ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদিতে ইমাম ছিলেন ৩৩ বছর গাড়ি চুরি করে সাজা ভোগের পর দেশে ফিরে গড়েন মোবাইল চোর চক্র

কোরানে হাফেজ হয়েও পেশা চুরি !

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২০ মে ২০২২

কোরানে হাফেজ হয়েও পেশা চুরি !

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাম তার আজিজ মোহাম্মদ (৪৫)। কোরানে হাফেজ। দীর্ঘ ৩৩ বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন নামকরা মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন মালিকের গাড়ি চালকের কাজও করতেন। ড্রাইভিং করতে করতে তার গাড়ি চুরির নেশা হয়। ২০১৫ সালে চুরির মামলায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন পরে মাদ্রাসায় মোবাইল চুরি করে ধরা পড়লে চাকরি চলে যায়। এর পর থেকে রাজধানীতে এসে বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে মোবাইল চুরি করে আসছিলেন। রোজার মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনের সময় স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের মোবাইলটিও চুরি করেছেন আজিজ মোহাম্মদ। ফোনটি উদ্ধার ও আজিজকে গ্রেফতারের পর তার সম্পর্কে এমনটি জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ। এসময় আজিজের সহযোগী রনি হাওলাদার ও জাকির হোসেন নামে মোবাইল চোর চক্রের আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বুধবার তাদের গ্রেফতার করা হয়। ডিবি জানায়, আজিজ তিন বছর ধরে মোবাইল চুরি করে আসছিলেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা মেডিক্যাল, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানম-ি লেক ও যাত্রাবাড়ী এলাকাসহ রাজধানীর কয়েকটি স্থান থেকে বেশি চুরি করতেন। এসব স্থান থেকে প্রতিসপ্তাহে ৮/১০টি মোবাইল চুরি করতেন। এদিকে এক মোবাইলের সূত্র ধরে ১৫৮টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছে ডিবি উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিম। বৃহস্পতিবার ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে মোবাইল চোর চক্রের সক্রিয় তিন সদস্যকে ১৭টি চোরাই মোবাইলসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের তথ্যমতে কমলাপুর রেল স্টেশন, গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৭টি উন্নতমানের চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ডিসি বলেন, গত ২৩ মার্চ সকালে নিজ কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করার সময় স্টেশন ম্যানেজারের দুটি মোবাইল ফোন, একটি ওয়ালেটের ভেতর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ৪৫ হাজার টাকাসহ টেবিলের ওপর থেকে সুকৌশলে চুরি করে নিয়ে যায় চোর। আজিজের কাছ থেকে এসব উদ্ধার করা হয়েছে। আজিজ মোহাম্মদ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, সে সুকৌশলে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে স্টেশন ম্যানেজারের ফোন এবং ওয়ালেট চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। মশিউর রহমান বলেন, আজিজ সৌদি থাকাকালীন বিএমডব্লিউ, লেক্সাসের মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামী গাড়িও চুরি করতেন। সেদেশে চুরি মামলায় সাজা ভোগের পর দেশে এসেও চুরি পেশায় জড়ান। ফলে এখানেও চাকরি হারাতে হয় তাকে। চুরির কারণে তাকে বার বার বিভিন্ন চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তারপরও চুরি পেশায় যুক্ত থাকেন আজিজ। তিন বছর ধরে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিসপ্তাহে ৮ থেকে ১০টি করে মোবাইল চুরি করতেন। এরপর চোরাই মোবাইলগুলো রনি হাওলাদার ও জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করতেন। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাদের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এক মোবাইলের সূত্র ধরে ১৫৮ ফোন উদ্ধার ॥ এদিকে এক মোবাইলের সূত্র ধরে ১৫৮টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছে ডিবি উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিম। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি হওয়া এসব মোবাইলসহ চোর চক্রের আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলো- মনির হোসেন, মোতাহার হোসেন, সুরুজ হোসেন, শাহজালাল, মেহেদী হাসান, কুমার সানি, হৃদয় ও শামীম ওসমান। উত্তরা এলাকার বিভিন্ন স্থান ও মোতালেব প্লাজা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিবির উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিম। তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া বিভিন্ন মডেলের ১৫৮টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও এক লাখ ১৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
×