ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে চোখ তুলেছে সবুজ

চৈত্র দিনের বৃষ্টিতে নতুন প্রাণ, নির্মল প্রকৃতি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২০ মার্চ ২০২৩

চৈত্র দিনের বৃষ্টিতে নতুন প্রাণ, নির্মল প্রকৃতি

চাতক বাঁচে কেমনে মেঘের বরিষণ বিনে...। অবশেষে দেখা মিলল বৃষ্টির

রাজধানীতে বৃষ্টি হলো। তা তো হলোই। এর পর কি তাকিয়ে দেখেছেন চারপাশটা? বদলে গেছে কিন্তু! হঠাৎ বৃষ্টিতে নতুন প্রাণ পেয়েছে ধুলো জমা মলিন প্রকৃতি। রীতিমতো ঝকঝকে তকতকে মনে হচ্ছে এখন। 
এর আগে গত শীতের কালটা, বলা চলে, বৃষ্টিহীন গেছে। প্রকৃতি ছিল যারপরনাই রুক্ষ শুষ্ক। গাছের পাতা অনবরত ঝরেছে। ঝরতে ঝরতে কত গাছ যে ন্যাড়া হয়ে গেল! ছালবাকল উঠে যাওয়া শুকনো শাখা-প্রশাখা দেখে মরা গরুর হাড় বলেই মনে হয়েছে। বৃক্ষশোভিত অঞ্চল দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পায়ের নিচে পড়া শুকনো পাতার মচ্ মচ্ শব্দ তুলেছে। বসন্ত শুরুর পরও অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। বৃষ্টি না হওয়ায় দেদার ধুলো উড়ছিল ঢাকার আকাশে।

ব্যাপক হারে উন্নয়ন কর্মকা- চলমান থাকায় কোনো কোনো এলাকায় টেলকম পাউডারের মতো ধুলো উড়তে দেখা গেছে। বয়সী সবুজ পাতা, এমনকি বসন্তে গজিয়ে ওঠা কচি কিশলয় কালো বর্ণ ধারণ করেছিল। ঢাকার বাতাস সেই যে দূষিত হয়েছিল, আর ভালো হওয়ার নাম নেই। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর জন্য রাজধানী শহর ঢাকার যখন খুব বদনাম হচ্ছে, ঠিক তখন গত রবিবার নামল ঝুম বৃষ্টি। চৈত্রের বিরল বৃষ্টি বনে তো বটেই, মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দিল। বাংলা সনের শেষ মাসটি ঘিরে এমনিতে অনেক নিন্দা মন্দ হয়। এ সময়টা বৃষ্টিহীন থাকে। তাপ বিকিরণ বাড়িয়ে দেয় সূর্য। ফসলি জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান কৃষক। 
তবে এবার চৈত্রের একেবারে প্রথম দিনই শুভ সূচনা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলেছিল বৃষ্টির। আর যে বৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হয়ে এ লেখার অবতারণা, সে বৃষ্টি নেমেছিল গত রবিবার। চৈত্রের পঞ্চম দিনে যেন লালনের সেই ‘বরিষণ’ দেখলেন রাজধানীবাসী। সূর্য এদিন অস্তিত্ব জানান দেওয়ার তেমন সুযোগই পায়নি। মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ। বিকেলে, বিশেষত সন্ধ্যায় ও রাতে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। সেদিন দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ৫৩ মিলিমিটার। আর ঢাকায় রেকর্ড করা হয় ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। 
দুই দফা বৃষ্টিতে যেখানে যত ধুলো, সব ধুয়ে নিয়ে গেছে। রাস্তার ধারের গাছগুলোকে এখন কী যে সতেজ মনে হচ্ছে! সব পাতা সবুজ। এমনকি পিচঢালা রাস্তা এখন আবর্জনা মুক্ত। যত্রতত্র উড়তে থাকা ধুলো বসে গেছে। প্রশান্তির বৃষ্টি মানুষের মনকেও জাগিয়ে দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাসা-বাড়ির বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তরুণ-তরুণীরা। দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিয়েছেন বাসার সবচেয়ে নিরস ব্যক্তিটিও। অনেকে ছাদে ছুটে গেছেন। বৃষ্টিতে ভিজে এতদিন ধরে জমে থাকা শারীরিক ক্লান্তি, মনের অবসাদ দূর করেছেন। এমন চৈত্রের কাছে, হ্যাঁ, ঋণি থাকাই যায়।

×