
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের নর্থ উডস্টক শহরে তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে বরফের মধ্যে খেলছে শিশু
ভয়াবহ ঠান্ডা ও শক্তিশালী বাতাসে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং কানাডার একাংশের জনজীবন থমকে গেছে। শনিবার রাতে নিউ হ্যাম্পশায়ারের মাউন্ট ওয়াশিংটনে রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে আর কোথাও এত মারাত্মক ঠান্ডা অনুভূত হয়নি। ম্যাসাচুসেটসের সাউথকিকের হ্যাম্পডেন জেলায় ধেয়ে আসা বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে গাড়িতে থাকা এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া গাড়িটির চালকও গুরুতর আহত হন। তীব্র ঠান্ডায় শুক্রবারই সরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। বোস্টনের তাপমাত্রা শনিবার মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে, যা শত বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সে পারদও মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে, ১৯১৮ সালে শহরটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৯ ডিগ্রি। খবর বিবিসি ও এএফপির।
কানাডার পূর্বাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা আর্কটিকের বাতাস নিউইয়র্কের আলবেনি, মাইনের অগাস্টা, নিউইয়র্কের রচেস্টার, ম্যাসাচুসেটসের ওরচেস্টারসহ অনেক এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড গড়েছে। মেইন স্টেটের গ্রে শহরের এক সরকারি অফিস থেকে শনিবার বলা হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন বায়ু-শীতল তাপমাত্রার রেকর্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের এক ওয়েদার চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, মাউন্ট ওয়াশিংটনে আগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে ২০০৪ সালে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। প্রায় ৬, ৩০০ ফুট (১, ৯২০ মিটার) উচ্চতার মাউন্ট ওয়াশিংটন হলো উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শিখর এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ আবহাওয়ার জন্য পরিচিত।
মাইনাস ৪৩ সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং একই সঙ্গে ঘণ্টায় ১১০ মাইল বেগে বাতাস বইছে। এতে এই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
মেইনের ক্যারিবু এনডব্লিউএস অফিস জানিয়েছে, কানাডা সীমান্তের ঠিক দক্ষিণে ছোট শহর ফ্রেঞ্চভিলে মাইনাস ৫১ সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অফিস বলেছে, তারা এই অঞ্চলে ‘তুষারপাতের’ রিপোর্ট পেয়েছে, যাকে ‘ক্রায়োসিজম’ (বা তুষার কম্পন) বলা হয়। এনডব্লিউএস অফিস টুইটারে লিখেছে, ‘ভূমিকম্পের মতোই (তারা) কম্পন সৃষ্টি করে, বজ্রপাতের সংবেদন তৈরি করে। এটি খুব ঠান্ডা হলে হিমায়িত মাটি বা ভূগর্ভস্থ জলে হঠাৎ ফাটল সৃষ্টি করে।’
পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাসিন্দাদের সহযোগিতা করতে উষ্ণতা কেন্দ্র খোলা, গৃহহীনদের নৃশংস ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে একাধিক শহর।
নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের মধ্যে গৃহহীনদের সেবা দেওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বোস্টনের পাইন স্ট্রিট ইনে শুক্র ও শনিবার রাস্তায় প্রচার চালানো ভ্যানের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। শহরটির প্রধান রেল টার্মিনাল সাউথ স্টেশনকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র বিবেচনায় নিয়ে সেটি সারারাত খোলা রাখার নির্দেশ দেন ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর মোরা হিলি। তবে এই প্রবল ঠান্ডা বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।