ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দ্রোহের প্রতীকী জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু কাল 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

দ্রোহের প্রতীকী জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু কাল 

শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল জাতীয় কবিতা উৎসব

শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল জাতীয় কবিতা উৎসব। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দেওয়া সেই উৎসবটি পরবর্তীতে সরব থাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা সংকটে। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যয়ে প্রতিবছর বিভিন্ন মর্মবাণী ধারণ করে অনুষ্ঠিত হয়েছে কবিদের দ্রোহের প্রতীকী এই উৎসব। মহামারির কারণে মাঝে দুই বছরের বিরতি ভেঙে কাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যাালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৫তম উৎসবটি।

 এবারের উৎসবের স্লোগান ‘বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’। জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী উৎসবে অংশ নেবেন সারাদেশের নানা প্রান্তের কবিরা। বাংলাদেশের পাশাপাশি এবার অংশ নেবেন ভারত, ভুটান ও নেপালের আমন্ত্রিত কবিরা। দুইদিনের উৎসবে স্বরচিত কবিতাপাঠের
সঙ্গে থাকবে নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনা। এ বছরের উৎসব স্লোগান ও উৎসব সংগীত লিখেছেন কবি মুহাম্মদ সামাদ। 
৩৫তম জাতীয় কবিতা উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ, সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত ও উৎসব আহ্বায়ক শিহাব সরকার। উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন কবিতা নির্বাচন উপ-পরিষদের আহ্বায়ক আমিনুর রহমান সুলতান। উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক উপ-পরিষদের আহ্বায়ক দিলারা হাফিজ ও আসলাম সানী।  
মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সামরিক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জাতীয় কবিতা উৎসবের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই এ উৎসবের নেপথ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সূচনালগ্ন থেকেই দলমত নির্বিশেষে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধারণ করে এ উৎসবের মূল বিষয় হয়েছে মানুষ। এ কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কবিতা উৎসবে শুধুমাত্র কবি ও কবিতার সম্মিলন ঘটলেও এ উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে সাধারণ মানুষ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে এবারের উৎসবের বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভালোবাসা জানানো হবে।

তারিক সুজাত বলেন, এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা অব্যাহতভাবে স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কথা বলে এসেছি। কবিদের দ্রোহের স্ফুলিঙ্গ থেকে জন্ম নেওয়া এ উৎসব কালের পরিক্রমায় জাতীয় থকে আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক অনন্য আয়োজন হিসেবে সারাবিশ্বে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে। গত ৩৪টি আয়োজনে বিভিন্ন দেশ ও ভাষার কবিরা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্যাতিত মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। এ কারণেই প্রতিটি উৎসবে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার কবিতানুরাগী শ্রোতার অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে পৃথিবীতে তার নজির বিরল। 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার সকাল দশটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে উৎসব উদ্বোধন করবেন দেশবরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ২০২১ সাালের ৩৪তম উৎসবের জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদার হাতে। এদিন সন্ধ্যায় ২০২৩ সালের জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারজয়ী কবির নাম ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে এবারের  উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশের ৩০০ কবি নিবন্ধন করেছেন। বাংলাদেশের বাইরে এবার অতিথি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন ভারত, ভুটান ও নেপালের কবিরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের দিল্লির কবি অরুণ কমল, মুম্বাইয়ের মৃদুল দাশগুপ্ত, বিথী চট্টোপাধ্যায়, কাজল চক্রবর্তী, সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য, অনুভব তুলাসি, আগরতলার রাতুল দেব বর্মণ ও কলকাতার আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র।   ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের বিবেচনায় এবার উৎসব আঙিনায় অংশগ্রহণকারী কবি ও শ্রোতাদের জন্য থাকবে ফ্রি ওয়াইফাই জোন। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের যে কেউ যুক্ত থাকতে পারবেন উৎসবের সঙ্গে।

×