
বগুড়ার ফতেহ্ আলী ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে
প্রায় চার বছর হয় প্রাণহীন পড়ে থাকা করতোয়া নদীর ওপর সেতুটিকে শেষ পর্যন্ত প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার পালা শুরু হয়েছে। বগুড়া শহরের সঙ্গে পূর্ব বগুড়ার সংযোগের ব্রিজটির সুখবর হলো- ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ হয়ে নকশা অনুমোদিত হয়েছে। আশা করা হয়েছে বর্ষা মৌসুম সরে গেলেই ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণ শুরু হবে। নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা হবে। পুনর্নির্মাণের সময়টুকু সাধারণ মানুষের কিছুটা অসুবিধা সইতে হবে। বিকল্প পথে পূর্ব বগুড়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনে করতোয়া নদীর দুই প্রান্তে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা থাকবে।
বগুড়া শহরের ফতেহ্ আলী (র) মাজারের কাছে শহরেরই পূর্ব বগুড়ার সঙ্গে যোগাযোগে করতোয়া নদীর ওপর ষাটের দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত কোন সেতু ছিল না। খেয়া পারাপার ছিল শহরের বিচ্ছিন্ন দুই এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র বাহন। পূর্ব বগুড়া এলাকাটি হলো চেলোপাড়া, সাবগ্রাম নারুলী। এই পথ ধরেই বগুড়ার গাবতলী সারিয়াকান্দি সোনাতলা উপজেলার সংযোগ। ১৯৬৪ সালে করতোয়া নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ফতেহ্ আলী (র) বাজারের কাছে খেয়া পারাপারের ঢালু অংশ ভরাট করা হয়। এরপর কনস্ট্রাকশন ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে নির্মাণ শেষ হয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর কাছে সমান্তরাল রেল ব্রিজ ব্রিটিশ শাসনামলেই নির্মিত হয়।
লোকমুখে সড়ক সেতুটির নাম হয় ফতেহ্ আলী (র) ব্রিজ)। কেউ বলে করতোয়া ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণের সঙ্গেই শহরের পূর্ব প্রান্তে রাতারাতি পরিবর্তনের পালা শুরু হয়। শহরেরই পূর্বাংশের কাঁচা বাড়িঘর পাকা হতে থাকে। শহরের চাপ কমাতে অনেক লোক চেলোপাড়া এলাকায় সুদূরপ্রসারী ভাবনায় ভূমি কিনতে থাকে। এসব আবাদী ভূমিতে নির্মাণ হয় ঘরবাড়ি। এভাবে শহরের ব্যাপ্তি বেড়ে সম্প্রসারিত হতে থাকে। দোকানপাট ব্যবসা বাণিজ্যের সকল কার্যক্রম শুরু। বগুড়ার পূর্বাঞ্চলের গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা উপজেলার সঙ্গে বাস সার্ভিস চালু হয়। একটি ব্রিজ শহরের পূর্বাংশের ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেয়। চেলোপাড়া নারুলী এলাকাটি পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের স্যাবার জেট যুদ্ধবিমান দিয়ে বোমা মেরে করতোয়া সড়ক সেতু ও করতোয়া রেল সেতু ধ্বংস করে দেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের পালায় এই দুই সেতু পুনর্নির্মিত হয়।
সর্বশেষ সুখবর হলো : চলতি বছর ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের সার্বিক সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সুখবরটি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সওজ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি জানান ৬৮ মিটারেরও বেশি ফতেহ্ আলী (র) বিজটি পুনর্নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে ২২ কোটি টাকা। ব্রিজটির ক্যারেজ ওয়ে (যান চলাচল) চওড়া হবে ২৪ ফুট। দুই ধারে ৮ ফুট করে সাধারণের পায়ে চলার পথ থাকবে।