ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মের জারুল

বেগুনি রঙের নমনীয় ফুল

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২৫ মে ২০২২

বেগুনি রঙের নমনীয় ফুল

মোরসালিন মিজান ॥ গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে, আহা, কত ফুল যে ফোটে আছে! একটির কথা হলো, অন্যটিকে ভুলে থাকলাম, না, সেটি সম্ভব হয় নয়। কারণ একই সময়ে ফুটলেও একেকটি ফুল একেক রকমের সৌন্দর্য নিয়ে সামনে আসে। এই যেমন জারুল, জারুলের কথাই আজ না হয় বলি। ঠিক বাগানের ফুল এটি নয়। খোলা জায়গায় পার্কে উদ্যানে রাস্তায় বা ঝিল পাড়ে সারি গাছ লাগানো থাকে। সব গাছে ফুল। এত ফুল যে, পাতা পর্যন্ত দেখা যায় না। বেগুনি রঙের জারুল ফুলের পাপড়ি একটু বেশিই নরম। নমনীয় স্বভাবের। সামান্য বাতাসে তাই চমৎকার দোলে। ফুলের দিকে সাধারণ পথিক যেমন মুগ্ধ চোখে তাকান, তেমনি যুগ যুগ ধরে বিমোহিত হয়ে আসছেন কবি সাহিত্যিকরা। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ:/সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;/সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল...।’ বর্তমানে সারাদেশেই ফুলটি কম বেশি ফোটে আছে। রাজধানীর রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান বলধা গার্ডেন ঘুরে জারুল দেখতে পারেন। বাইরেও আছে। হাতিরঝিলসহ অপেক্ষাকৃত নতুন রাস্তার ধারে কিছুকাল আগে পরিকল্পনা করে অনেক গাছ লাগানো হয়েছিল। সেগুলো এখন ফুলের রাজ্য! হোটেল সোনারগাঁও মোড় থেকে বাংলা মোটর মোড়ে যাওয়ার আগে হাতের বাম পাশে যে রাস্তাটি ঝিলের সঙ্গে এঁকে-বেঁকে এগিয়ে গেছে, তার ধারে অনেকগুলো জারুল গাছ। একটু দূরে দূরে লাগানো গাছে ফুল আর ফুল শুধু। বেশ উঁচুতে ফোটা ফুল মৃদু হাওয়ায় যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। এক গাছে তো বটেই, এক ডালে অনেক ফুল। কখনও কখনও ছোট ছোট পাখিরা এসে গাছে বসছে। ফুলের সঙ্গে, দেখে মনে হয়, খেলছে ওরা। জারুল দিয়ে নিজের ডালা সাজিয়েছে প্রকৃতি। কবি আহসান হাবীবের ভাষায় : ‘এই ছবিটা চেনা।/মনের মধ্যে যখন খুশি/এই ছবিটা আঁকি/এক পাশে তার জারুল গাছে/দুটি হলুদ পাখি।’ জারুলের বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। সুইডেনের বৃক্ষপ্রেমী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে নেয়া হয়েছে ‘ল্যাজারস্ট্রমিয়া’। আর স্পেসিওজা ল্যাটিন শব্দ। এর মানে, সুন্দর। সুন্দর এই ফুলের তিনটি প্রজাতি আছে ঢাকায়। জারুল, বিলেতি জারুল ও ছোট জারুল। জাত পাত চেনা সাধারণ ফুলপ্রেমীদের জন্য মুশকিলের বটে। আরও সমস্যায় পড়তে হয় জ্যাকারান্ডার কথা জানা থাকলে। জারুল এবং জ্যাকারান্ডার মাঝে অনেক মিল। একটির সঙ্গে অন্যটিকে অনেকে গুলিয়ে ফেলেন। চেনার জন্য বলি, জারুল মাঝারি আকারের গাছ। পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কা-। শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকে। জারুল গাছ ১০-১৫ মিটার উঁচু হয়। পাপড়ি থাকে ছয়টি। ফুল ২-২.৫ ইঞ্চি প্রশস্ত। ৫-৭ সেমি চওড়া। প্রতিটি মুক্ত পাপড়ি ১ ইঞ্চির মতো দীর্ঘ। অনেকগুলো সোনালি পুংকেশর দৃশ্যমান। বেগুনি রঙের পাশাপাশি সাদা রঙের অস্তিত্ব দেখা যায় ফুলে। জীবনানন্দ লিখেছেন, ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ দুপুর চিল একা নদীটির পাশে/জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে। কবিতা থেকে একটি তথ্য আমরা পাই, তথ্য অনুযায়ী, জারুল নিম্নাঞ্চলে ভাল হয়। শুকনো পরিবেশেও বেঁচে থাকে। একই কারণে বেঁচে আছে ঢাকায়। তবে শুধু বেঁচে থাকা নয়, যতেœ থাকুক। কংক্রিটের জঙ্গলে এই যতœ নিশ্চিত করার দায় আমাদের।
×