মোঃ মামুন রশীদ ॥ দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছে তখন স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই আজ মাঠে গড়াচ্ছে অষ্টম বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেবার কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল না এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অধীনে হয় বিভিন্ন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান নিয়ে। করোনার দাপটে ১ বছর বিরতি দিয়ে এবার ৬ ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে আগের ফরমেটেই শুরু হচ্ছে বিপিএল। উদ্বোধনী ম্যাচে বেলা দেড়টায় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ফরচুন বরিশাল মুখোমুখি হবে মেহেদি হাসান মিরাজের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। আর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা মুখোমুখি হবে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স। এই আসরে বিশে^র অনেক বড় তারকা না থাকলেও ক্রিস গেইল, ফাফ ডু প্লেসিস, ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, মঈন আলীদের নিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। তবে এই আসরের বড় দুর্বলতা থাকছে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত রিভিউয়ের পদ্ধতি ডিআরএস না থাকা। করোনার থাবায় বিপিএল শুরুর আগেইকয়েকজন আক্রান্ত হওয়ায় শঙ্কার কালো মেঘ, দর্শকশুন্য মাঠ হলেও আয়োজক বিসিবির আশা সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকের করোনা সুরক্ষানীতি অনুসরণ করে নিরাপদে শেষ করার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু বিপিএল নামে হয়েছে ২০২০ সালের শুরুতে সর্বশেষ আসর। এবারও বঙ্গবন্ধু বিপিএল নামেই মাঠে গড়াচ্ছে অষ্টম আসর। করোনার থাবায় গত বছর হয়নি বিপিএল। এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিরা ফিরেছে। তবে সর্বশেষ বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী রয়্যালস এবার নেই। এমনকি পঞ্চম আসরের শিরোপাধারী রংপুর রাইডার্সও নেই। অবশ্য ফিরেছে বরিশাল, কুমিল্লা। ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম- এই তিন ভেন্যুতে হবে ২৭ দিনের বিপিএলে ৩৪ ম্যাচ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৮টি ও সিলেটে মাত্র ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্লে-অফের ৩ ম্যাচ ও ফাইনালসহ ২০ ম্যাচ হবে মিরপুরে। গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খেলোয়াড় ড্রাফট থেকে এবারের দল নির্বাচন করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। ড্রাফটের আগেই পছন্দমতো বেশকিছু ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এবার একেকটি দল খেলোয়াড়দের খরচসহ ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ৫ কোটি টাকা দিয়েছে। দল পরিচলনায় সম্ভাব্য ব্যয় সব মিলিয়ে ৬-৭ কোটি হলেও প্রাইজমানি হিসেবে চ্যাম্পিয়নরা মাত্র ১ কোটি টাকা পাবে এবার। আর রানার্সআপরা পাবে মাত্র ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার। এবার বিপিএলে খুব বড় কোন বিদেশী তারকাকে টানতে পারেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এর কারণ করোনা পরিস্থিতি এবং ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) টি২০। আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য আসরটির জন্য কোন পাকিস্তানী খেলোয়াড় নেই এবার বিপিএলে। এমনকি বর্তমান বিশে^র বড় তারকারাও পিএসএলেই খেলছেন। এরপরও প্লেসিস, ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, মঈন আলী, সুনীল নারাইন ও ডোয়াইন ব্রাভোদের উচ্চমূল্যে নিয়ে চমক দেখিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
বিপিএল আকর্ষণীয় করতে নেই বাড়তি কোন আয়োজন। উদ্বোধনী কোন অনুষ্ঠান রাখা হয়নি কোভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে। এছাড়া ভাল মানের বিদেশী আম্পায়ার, ধারাভাষ্যকার পাওয়া যায়নি। এমনকি আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে দলগুলোকে। কারণ ডিআরএস নেই। সে কারণে জোড়াতালি দিয়েই এবার বিপিএল মাঠে গড়াবে। এমন একটি আসরে নেই মাঠের প্রাণ দর্শকরাও। এরপরও বাংলাদেশের তারকারা এটিকে দেশীয় ক্রিকেটারদের জন্য ভাল বলে দাবি করছেন। খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিক বলেছেন, ‘এটা সবার জন্য বড় সুযোগ, বিশেষ করে স্থানীয়দের জন্য। সামনে বিশ্বকাপসহ অনেক খেলা আছে।’ ঢাকার অধিনায়ক ও বাংলাদেশ টি২০ দলের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, ‘সামনে আরেকটা বিশ্বকাপ আছে, আরেকটা সুযোগ। ফরমেট নিয়েও হয়ত টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করবে, কারণ কন্ডিশন ভিন্ন হবে। হয়তো পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের আধিক্য থাকবে, রিস্ট স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকবে। এই জিনিসগুলো আমাদের সবারই মাথায় আছে। যারা (বিপিএল) পারফর্ম করবে তাদের সুযোগ থাকবে।’ এবার অবশ্য বিপিএল মাঠে গড়ানোর আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অনেক ক্রিকেটার ও কর্মকর্তা। তাদের নাম প্রকাশ না করলেও বিসিবির দাবি বিপিএলে গত বছর টোকিও অলিম্পিকে নেয়া সুরক্ষানীতি মানা হবে তাই করোনা শঙ্কা থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতেই আজ প্রথম ম্যাচে সাকিবের বরিশাল ও মিরাজের চট্টগ্রাম এবং সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর ঢাকা ও মুশফিকের খুলনা মুখোমুখি হবে। সবাই আশাবাদী শুরুটা ভালভাবে করতে এবং এবার শিরোপা জিতে শেষ করতে।