
বদ্ধ পানিতে শাপলা শালুকের ছড়াছড়ি
সোনাকান্ত বিল বা পদ্মবিল যারা যে নামেই ডাকুক না কেন, বিলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মফুল। বিলের বদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। সারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। এক সময় হাটে পদ্মপাতায় লবণ, মাছ, খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হতো। পদ্মপাতায় মেজবানিও খাওয়ানো হতো।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মানতলা, সোনাকান্ত বা পদ্মবিলে চারপাশে পদ্মফুলে ভরে গেছে। যত দূর চোখ যায়- সাদার সংমিশ্রণে গোলাপি রঙের আভা। সূর্যের আলোয় এ রং যেন আরও ঝলমলে হয়ে ওঠে। পদ্মের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসছেন বিলে। চোখ ভরে দেখছেন, স্মৃতি রাখতে ছবিও তুলছেন। তবে বিলে যাতায়াতে নৌকা এবং রাস্তার না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জানালেন- কয়েক দর্শনার্থী।
উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের বাঘলপুর মৌজায় অবস্থিত বিস্তৃীর্ণ বিলজুড়ে সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মফুল ফুটেছে। মানতলা নামে পরিচিত এ বিলের উত্তর-পশ্চিমে চর কয়ড়া, দক্ষিণে বাঘলপুর ও পূর্বে রয়েছে ভদ্রকোল গ্রাম। এ বিলের বদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটেছে বিলটিতে। সারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। তবে প্রতিদিন শত শত ফুল ছিঁড়ে নিয়ে বিলটির সৌন্দর্য নষ্ট করছেন অনেকেই। একটি ফুল তুলতে গিয়ে নষ্ট করছেন কয়েকটি ফুল।
দর্শনার্থী বেলাল হোসেন, সিদ্দিক শেখ,নাজমুল হক বলেন, বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি, খুবই ভাল লাগছে। এই বিলে প্রবেশের জন্য নৌকার ব্যবস্থা এবং রাস্তা নেই। তবে নৌকা থাকলে দর্শনার্থীরা ফুলের কাছে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারত। ‘পাশাপাশি স্থানীয়রাও নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারত।
এখন লোকজন হেঁটেই বিলে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখে ফিরে আসছে। এতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।’ পদ্মফুল ফোটার সময়কালে বিলের সৌন্দর্য রক্ষা করা গেলে দর্শনার্থীরা আরও বেশি উপভোগ করতে পারতেন বলে মনে করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, তাদের কাছে হাটিকুমরুলের আমডাঙ্গার বিল ‘সোনাকান্ত বিল নামেই পরিচিত। তবে অনেক প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি ‘আমডাঙ্গার পদ্মবিল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গত ২ বছর ধরে বর্ষাকালে এ বিলে গোলাপি রঙের অসংখ্য পদ্মফুল ফোটে। তবে পদ্মফুল সারা বছর থাকে না। বর্ষাকালেই শুধু দেখা যায়।
পাঁচলিয়া গ্রামের রশিদ মিয়া বলেন, ‘আমি গত ২ বছর হলো এই বিলে পদ্ম ফুটতে দেখছি। এটাকে অনেকে সোনাকান্ত বিল বলে, আমরা বলি ‘পদ্মবিল’। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী অনেক লোকজন বেড়াতে আসে, ছবি তোলে। অনেকে আবার পদ্মফুল ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন একই এলাকার নাসিম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পদ্মফুলের কাছে যাওয়া মাত্রই স্থানীয়রা ফুল না ছেঁড়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু যখন কেউ থাকে না, তখন দর্শনার্থীদের অনেকে যে যার মতো ফুল ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলে। এ বিষয়টা খুবই খারাপ লাগে।
‘একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান সময় বিল জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্মফুল বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। পদ্মফুলের অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে।’
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন বলেন, জলজ উদ্ভিদ পদ্ম স্কন্দের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ গাছটিও বাড়তে থাকে। একটি গাছে একটি ফুল ফোটে। এটি সাদা, গোলাপি ও নীল রঙের হয়। ফুটন্ত ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। রাত থেকে সকালের মধ্যে ফুল ফোটে। আর রোদের তীব্রতায় সঙ্কুচিত হয়।
রোদ কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়। প্রতিবছর বর্ষায় বিভিন্ন বিলে পদ্মফুলের দেখা মেলে। এই পদ্মফুলে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। কৃষি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার কমে যাওয়াতে বিলে শাপলা, পদ্মফুলের দেখা যাচ্ছে।