ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

বদ্ধ পানিতে শাপলা শালুকের ছড়াছড়ি

সাদা আর গোলাপি ফুলে ছেয়ে গেছে পদ্মবিল

বাবু ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১৬ আগস্ট ২০২২

সাদা আর গোলাপি ফুলে ছেয়ে গেছে পদ্মবিল

বদ্ধ পানিতে শাপলা শালুকের ছড়াছড়ি

সোনাকান্ত বিল বা পদ্মবিল যারা যে নামেই ডাকুক না কেন, বিলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মফুলবিলের বদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়িসারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের মুগ্ধ করছেএমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরাষড়ঋতুর বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি নতুন রূপে সাজেএক সময় হাটে পদ্মপাতায় লবণ, মাছ, খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হতোপদ্মপাতায় মেজবানিও খাওয়ানো হতো

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মানতলা, সোনাকান্ত বা পদ্মবিলে চারপাশে পদ্মফুলে ভরে গেছেযত দূর চোখ যায়- সাদার সংমিশ্রণে গোলাপি রঙের আভাসূর্যের আলোয় এ রং যেন আরও ঝলমলে হয়ে ওঠেপদ্মের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসছেন বিলেচোখ ভরে দেখছেন, স্মৃতি রাখতে ছবিও তুলছেনতবে বিলে যাতায়াতে নৌকা এবং রাস্তার না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে  জানালেন- কয়েক দর্শনার্থী

উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের বাঘলপুর মৌজায় অবস্থিত বিস্তৃীর্ণ বিলজুড়ে সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মফুল ফুটেছেমানতলা নামে পরিচিত এ বিলের উত্তর-পশ্চিমে চর কয়ড়া, দক্ষিণে বাঘলপুর ও পূর্বে রয়েছে ভদ্রকোল গ্রামএ বিলের বদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়িহাজার হাজার পদ্মফুল ফুটেছে বিলটিতেসারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের মুগ্ধ করছেতবে প্রতিদিন শত শত ফুল ছিঁড়ে নিয়ে বিলটির সৌন্দর্য নষ্ট করছেন অনেকেইএকটি ফুল তুলতে গিয়ে নষ্ট করছেন কয়েকটি ফুল

দর্শনার্থী বেলাল হোসেন, সিদ্দিক শেখ,নাজমুল হক বলেন, বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি, খুবই ভাল লাগছেএই বিলে প্রবেশের জন্য নৌকার ব্যবস্থা এবং রাস্তা নেইতবে নৌকা থাকলে দর্শনার্থীরা ফুলের কাছে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতপাশাপাশি স্থানীয়রাও নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারত

এখন লোকজন হেঁটেই বিলে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখে ফিরে আসছেএতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছেপদ্মফুল ফোটার সময়কালে বিলের সৌন্দর্য রক্ষা করা গেলে দর্শনার্থীরা আরও বেশি উপভোগ করতে পারতেন বলে মনে করা হয়

স্থানীয়রা জানান, তাদের কাছে হাটিকুমরুলের আমডাঙ্গার বিল সোনাকান্ত বিল নামেই পরিচিততবে অনেক প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি আমডাঙ্গার পদ্মবিল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেগত ২ বছর ধরে বর্ষাকালে এ বিলে গোলাপি রঙের অসংখ্য পদ্মফুল ফোটেতবে পদ্মফুল সারা বছর থাকে নাবর্ষাকালেই শুধু দেখা যায়

পাঁচলিয়া গ্রামের রশিদ মিয়া বলেন, ‘আমি গত ২ বছর হলো এই বিলে পদ্ম ফুটতে দেখছিএটাকে অনেকে সোনাকান্ত বিল বলে, আমরা বলি পদ্মবিলএখানে প্রকৃতিপ্রেমী অনেক লোকজন বেড়াতে আসে, ছবি তোলেঅনেকে আবার পদ্মফুল ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন একই এলাকার নাসিম আহমেদতিনি বলেন, ‘পদ্মফুলের কাছে যাওয়া মাত্রই স্থানীয়রা ফুল না ছেঁড়ার জন্য অনুরোধ করেনকিন্তু যখন কেউ থাকে না, তখন দর্শনার্থীদের অনেকে যে যার মতো ফুল ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলেএ বিষয়টা খুবই খারাপ লাগে

একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেতকিন্তু বর্তমান সময় বিল জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্মফুল বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছেপদ্মফুলের অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন বলেন, জলজ উদ্ভিদ পদ্ম স্কন্দের মাধ্যমে বংশবিস্তার করেপানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ গাছটিও বাড়তে থাকেএকটি গাছে একটি ফুল ফোটেএটি সাদা, গোলাপি ও নীল রঙের হয়ফুটন্ত ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকেরাত থেকে সকালের মধ্যে ফুল ফোটেআর রোদের তীব্রতায় সঙ্কুচিত হয়

রোদ কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়প্রতিবছর বর্ষায় বিভিন্ন বিলে পদ্মফুলের দেখা মেলেএই পদ্মফুলে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছেকৃষি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার কমে যাওয়াতে বিলে শাপলা, পদ্মফুলের দেখা যাচ্ছে

×