ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অকেজো রাবারড্যাম, বিপাকে কৃষক

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ২০ জানুয়ারি ২০২২

অকেজো রাবারড্যাম, বিপাকে কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ শহরের পিএমখালী এবং ঝিলংজা চান্দের পাড়ার বাঁকখালী নদীতে স্থাপিত রাবারড্যাম অকেজো হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার কারণে কৃষকদের মধ্যে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ কোন কাজে আসছে না। যথা সময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম হতাশ ৫ ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক। তাদের দাবি সরকারী টাকা লুটপাট করার জন্য নামেমাত্র বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছরও অসময়ে বাঁধ নির্মাণ করে বিপুল টাকা আত্মসাত করেছিল সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও শুষ্ক মৌসুমে পানি না পেলে কার স্বার্থে বাঁধ নির্মাণ? পিএমখালী ঘাটকুলিয়াপাড়ার কৃষক সিরাজুল্লাহ বলেন, আমি ৭ একর জমিতে পানির অভাবে কোন ধরনের চাষাবাদ করতে পারছি না। মনে করেছিলাম দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হলে পানি পাব। সে আশায় শীতকালীন সবজি হিসেবে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম চাষ করেছিলাম। এখন পানির অভাবে সব গাছ মরে যাচ্ছে। রাবারড্যাম যখন অকেজো হয়ে পড়েছিল- তখন আমরা বেশ কয়েকবার উপজেলা প্রকৌশল অফিসে দরখাস্ত করেছিলাম যে বিকল্প বাঁধ দিয়ে হলেও চাষাবাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে। গত বছরও সরকারের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল কিন্তু যখন আমাদের পানি প্রয়োজন তখন পানি পাওয়া যায়নি। ফলে অনেক জমি চাষাবাদ বিহীন ছিল। চলতি বছরও একই অবস্থা। মূলত ঠিকাদার ফারুকের চরম অবহেলার কারণে ৫ ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষককে না খেয়ে থাকতে হবে। চান্দের পাড়ার মোহাম্মদ আলী বলেন, এগুলো একটা সিন্ডিকেট মূলত সাধারণ মানুষের মাথা বিক্রি করে সরকারী টাকা লুটপাট করার জন্য সব প্রকল্প। না হলে কখন পানি দরকার সেটা কি সরকারী কর্মকর্তারা জানেনা? এখন শীতকালীন সবজি চাষাবাদের সময় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া ধান চাষাবাদ করার জন্য পানি প্রয়োজন। যদি মানুষের উপকারে না আসে তাহলে সেই প্রকল্প কেন এবং কী জন্য। আসলে জনগণের কাছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। কোনমতে কাজ শেষ করে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা জায়েজ করতে পারলেই খেলা শেষ। আগামী বছর আবার হবে। রামু কাউয়ারখোপের কৃষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, বাঁকখালী রাবার ড্যামে পানি ধরে না রাখলে এখানে পানি থাকে না। আর পানি না থাকলে কিভাবে চাষাবাদ করব। তাই চলতি বছরও আমার ২ একর জমি খালি পড়ে আছে। কয়েকদিন আগে তামাক কোম্পানি এসেছিল এখন মনে করেছি তাদের না দিয়ে বড় ভুল করেছি। এ ব্যাপারে ঝিলংজা ইউপি চেয়াম্যান টিপু সুলতান বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক- আসলে কাকে বলব দুঃখের কথা। সরকার জনগণের জন্য ঠিকই সব কিছু করে থাকে, কিন্তু তার কিছুই জনগণ পায় না। সব আগেভাগেই ভাগ হয়ে যায়। আমি দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। পিএমখালীর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, পানির অভাবে বর্তমানে অসংখ্য জমি খালি পড়ে আছে। অসময়ে বাঁধ করে সেটা কার জন্য? তাই বাঁধ নির্মাণে কোন অনিয়ম হলে তার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে ঠিকাদার ফারুক বলেন, আমি ৩ দিন আগে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করেছিলাম কিন্তু জোয়ারের পানিতে আবার বালুর বস্তা সরে গেছে। তাই এখন আবার করা হচ্ছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। আর বাজেট বরাদ্দ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সেটা সবাই জানে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, এগুলো পানির কাজ তাই কখন কি হয় কেউ জানে না। তবে কয়েকদিন আগে শেষ হয়েছিল সেখানে কিছুটা সমস্যা হওয়াতে এখন আবার করতে হচ্ছে। প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, কাজের গুণগত মান যাচাই করার জন্য কমিটি আছে। আর কাজ দ্রুত শেষ করে মানুষ যাতে পানি পাই সে জন্য সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
×