
রাজধানীতে হঠাৎ করেই মশার উৎপাত বেড়েছে
আট ধরনের নাগরিক সেবার বিষয়ে অভিযোগ ও সমস্যা জানতে গত বছরের জানুয়ারি মাসে ‘সবার ঢাকা’ নামে একটি মোবাইল এ্যাপ চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। আর গত সাত মাসে এই এ্যাপের মাধ্যমে উত্তর সিটি যত অভিযোগ পেয়েছে তার ৬০ শতাংশই মশা সংশ্লিষ্ট। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সবার ঢাকা এ্যাপে সড়ক, মশক, রাস্তার বাতিসহ আটটি নাগরিক সেবার বিষয়ে সর্বমোট ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৪টি অভিযোগ পায় উত্তর সিটি। এর মধ্যে ৭০ হাজার ৩৩৪টি অভিযোগ ছিল শুধু মশা নিয়ে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে কম অভিযোগ পড়েছে গণশৌচাগার নিয়ে, সংখ্যায় ২২টি। তাছাড়া রাস্তার সমস্যার নিয়ে ১০ হাজার ২৩৮টি, আবর্জনার সমস্যা নিয়ে ৩২ হাজার ৭৩৬টি, সড়কবাতি নিয়ে ২ হাজার ৫৯০টি, নর্দমার সমস্যা ৪৯২টি, অবৈধ স্থাপনা সংক্রান্ত ৮৫১ এবং জলাবদ্ধতা নিয়ে ৪৮১টি অভিযোগ পায় ডিএনসিসি।
ডিএনসিসি’র সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ১৬ হাজার ১২১টি অভিযোগের প্রতিকার করা হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯৮ শতাংশ। আর মশা নিয়ে মোট ৬৯ হাজার ৯১৪টি অভিযোগের প্রতিকার করা হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯৯ শতাংশ।
গণশৌচাগার সংক্রান্ত ২২টি অভিযোগের মধ্যে ১১টির সমাধান করা হয়েছে। অপরদিকে অবৈধ স্থাপনার ৬৪৪টি অভিযোগের সমাধান হয়েছে এবং ২০৭টির প্রতিকার করা সম্ভব হয়নি।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, উত্তর সিটিতে ৫৪টি ওয়ার্ড থাকলেও এ্যাপের মাধ্যমে যে অভিযোগ নেয়া হচ্ছে তা মূলত ৩৬টি ওয়ার্ডের নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া।
কারণ ৩৭-৫৪ নম্বর ওয়ার্ডগুলো নতুন, এগুলোতে নাগরিক সুবিধা যেমন সড়ক, নর্দমা, বাতির তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় তাদের অভিযোগ নেয়া হচ্ছে না।
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান জানান, মশার উৎসস্থল, মশার কীটনাশক না ছিটানোরই অভিযোগগুলো বেশি। তিনি বলেন, মশার উৎস যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর ছবিসহ অভিযোগ করা হয়। সেগুলো যখন ধ্বংস করা হয় সেগুলো সমাধান হয়েছে হিসেবে দেখানো হয়। তাতে আমরা নিশ্চিত হতে পারি কতগুলো উৎসস্থল আছে আর কতগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিনই কুকুর নিয়ে অভিযোগ পাই তখন আমরা আমাদের ভেটেরিনারি টিম পাঠাই। এ সমস্যা সমাধান করি। তিনি যোগ করেন, আমরা চাই জনসাধারণ বেশি বেশি করে সমস্যার কথা জানাক, যাতে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।
কিন্তু এই এ্যাপে ৩৭ নম্বর থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত মোট ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাদের অভিযোগ এ্যাপে জানাতে পারছেন না।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা, রাস্তা ভাঙ্গা, সড়কবাতি না থাকা, মশার উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মতো তারা এ্যাপের সাহায্যে অভিযোগ জানাতে পারেন না।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসি গত বছরের ১০ জানুয়ারি নাগরিকদের কাছ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অভিযোগ নিতে ‘সবার ঢাকা’ এ্যাপ চালু করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যেকোন নাগরিক এই এ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
উত্তর সিটির ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম বলেন, নতুন বাজার থেকে ছোলমাঈদ ছাপড়া মসজিদ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা ভাঙ্গাচোরা, নেই ম্যানহোলের ঢাকনা, নেই ফুটপাথ, নর্দমার ময়লা জমা করে রাখা হয় রাস্তায়। আমি রাস্তার একটি অংশের ছবি তুলে ও সমস্যার বিবরণ লিখলেও সেটা আর সাবমিট করা যায়নি। টিভিতে শুনেছি এ্যাপে অভিযোগ করলে সমাধান পাওয়া যায়, কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করে অভিযোগ দাখিলই করতে পারিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তারা জানা নেই। তবে এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোঃ সেলিম। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় তো রাস্তাঘাটের উন্নয়নই হয়নি, অভিযোগ দেবে কী?
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটির এক কর্মকর্তা বলেন, এই ১৮টি ওয়ার্ড ২০১৬ সালে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগ হয়। এসব ওয়ার্ডে সেবা প্রদানকারী কর্মচারীও নিয়োগ করা হয়নি। তাই এই সেবার বিষয়ে অভিযোগ নেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এসব ওয়ার্ডের সবই সমস্যা। এ্যাপে মূলত ছোট ভাঙ্গাচোরা, পানি জমে থাকা, রাস্তা দখল এসব এমন অভিযোগ নেয়া হয়। নতুন ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প দরকার।