ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব সাহিত্যের বিপুল সম্ভারের খোঁজে... 

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিশ্ব সাহিত্যের বিপুল সম্ভারের খোঁজে... 

মেলায় আসা পাঁচটি নির্বাচিত বইয়ের প্রচ্ছদ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে পছন্দের বইয়ের খোঁজে পাঠকরা (ডানে)

অমর একুশে বইমেলায় মূলত পাওয়া যায় বাংলাদেশী লেখকদের বই। তাই বলে বিশ্বসাহিত্য থেকে এই মেলা মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ করছে। এর ফলে  মেলায় এসে বাইরের দুনিয়ার সাহিত্য সম্পর্কেও জানার সুযোগ  পাচ্ছেন পাঠক। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এই কেন্দ্র সম্পর্কে বইপ্রেমীরা যথেষ্টই অবগত। প্রতিষ্ঠানটি আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নে সারাদেশে পাঠাগার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

একইসঙ্গে প্রকাশ করছে বই। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা ভাষায় লেখা বই অনুবাদ করে পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছে। একই উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিবছর স্টল নিচ্ছে  অমর একুশে বইমেলয়। এবারও আছে। টিএসসি সংলগ্ন গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করলে সহসাই চোখে পড়বে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের স্টল। 
অমর একুশে বইমেলার অষ্টম দিনে ঢুঁ মারার সুযোগ হয় বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে। প্রকাশনার দিক থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের একটি স্টল। লম্বা স্টলে প্রচুর বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অধিকাংশই বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। আর, কে না জানে, বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের বই সব সময়ই সুনির্বাচিত। যে বইগুলো না পড়লেই নয়, তেমন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ এখানে। অনুবাদের মানের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। নেপথ্যে এসব বিষয় তদারকি করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। হ্যাঁ, তিনিই প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ। 
স্টলের আলোচনায় ফেরা যাক। কেন্দ্রের স্টলে প্রদর্শিত হচ্ছে জগদ্বিখ্যাত লেখকদের উপন্যাস ও গল্পের অনুবাদ। উপন্যাসের কথা যদি বলি, স্টলে আছে লিও টলস্টয়ের ‘শয়তান’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’, হেরমান হেসের ‘সিদ্ধার্থ’, নিকোলাই অস্ত্রভস্কির ‘ইস্পাত’, আলবেয়ার কাম্যুর ‘দি প্লেগ’ বা ‘দি আউট সাইডার।’ ফিওদর দস্তয়ে ভস্কির বিখ্যাত উপন্যাস ‘বঞ্চিত লাঞ্ছিত’, ভিক্টর হুগোর ‘লা মিজারেবল’, বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘আলস্যের জয়গান’, ইভান তুর্গেনেভের ‘পিতা পুত্র’, নিকোলাই গোগলের ‘ডেড সোলস’Ñ আর কত নাম বলব! সবই চমৎকার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।  
বিশ^সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও সমাদৃত গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে কেন্দ্র থেকে। রুশ সাহিত্যিক আনন্ত চেখভের শ্রেষ্ঠ গল্প পাওয়া যাচ্ছে স্টলে। নিকোলাই গোগল, ডি.এইচ. লরেন্স ও জ্যাক লন্ডনের শ্রেষ্ঠ গল্প আছে। পাওয়া যাচ্ছে জেমস জয়েসের শ্রেষ্ঠ গল্প। ম্যাক্সিম গোর্কি, ও হেনরী, মার্ক টোয়েন, গী দ্য মোপাসাঁর মতো বিখ্যাত লেখকদের শ্রেষ্ঠ গল্প আছে। লিও তলস্তয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ বা ‘আনা কারেনিনা’র কথা কে না জানে? দেশ ও কালেত্তীর্ণ গ্রন্থ দুটির অনুবাদ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। বিশ^সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গল্প, সেরা ছোটগল্প আছে। আছে হোমরের ‘ওডেসী’ বা কালিদাসের ‘মেঘদূত’-এর মতো মহাকাব্য। বিশ^ বিখ্যাতদের কবিতা ও নাটকের অনুবাদ আছে। 
বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের স্টল থেকে দেওয়া একটি তালিকা অনুযায়ী, তাদের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে বিশ^সাহিত্য বিবেচনায় বিখ্যাত উপন্যাস রয়েছে ৪৭টি, গল্পগ্রন্থ ২৭টি, মহাকাব্য ৭টি এবং কাব্যগ্রন্থ রয়েছে ৩টি। এ ছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক রচনা আছে ৫টি। গ্রিক নাটক আছে ১৬টি, ফরাসি নাটক ৬টি, মার্কিন নাটক ৩টি, রুশ নাটক ১টি, নরওয়ের নাটক ৭টি, সুইডেনের ১টিসহ অনেকগুলো দেশের নাটক অনুবাদ করা হয়েছে।    
প্রকাশনা বিষয়ে কথা হয় কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শামীম আল মামুনের সঙ্গেও। তিনি জানান, স্টল থেকে দেওয়া তালিকাটি ঠিক আছে। তবে এর পরও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো তালিকায় ওঠানো হয়নি। তার তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বইয়ের মোট সংখ্যা এখন ৫৫৮। বেশিরভাগই বিশ^সাহিত্যের অমর সৃষ্টি। 
আলাপকালে মামুন বলেন, বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের বই মানেই সুনির্বাচিত। অনেক ভেবে যথাযথ হয় ে চিন্তে প্রকাশের জন্য বই নির্বাচন করা হয়। অনুবাদটা যেন সদিকে গুরুত্ব দিই আমরা। তাই কেন্দ্রের বই পড়লে বিশে^র কোথায় কী ধরনের সাহিত্য কর্ম হয়েছে বা হচ্ছে সে সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন পাঠক।  
এদিকে, মেলায় নতুন ১৪টি অনুবাদ গ্রন্থ আনছে বিশ^সাহিত্য কেন্দ্র। এরই মাঝে প্রকাশিত হয়েছে ৪টি। বিশ^সাহিত্যের প্রতি আগ্রহীরা স্টলে ঘুরে পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, একই স্টলে আপনি পাবেন বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত গ্রন্থমালাও।  
১১৪ নতুন বই ॥ মেলার অষ্টম দিনে একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে ১১৪ নতুন বই। 
নির্বাচিত বই ॥ মেলায় এখন পর্যন্ত আসা অসংখ্য ইয়ের মধ্য থেকে পছন্দের বই খুঁজে নেওয়া সহজ কাজ নয়। তাই বিভিন্ন বিবেচনায় কিছু বই আলাদা করার চেষ্টা করছি আমরা। সে অনুযায়ী, পাঁচটি নির্বাচিত বইয়ের কথা বলা যাক। 
সূর্যটা হেলে পড়েছে ॥ খ্যাতিমান কবি নির্মলেন্দু গুণের কাব্যগ্রন্থ। ছোট্ট একটি বই। তবে সাম্প্রতিক রচনা। কবি বলছেন, আমারও তো বয়স হয়েছে। হেলে পড়ছি দিন দিন। সেই বিবেচনায় বইয়ের নামটি যথার্থ। প্রকাশ করেছে ঝুমঝুমি প্রকাশনী। 
গাজীপুরে একাত্তর : অনালোচিত বীরগাথা ॥ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল গাজীপুরবাসী। লড়াইয়ের সামনের সারিতে থাকা অবসর প্রাপ্ত সৈনিক জামান এই যুদ্ধে শহীদ হন। বীর শহীদের সাহসী ভূমিকা এবং প্রথম প্রতিরোধের সেই ইতিহাস  তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। লেখক নাজমুল আমীন। প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ। ১৫৯ পৃষ্ঠার বই। মূল্য  ৩৫০ টাকা। 
মুজিবনগর সরকার ও বর্তমান বাংলাদেশ ॥ আকবর আলি খানের কিছু অগ্রন্থিত লেখা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ বই। বিদগ্ধ আকবর আলি খান মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস বই আকারে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথমা। 
১৯৭১ অর্থনৈতিক বৈষম্য ॥ আফসান চৌধুরী সম্পাদিত গ্রন্থ। লেখক মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণাধর্মী  অনেক কাজ করেছেন। এ বইটিও সে ধারার একটি সংযোজন, বলা যায়। পাকিস্তান আমলে মারাত্মক অর্থনৈতি বৈষম্যের শিকার হয়েছিল বাঙালি। বৈষম্যের ইতিহাসটি বইতে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। 
নদীপথে, সঙ্গে ইউলিসিস ॥ হাসনাত আবদুল হাইয়ের ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ। ভ্রমণকাহিনীর পাশাপাশি এতে দুটি ‘এপিক কাহিনী’ বর্ণনা করা  হয়েছে। একটি প্রাচীন কালের। অন্যটি বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকের। কী সেই কাহিনী? বরং বইটি পাঠ করেই জেনে নিন। বইটি এসেছে অন্য প্রকাশ থেকে। 
লেখক বলছি ॥ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন হাবিব আনিসুর রহমান, গাজী আজিজুর রহমান, রাসেল রায়হান, ইসমত শিল্পী।       
ওস্তাদ আলি আকবর খানের প্রতি শ্রদ্ধা ॥ বইমেলার মূলমঞ্চে এদিন অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : ওস্তাদ আলি আকবর’ খান শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনা করেন কমল খালিদ এবং আলী এফ. এম. রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেখ সাদী খান। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

×