ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখনো কৌতূহলী চোখ, নীরবে বই সংগ্রহ

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

এখনো কৌতূহলী চোখ, নীরবে বই সংগ্রহ

মেলায় আসা কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা প্রাঙ্গণের একাংশ

তখনো প্রবেশদ্বার খোলা হয়নি। ১৫ মিনিটের মতো বাকি। তাতে কি? আগেভাগে চলে এসেছেন অনেকে। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তাদের বক্তব্য, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। একটু আগে ঢুকতে দিলে কী হয়?
 মেলার ষষ্ঠ দিনে সোমবার বাংলা একাডেমির বিপরীত দিকে চোখে পড়ল এমন দৃশ্য। রমনা কালীমন্দিরের গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতে চাইছিল তরুণ এই পাঠক দল। কিন্তু এত তাড়াহুড়োর কী আছে? মাত্র তো ১৫ মিনিট। এর পর মেলার সব দ্বার খুলে দেওয়া হবে। জবাবে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছিলেন, মামা, ছয়দিন হয়ে গেছে মেলার। এখনো ভেতরে ঢুকে দেখতে পারলাম না চেহারাটা কেমন? এটা মানা যায়, বল?
পরে শিহাব নামের ওই তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মেলা শুরুর প্রাক্কালে ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মন পড়েছিল মেলায়। বলছিলেন, তিন বছর আগেও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। মেলা যেদিন শুরু হতো সেদিনই আমরা বন্ধুরা দলবেঁধে ঢুকে পড়তাম। ঘুরে দেখতাম, কেমন হলো। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিন টিএসসিতে প্রথমে জড়ো হতাম।

সন্ধ্যার আগে আগে সেখান থেকে চলে আসতাম মেলায়। নতুন কী বই এলো, কোন্টা কিনতেই হবে- গল্প, আড্ডার সময় ঠিক করে নিতাম। বড় ভাইদের পেলে তাদেরকে বই কিনে দিতে বলতাম। সব মিলিয়ে অন্যরকম স্মৃতি। বইয়ের পাশাপাশি মেলায় ঢুকে স্মৃতিগুলোও খুঁজে বেড়াবেন বলে জানান তিনি। 
কথা বলতে বলতেই সময় হয়ে যায়। খুলে দেওয়া হয় মেলার প্রবেশদ্বার। শিহাব ও তার বন্ধুদের মতো আরও অনেকে বইয়ের রাজ্যে ঢুকতে থাকেন। এদিন ভিড় খুব বেশি ছিল না। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হয়েছে। সরব আড্ডা তো চলছিলই, সেইসঙ্গে নীরবে বই সংগ্রহ করছেন পাঠক। ঝুমঝুমি প্রকাশনের স্টলের সামনে গিয়ে দেখা গেল চার থেকে পাঁচজন পাঠক।

এদের মধ্যে দুজন বই কিনলেন। একজন মুক্তি মমতাজ। তার মতে, ছুটির দিনে মেলায় প্রচুর ভিড় থাকে। এই ভিড়ের মধ্যে ভাল করে বই দেখা যায় না। তাছাড়া বিকেলে এমনিতেই লোকজন কম আসে। এই সুযোগটাই তিনি কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানান। মুক্তি মমতাজের মতো আপনিও নীরবে বই দেখতে ও সংগ্রহ করতে চাইলে, হ্যাঁ, আগে আগে ঢুকে পড়তে পারেন মেলায়।
১২১ নতুন বই ॥ মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বইয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে এদিন জমা পড়েছে নতুন ১২১টি বই।
নির্বাচিত বই ॥ অসংখ্য বই থেকে কিছু বইকে আমরা আলাদা করার চেষ্টা করি। সে অনুযায়ী, নির্বাচিত চারটি বইয়ের কথা আজ বলা যাক।
রক্তাক্ত দিনগুলো ॥  এম সাখাওয়াত হোসেনের বই। হ্যাঁ, তিনি কিছুকাল আগে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তারও আগে তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলী খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অভ্যুত্থান, পালটা অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পালাবদল- আরও নানা ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়েছেন তিনি। বইয়ে ’৭৫ থেকে ’৮১ সাল। এ সময়ের ঘটনাপ্রবাহ। নিজের দেখা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরেছেন এম সাখাওয়াত। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা। ২৩২ পাতার বই। মূল্য ৫২০ টাকা।
মৌর্য সম্রাট প্রিয়দর্শী অশোক ॥  জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়ার বই। প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সম্রাট অশোককে এ বইতে তুলে ধরার চেষ্টা। এতে অশোকের জীবন, ইতিহাস, রাজ্য শাসন, শিল্পকলা ও জ্ঞান চর্চা, ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।  অশোকের নানা শিলালিপির পরিচয়, মানচিত্র ইত্যাদিও যুক্ত করা হয়েছে।  কথা প্রকাশ থেকে বের হওয়া ৭০ পৃষ্ঠার বইয়ের মূল্য ২০০ টাকা।
পদ্রো পারামো ॥  লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের আলোচিত নাম হুয়ান রুলফো। লেখকের একমাত্র উপন্যাস পেদ্রো পারামো। স্পেনিশ থেকে এর অনুবাদ করেছেন আনিসুজ জামান। প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ।
ফুল ও নজরুল ॥ লেখক শান্তনু কায়সার। বইতে দ্রোহ ও প্রেমের কবির রচনায় ফুলের অনুষঙ্গ খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। ব্যতিক্রম প্রয়াস বৈকি। নজরুলের কবিতা-গান-কথাসাহিত্য-নাটক-শিশুসাহিত্য-প্রবন্ধ ও পত্রে ফুলের সুরভিত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সেই সঙ্গে তাঁর পুষ্পপ্রতিম মহাজীবনে ফুলের কাঁটার ব্যথাও অনুল্লেখিত থাকেনি। ঐতিহ্য প্রকাশিত বইয়ের মূল্য ২০০ টাকা।
এঁটে দিই দেহের বোতাম। নাসরীন জাহান মূলত কথাশিল্পী। তার উপন্যাসের পাঠক অনেক আছে। সেই সঙ্গে তিনি কবিও। কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ আছে। সেগুলোর সঙ্গে এবার যুক্ত হলো ‘এঁটে দিই দেহের বোতাম।’ প্রকাশ করেছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী।
লেখক বলছি ॥ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোজাম্মেল হক নিয়োগী, রহীম শাহ, সত্যজিৎ রায় মজুমদার এবং তুষার কবির।
আলোচনা অনুষ্ঠান ॥ বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চের আলোচনায় স্মরণ  করা হয় কাজী রোজী এবং দিলারা হাশেমকে। বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনা করেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান এবং শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অসীম সাহা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন মেলার মূল মঞ্চে কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, ফারুক মাহমুদ এবং আতাহার খান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম এবং অনন্যা লাবনী। এছাড়া ছিল ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, আবুবকর সিদ্দিক,
বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, রহিমা খাতুন, শান্তা সরকার।

×