
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, এই সুযোগকে পুঁজি করেই ব্যবসায়ীদের অসাধুতা, ডিলারদের কারসাজি, সয়াবিন তেলের সঙ্গে বিভিন্ন পণ্যের শর্তজুড়ে দেয়া, যার জন্য চরম মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের কোটি সাধারণ মানুষকে, নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তারা। সাধারণ মানুষের ক্ষুব্ধ মনে উদীয়মান প্রশ্ন একটাই, এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়? দেশের তেলের বাজার বিশেষ করে সয়াবিন তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের কাছে আকাশচুম্বি। বাংলাদেশের সয়াবিন তেলের মূল্য রেকর্ড ভেঙ্গে লিটারপ্রতি ১৯৮ টাকা ধার্য হওয়ার পর থেকেই ভোক্তা পর্যায়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সয়াবিন তেল বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর মধ্যে একটি অপরিহার্য পণ্য। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর পাম ও সয়াবিন মিলিয়ে প্রায় ২২ থেকে ২৫ মেট্রিকটন তেলের চাহিদা রয়েছে, যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ১৬ লাখ টন পাম ওয়েল ও সাড়ে ৮ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করে। অর্থাৎ সয়াবিন তেলের দ্বিগুণ পাম অয়েল আমদানি করে। যার একটা বড় অংশই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৭৪ কোটি ডলারের ৯ লাখ টন পাম অয়েল আমদানি করে ইন্দোনেশিয়া থেকে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া পাম তেলে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকেই এর ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজ। এর কারণ হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, ফলে দেশেও বাড়বে এই আশায় অনেক ব্যবসায়ী তেল বাজারে ছাড়ছেন না অতিরিক্ত মূল্য পাওয়ার লোভে। যার ফলশ্রুতিতে দেশীয় তেলের বাজারে এই কৃত্রিম সঙ্কট। রাজধানীর বাজারগুলোতে তল্লাশি চালানোর পর ধরা পড়েছে ব্যবসায়ীদের তেল নিয়ে ‘তেলেসমাতিকা-’। একদিকে বাজারে তেলের তীব্র সঙ্কট, অন্যদিকে অভিযানে প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে হাজার হাজার লিটার তেল। এই অসাধুতার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের মানুষদের। ভোগান্তিতে পড়ছেন দেশের কোটি সাধারণ মানুষ। কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। তার জন্য প্রয়োজন আইনের যথার্থ প্রয়োগ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সচেতনতা, সুষ্ঠু তদারকি এবং যারা তেলের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে যে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও উচিত দেশের এই প্রতিকূল অবস্থায় সরকারের সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা, প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে মানুষদের অক্লান্ত শ্রমে তৈরি সরিষার তেলের ব্যবহার। এ তেলের ব্যবহার বাড়ানো এবং পাশাপাশি সরিষার জোগান বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে