ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারিয়ে ফের স্ত্রীকে বিয়ে করলেন

প্রকাশিত: ১৪:২০, ৫ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৪:২৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারিয়ে ফের স্ত্রীকে বিয়ে করলেন

রিং পড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতীকী ছবি

আবার বছর কুড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা হয় যদি! গত অগস্টে ৫৪ বছরের ক্রিস্টিকে বিবাহপ্রস্তাব দিয়েছিলেন ৫৮ বছর বয়সের অ্যান্ড্রু ম্যাকেঞ্জি। নর্থ ক্যারোলাইনার সমুদ্রতটে তখন মহাসাগর আছাড়িপিছাড়ি। ৩৭ বছরের বিবাহিত জীবনের পরে, সম্মতিবাক্যের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন ক্রিস্টি। আরও একবার।

এই দৃশ্যের শুরুটা একটা অঘটন থেকে। গত জুনের কথা। ত্রিশোর্ধ্ব দুই মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার পিতৃদিবসের অনুষ্ঠানে এক জায়গায় হয়েছিল। ক্রিস্টির মনে আছে, বাড়ি ফিরবেন। অ্যান্ড্রুর মোটরবাইকের পেছনে বসে মুখ ঘুরিয়ে নাতি-নাতনির উদ্দেশে হাত নাড়ছেন। তার পরেই দুর্ঘটনা!

লালবাতি উপেক্ষা করে ছুটে আসা একটি গাড়ি সেদিন আছড়ে পড়েছিল তাদের মোটরবাইকে। সেই গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে ৬০ ফুট দূরে গিয়ে পড়েন ভার্জিনিয়ার ওই দম্পতি। অ্যান্ড্রুর ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যায়। ভেঙেছিল শরীরের অনেক হাড়। গুরুতর জখম হন ক্রিস্টিও।

দুর্ঘটনার পরে আকাশ পথে অ্যান্ড্রুকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল হাসপাতালে। জীবনদায়ী অস্ত্রোপচারের পরে, তিন দিন পার করে যখন তার চেতনা ফেরে, হন্যে হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘আমার স্ত্রী কই? আমার স্ত্রী কোথায়?’

কিন্তু নার্স ভেবে যাঁদের কাছে সে কথা জানতে চেয়েছিলেন, তারা দু’জন আসলে উৎকণ্ঠ অপেক্ষায় থাকা তারই দুই মেয়ে। লোরেলাই মেন্টজার আর অ্যামান্ডা ম্যাকেঞ্জি। চিনতে পারেননি। জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন সাল চলছে? অ্যান্ড্রু বলেন ১৯৯৩!

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অ্যান্ড্রু বলেছেন, ‘প্রথমেই আমার যেটা মনে পড়েছিল, সেটা হল, পাশেই ক্রিস্টি একটা হুইল চেয়ারে। আমার জন্য চিন্তা করছে। ছটফট করছে কিছু করতে চেয়ে।’ একই হাসপাতালেই ভর্তি ক্রিস্টির আর্জিতে দু’জনকে পাশাপাশি রাখা হয়। মেয়েদের উদ্দেশে দরজায় ঝোলে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ লেখা চিরকুট।

ক্রিস্টি তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কত প্রশ্ন করছিল। আমার চোখে জল চলে আসছিল বার বার। পরের চব্বিশটা ঘণ্টার মধ্যে ও যেন পুরো নতুন একটা মানুষ হয়ে উঠল।’ টানা এগারো দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন অ্যান্ড্রু-ক্রিস্টি।

১৯৮৫ সালে বিয়ে করেছিলেন স্কুলছাত্রী ক্রিস্টি আর সদ্য সেনার চাকরি পাওয়া অ্যান্ড্রু। তার পরে দু’জনে একসঙ্গে নানা চড়াই-উতরাই পার করেছেন। ২০১৬ সালে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন অ্যান্ড্রু। ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মৃত্যুকে প্রায় ছুঁয়ে এসেছেন- দুর্ঘটনায় খুইয়েছেন অর্ধেক জীবনের স্মতি। তারপরে, গত অগস্টে সৈকতে ছুটি কাটাতে গিয়ে সেই স্ত্রীকে দিয়েছেন নবসংসার পাতার পুনর্প্রস্তাব। কিছু দিনের মধ্যেই জামাইদের আয়োজনে আরও একবার বিয়েও হয়েছে তাদের।

সদ্যবিবাহিত অ্যান্ড্রুর পুরনো স্মৃতি আজও অধরা। কিন্তু কোটি মন্বন্তরেও অবিস্মরণীয় কোনো বিশ্বাস থেকেই যেন সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ওই দিন হ্যাঁ বলতে কোনো সময়ই নেয়নি ক্রিস্টি। ৩৭ না কত একটা বছরের বিবাহিত জীবন যেন আমাদের, তাতেই লাভ হয়েছিল হয়তো!’

 

এমএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×