ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

বর্ণিল আয়োজনে চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

বর্ণিল আয়োজনে চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কার জয়ী নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীসহ কলাকুশলীরা

সিনেমা দেখার দারুণ এক আয়োজন হয়ে গেল রাজধানীতে। সিনেমাপ্রেমীরা ৯ দিন ধরে দেখলেন দেশ-বিদেশের বিবিধ বিষয়ের চলচ্চিত্র। সব মিলিয়ে এক উৎসবে প্রদর্শিত হলো ৭১ দেশের ২৫২ চলচ্চিত্র। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ৯ দিনব্যাপী একবিংশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিন ছিল রবিবার। উৎসবে প্রদর্শিত বিভিন্ন শাখার চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে সেরা নির্মাতা, সিনেমাটোগ্রাফার, অভিনয়শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করা হয় সমাপনী অনুষ্ঠানে। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে বর্ণিল আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৈচিত্র্যময় নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
উৎসবের বাংলাদেশ প্যানোরোমা বিভাগে ফিপ্রেসি জুরি কর্তৃক সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে নিয়েছে কাজী আরেফিন আহমেদ নির্মিত ছবি ‘কুড ইউ বি ফ্রি ইয়েট লকড ইন?’ পুরস্কারের সম্মানী হিসেবে এই ছবির নির্মাতার হাতে আড়াই লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। একই বিভাগে দেড় লাখ টাকা মূল্যমানের প্রথম রানার আপের পুরস্কার পেয়েছে জয়তু সুশীল জিকু নির্মিত ছবি ‘হাঘোর’। এক লাখ টাকা মূল্যমানের দ্বিতীয় রানার আপের পুরস্কার জয় করেছে মৃত্তিকা রাশেদ নির্মিত ছবি ‘কৃষ্ণপক্ষ’। আর এই বিভাগের সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করেছে খন্দকার সুমন নির্মিত ছবি ‘সাতাও’। সেরা শিশুতোষ চলচ্চিত্র হিসেবে বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে চেক প্রজাতন্ত্রের পিটার ওকারপেক নির্মিত ছবি ‘মার্টিন অ্যান্ড দ্য ম্যাজিকাল ফরেস্ট’। দর্শক রায়ে অডিয়েন্স পুরস্কার পেয়েছে মেজবাউর রহমান সুমন নির্মিত হাওয়া শিরোনামের চলচ্চিত্র।

একই বিভাগে স্পেশাল অডিয়েন্স পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ফাখরুল আরেফিন খান নির্মিত জেকে ১৯৭১ শিরোনামের চলচ্চিত্রকে। স্পিরিচুয়াল চলচ্চিত্র শাখায় সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে রাশিয়ার গালিনা ইভতেশেংকো ও অ্যানা ইভতেশেংকো নির্মিত ছবি ‘মাহাতমা হাফকিন’। এই বিভাগে সেরা ফিকশন ছবির পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের কামরুল আহসান লেনিন নির্মিত ছবি ‘ঘরে ফেরা’। দেশ-বিদেশের নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্রে সজ্জিত উইমেন ফিল্মমেকার বিভাগে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে শ্রীলঙ্কার আনোমা রাজাকারুনা নির্মিত ছবি ‘আওয়ার মাদার, গ্র্যান্ডমাদার, প্রাইম মিনিস্টার : শ্রীমাভো’। এই শাখায় সেরা নির্মাতার পুরস্কার জিতেছেন জার্মানির নির্মাতা ক্যাথরিনা উল। এই শাখায় সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার পুরস্কার জিতেছে গ্রিসের মারিয়া দোজা নির্মিত ছবি ‘লিসেন’।

এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগে দ্য রায়ট শীর্ষক ছবির জন্য সেরা সিনেমাটোগ্রাফির পুরস্কার জিতেছে রাশিয়ার এভগেনি গ্রিগোরেভ। একই বিভাগে দ্য আন্ডারফিল্ড নামের চলচ্চিত্রের জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পেয়েছেন ভারতীয় নির্মাতা অনীক দত্ত। এই বিভাগের ভারতীয় নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু কালেশ নির্মিত হক’স মাফিন নামের ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন কেতকী নারায়ণ। একই বিভাগে জাপানের নাওকি মায়েদা নির্মিত ম্যারেজ কাউন্সেলর শীর্ষক চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন ইকেই ওয়াতানাবে। এই বিভাগে লাইফ অ্যান্ড লাইফ নামের ছবির জন্য সেরা নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন ইরানের আলী ঘাভিতান। এ ছাড়া এই বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে ইরানি নির্মাতা সায়েদ মোর্তজা ফাতেমি নির্মিত সিনেমা ‘বি-মাদার’।
উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান ও ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান কিশওয়ার কামাল। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী বলেন, এ ধরনের উৎসবের মাধ্যমে প্রাচ্যের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা চলচ্চিত্রের মেলবন্ধন ঘটে। আর এই সম্মিলনে সমৃদ্ধ হয় দেশের চলচ্চিত্র শিল্প। দেশের নির্মাতারা বহির্বিশ্বের নির্মাতাদের সঙ্গে ভাবনার বিনিময় করতে পারেন। ভাবনার বিনিময়ের পাশাপাশি দেশের নির্মাতা ভিনদেশী নির্মাতাদের কাছ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের নানা কৌশল রপ্ত করার সুযোগ পান। তাই দেশজ চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশের এ ধরনের উৎসব বিশেষ গুরুত্ববহ।
সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার আলম জানান, আগামী বছরের জানুয়ারিতে ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।  
পুরস্কার প্রদান শেষে সাতাও চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। এর আগে উদ্বোধনী পর্বে ফিফা চাকমার পরিচালনায় বৈসাবি ও সাংগ্রাই শীর্ষক মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করে মারমা নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরা। ¯œাতা শাহরিনের নির্দেশনায় নয়নজুড়ানো একটি নৃত্যালেখ্য উপস্থাপন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা।