিবস। মাসের বরকতময় আমলগুলোর মাধ্যমে মুমিন জীবনে আসে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন। রমজান এমন এক মাস যা সমাজ জাতির কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচিত প্রভাবশালী। এর আগমন যেমন ঘটে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে, এর প্রস্থানও হয় গোটা উম্মাহর ধমনিকে তোলপাড় করে। বস্তুতঃ ইবাদত-রিয়াজত মুসলিম সংস্কৃতি চর্চা অনুশীলনে বিশ্ব মৌসুম এটি। একই সঙ্গে তামাম উম্মাহর শিরা  উপশিরা নাড়া দেয় মাস। মাসের তাৎপর্য গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজ জাতির ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক নৈতিক মানোন্নয়নে এর প্রভাব অত্যন্ত ক্রিয়াশীল। মাসের বহুবিধ আমল মুমিনের ঈমানকে তেজোদীপ্ত সতেজ করে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নৈকট্য লাভের উপযোগী হয়, কেননা এর মাধ্যমে মুমিন এক দুর্লভ চরিত্রতাকওয়া খোদাভীতি অর্জন করতে পারে। আর খোদাভীতি পরকালে জবাবদিহিতা একটি সৎ মহৎ জীবন গড়ার পূর্বশর্ত।

মাহে রমজানে মুসলমানরা কুরআনুল কারীমের কাছে অবস্থান করে, এর তিলোয়াত করে, এর হুকুম মতো জীবন কাটাতে অভ্যস্ত হয়, একে সম্মান করে, এর জন্য তিলাওয়াত শামিল হয়। ফলে আল কুরআনের বরকতে তাদের তনুমনে আসে অগাধ কর্ম বিশ্বাস। মাসে উপবাসব্রত পালনের মাধ্যমে তাদের দেহ মনে যে কষ্টের দাগ কাটে, তাতে রোজাদারের মাঝে নিজেকে চেনার এবং অন্যকে বোঝার তাকত হাসিল হয়, সে মনুষত্বের গুণে উদ্ভাসিত হয়ে আত্মমানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ হতে থাকে। যার ফলে রোজাদার ক্রমাগত দান-সদকা করে, যাকাত দানে অভিলাষী হয়। এভাবে সমাজে ধনী-গরিবের পাহাড়সম ব্যবধান ভেঙে চুরমার হয়ে ভেসে ওঠে উম্মাহর ভ্রাতৃত্বময় পরিবেশ। বস্তুত ইসলাম অন্যকে সাহায্যের জন্য মাসে এমনভাবে মুমিনগণের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে যে, ঈদের নামাজের আগেই গরিব মিসকিনদের ফিতরা আদায় করতে তাগিদ করে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এমনভাবে সাদাকাতুল আদায় করা উচিত, যেন গরিবেরা অনায়াসে পায়, পীড়াপীড়ি করতে না হয়। উপরন্তু মাসের প্রতিটি নফল ইবাদত, দান-সদকাকে ফরজ ইবাদতের মর্যদা দেওয়া হয়েছে, যার কারণে সামর্থ্যবানগণ রমজানে যাকাত আদায়ে অত্যধিক মনোযোগী হন। মানুষের রোগ-শোক এবং অশান্তির এও একটি কারণ যে, আমরা পানাহারে নিয়ম শৃঙ্খলার, হালাল হারামের ধার ধারি না।

মাহে রমজানে নিয়মিত পরিমিত খাদ্যাভ্যাস একটি নিয়মে এসে যায়। যেমন, নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার, নির্দিষ্ট সময়ে সেহরি গ্রহণ। এর মাধ্যমে সম্মিলিত হালাল দ্রব্য পানাহারের প্রতিও সকলে উদ্বুদ্ধ হয়। একটি সুন্দর সমাজের জন্য এক অপরূপ চিত্র উপাদান বৈকি। রমজান মাস আসে মসজিদ মাদ্রাসা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আবাদ হয়। এসবের কার্যক্রমে আসে নয়া প্রাণ গতি। ফলে ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত মজবুত হয়। মুসলমানরা দিগদ্বিক কর্মব্যস্ততার ফাঁকে সমাজ সেবার বকেয়া দায়িত্বটুকুনও মাসে আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। একজন মুসলমান এসব বিশাল সামাজিক শিক্ষা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে মাসে পেয়ে থাকে আত্মিক-আধ্যাত্মিক মনোবল শক্তি বৃদ্ধির অপূর্ব সুযোগ। মাসেই রয়েছে ইবাদতে বরকত, রয়েছে নাজাত মাগফিরাতের সুসংবাদ। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমান জিকির আসকার, তিলাওয়াত, তাসবিহ প্রভৃতিতে আত্মনিয়োগ করেন। তাহাজ্জুদ সালাতের প্রয়াস চালান। মাসব্যাপী সেহরি গ্রহণের অভ্যাসরাত্রী জাগরণের অভ্যাসেরই নামান্তর। ফলে রমজানের সেহরি অনুষ্ঠান উম্মাকে রাত জেগে আমল ইবাদত করা বিশেষত তাহাজ্জুদ পড়ার সৌভাগ্য অর্জনের পথে ধাবিত করে। তাই মাহে রমজানের আগমন মানে মুসলিম নারী-পুরুষ শিশু-কিশোরদের মধ্যে এক ব্যাপক আগ্রহ উদ্দীপনা।

×