ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যান্টিবায়োটিক মোড়কে থাকবে লাল চিহ্ন

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১৯ মে ২০২২

এ্যান্টিবায়োটিক মোড়কে থাকবে লাল চিহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের অন্তত ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রের (ফার্মেসি) কর্মী জানেন না এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার। আর তাই যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জীবন রক্ষায় জরুরী এসব ওষুধ। যার অধিক ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মানুষের মধ্যে কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর তাই এবার থেকে এ্যান্টিবায়োটিক চিহ্নিতকরণ সহজ করতে ওষুধের মোড়ক (প্যাকেট) বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন থেকে সব এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের লেভেলে লাল চিহ্ন ব্যবহার হবে। বুধবার বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মেসিটিউক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চলমান এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্সের (এএমআর) পরিস্থিতি ও এএমইউ ট্রেন্ডস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের (ডিজিডিএ) সহকারী পরিচালক এস এম সাবরিনা ইয়াছমিন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে বিএপিআইয়ের সঙ্গে আমাদের একটি সভায় এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের লেবেলে লাল চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি অনুমোদনও দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবনের প্রবণতা। অসুস্থ হলেই ফার্মেসি থেকে সাধারণ মানুষ ওষুধ কিনে সেবন করেন। দেশের ৮টি বিভাগের ৪২৭টি ফার্মেসিতে জরিপ চালিয়ে আমরা দেখেছি, ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ফার্মেসি কর্মী এ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে ভালভাবে জানেন না। এছাড়া তারা সহজে এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ চিনতেও পারে না। তাই মানুষ এবং পশু দুই ক্ষেত্রেই এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের এই চিহ্ন ব্যবহার করা হবে। অনেক কোম্পানি বর্তমান সময়েও তাদের ওষুধের লেবেলে এই চিহ্ন ব্যবহার করছে। অনুষ্ঠানে এ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ (আইইডিসিআর) কয়েকটি সংস্থা বিভিন্ন গবেষণা তুলে ধরেন। এ সময় ডিজিডিএ মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ (সংক্রামক) শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা বলেন, আমাদের চারপাশে অনেক রকমের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলোর সংক্রমণে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। সারাতে খেতে হয় এ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু এ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে এর ব্যবহারবিধির ওপর। এ ব্যাপারে তাই সচেতনতা জরুরী। অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, এ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে চিকিৎসককে শরীর সম্পর্কে সব তথ্য জানানো জরুরী। চিকিৎসক হয়তো নিজে থেকেই অনেক কিছু জিজ্ঞেস করবেন। তারপরও রোগীর সচেতনতা দরকার। যেকোন জ্বরের জন্যই এ্যান্টিবায়োটিক নয়। কখনই চিকিৎসককে এ্যান্টিবায়োটিক লেখার জন্য জোর করবেন না বা অনুরোধ করবেন না। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবারা প্রায়ই এমনটা করেন। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে জ্বর হয়েছে এমন প্রমাণ হাতে পাওয়ার আগে এ্যান্টিবায়োটিক নয়। এর এরকম যথেচ্ছ ব্যবহার না কমালে সমূহ বিপদের শঙ্কা রয়েছে। এর আগে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী ২০৫০ সালে করোনার চেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়বে বাংলাদেশ, এর কারণ হবে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে আগামী ২০৫০ সালে দেশে করোনায় মৃত্যুর চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ মারা যেতে পারে। সবার স্বার্থে মাত্রাতিরিক্ত এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ করতে হবে। যত্রতত্র এ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সচেতনতার তাগিদ দিয়ে উপাচার্য বলেন, রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যাতে কোন ফার্মেসি এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
×