
রফিকুল আলম
চলছে বেদনার জলে ভেজা আগস্ট মাস। আর শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে ‘শোক থেকে শক্তির অভ্যুদয়, স্বপ্নপূরণের দৃঢ় প্রত্যয়’ শিরোনামে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। বুধবার ছিল আয়োজনের তৃতীয়। এদিন একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে শিল্পের আলোয় নিবেদন করা হলো জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি নিবেদিত হলো ভালবাসা।
প্রকাশিত হলো বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতার প্রতি অনুরাগ। সঙ্গে ছিল বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল জীবনের মূল্যায়নধর্মীয় আলোচনা। প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলমের গানের আশ্রয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। চর্চিত কণ্ঠে এই শিল্পী গেয়ে শোনান ‘মুজিবের থেকে পৃথিবীর পর্বতই উঁচু নয়’ শিরোনামে সঙ্গীত। স্বরলিপির কণ্ঠে পরিবেশিত ‘ও গো জাতির পিতা মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান’। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী শুনিয়েছেন ‘আমার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চেতনা নয়নে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গান। চন্দনা মজুমদার গেয়েছেন ‘শুনেছি কানে বজ্রকণ্ঠ দেখেছি মহান নেতা’। সৌমিতা বোস গেয়েছেন ‘ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু ফিরিয়া আসিতে যদি’। রাজিব পরিবেশন করেন ‘যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো’। পান্থ কানাই গেয়েছেন ‘পদ্মার ঢেউরে’। ঝিলিক শুনিয়েছেন ‘শোধ করা যাবে সকলের ঋণ, শুধু শোধ করা যাবে না পিতা’।
মোমিন বিশ্বাস পরিবেশন করেন ‘বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করো’। নিতু বালা পরিবেশন করেন ‘বঙ্গবন্ধুরে আমার প্রাণের বন্ধুরে’। সজীব দাসের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার পূরণ করেছে’। সুস্মিতা সাহা গেয়েছেন ‘একবার তুমি আসিবেই ফিরে এই বাংলার প’রে’। মাটি রহমান শুনিয়েছেন ‘মুজিব আছেন অন্তরে’। নিগার নাঈম তমা শুনিয়েছেন ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই খোকাটার গল্প বলি শোনো’। কৃষ্ণ গোপাল গেয়েছেন ‘নকশি কাঁথার মাঠ পেরিয়ে’। শাহিন গেয়েছেন ‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং দিতি সরকার ‘লোকে বলে বাংলায় যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা’ শিরোনামের সঙ্গীত। শিশু শিল্পী রবিউল ইসলাম শান্তর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘মাগো ভাবনা কেন’ এবং সায়কা নাজিফা বাবনের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আর একটি বার শেখ মুজিবের জনম দে না মা’ শিরোনামের সঙ্গীত।
সঙ্গীতের পাশাপাশি পরিবেশিত হয় কবিতা আবৃত্তি। কবি আনিসুল হকের ‘৩২ নম্বর মেঘের ওপারে’ কবিতা আবৃত্তি করেন আশরাফুল আলম; কবি শামসুর রহমান এর কবিতা ‘যার মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়’ আবৃত্তি করেন ঝর্ণা সরকার এবং কবি মহাদেব সাহার কবিতা ‘আমি কি বলতে পেরেছিলাম’ আবৃত্তি করেন মজুমদার বিপ্লব।
একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং একাডেমির সাবেক সচিব মোঃ আছাদুজ্জামান।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস স্মরণে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘শোক থেকে শক্তি, শক্তি থেকে জাগরণ, জাগরণ থেকে সোনার বাংলা’ শিরোনামে ১০ দিনব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ছিল বুধবার। এদিন বিকেলে অনলাইনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত, মোনায়েম সরকার ও অন্যান্য প্রণীত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (১ম ও ২য় খ-) বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ। বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সূচনা বক্তৃতায় মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধু-চর্চার অন্যতম স্মারক বিশিষ্ট গবেষক মোনায়েম সরকার ও অন্যান্য প্রণীত দুই খ-ের মহাকায় গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি। এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল, বর্ণিল, সংগ্রামী জীবন ও কর্মের প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র এবং তথ্যাবলি অসাধারণ গবেষণা-পদ্ধতিতে তুলে ধরা হয়েছে; যা বঙ্গবন্ধু-গবেষকদের তো বটেই, সাধারণ পাঠকের কাছেও আগ্রহোদ্দীপক বলে পরিগণিত হবে।
ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, গবেষক মোনায়েম সরকার প্রণীত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি গ্রন্থের দুটো খ- বাংলা একাডেমির অসাধারণ প্রকাশনা। এই গ্রন্থের প্রামাণ্যকরণে অংশ নিয়েছেন দেশবরেণ্য সাংবাদিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ভাষাসংগ্রামী এবং গবেষকবৃন্দ। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তাঁকে নিয়ে যে চর্চা ও গবেষণা শুরু হয়েছিল, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নৃশংসতায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর তা আরও বিস্তৃত হয়। তাঁকে দৈহিকভাবে হত্যা করা গেলেও আদর্শিকভাবে তাঁর মতো মহানায়কের কোন মৃত্যু নেই বলেই তিনি বারবার লেখক-গবেষকদের গবেষণার বিষয় হয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আলোচ্য গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু বিষয়ে একাডেমিক গবেষণার উৎসবিন্দু হিসেবে কাজ করে চলেছে। একই সঙ্গে তা বাংলাদেশের রাষ্ট্র-রাজনীতি বিষয়েও নতুন তথ্য ও বিশ্লেষণের আকরগ্রন্থ।
অসীম কুমার দে বলেন, বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধু-চর্চায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি গ্রন্থটির দুটো অসামান্য খ- এরই বলিষ্ঠ সাক্ষ্য।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, লেখক-গবেষক মোনায়েম সরকার এবং তাঁর সহযোগীবৃন্দ দীর্ঘ পরিশ্রম, মেধা এবং অঙ্গীকারকে সঙ্গী করে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক অসাধারণ একটি সংকলনের দুটো খ- প্রণয়ন করেছেন এবং বাংলা একাডেমি তা প্রকাশ করেছে। এই অসাধারণ গ্রন্থের অনুপুঙ্খ পাঠ আমাদের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, বীরত্ব এবং মহত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে।