ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চাই

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চাই

জনকণ্ঠ : চবির প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়াতে আপনার অনুভূতি কেমন? ড. শিরীণ আখতার : প্রথমে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। পাশাপাশি মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। প্রথম নারী হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়া অবশ্যই অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। বিগত তিন বছর ধরে আমি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার সহায়তা পেয়েছি। সবার প্রতি শুভ কামনা। যে দায়িত্ব আমি পেয়েছি তা যেন সততা, স্বচ্ছতা এবং সাহসের সঙ্গে পালন করতে পারি সে জন্য দোয়া চাই। জনকণ্ঠ : আপনার এই সাফল্যে বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলেছে? উপাচার্য : আমি উপাচার্য হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় আমাকে যেতে হয়েছে। সেখানে আমার এতদূর আসার গল্প শুনিয়েছি। বিশেষ করে রোকেয়া পদক পাওয়া অনুপ্রাণিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা, যেখানে আমরা ভবিষ্যতের নেতা, ভবিষ্যতের শিক্ষক, দেশ গড়ার কারিগর তৈরি করছি। তবে সার্বিকভাবে দেশের প্রান্তিক জায়গা থেকে শুরু“ করে প্রতিটি মুহূর্তে নারীকে সংগ্রামের মধ্যে যেতে হচ্ছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদের মতো জায়গায় আমার নারী উপস্থিতিটি উৎসাহিত করবে বলে আমি মনে করি। জনকণ্ঠ : বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নারীর আগ্রহ কম, নাকি বঞ্চিত? ড. শিরীণ আখতার : দূরে না গিয়ে শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখলে পাবেন শিক্ষক থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম। এখানেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েন নারী শিক্ষকরা। এ ছাড়া এসব পদে যেতে রাজনৈতিক এক্টিভিটিসহ অন্যান্য দক্ষতা ও পারদর্শিতাও থাকতে হয়। যা অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের বেলায় কিছুটা কম দেখা যায়। তবে নারীর আগ্রহের তো কোথাও কমতি দেখি না। তা ছাড়া, সরকারেরও তো নারীর প্রতি আলাদা ফোকাস রয়েছে। তবে ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে নারীদের যোগ্য হয়ে আসতে হবে তখন আর কেউ আটকে রাখতে চাইলেও পারবে না। জনকণ্ঠ : দায়িত্ব পালনে এখন পর্যন্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি না? ড. শিরীণ আখতার : কিছুটা তো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর অবকাঠামো এবং একাডেমিক অনেক কিছু এগিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনার প্রকোপ সব আটকে দিয়েছে। প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থীর বিশাল এই ক্যাম্পাসের দায়িত্ব আমার ওপর। নানা দিক থেকে প্রতিবন্ধকতা অনুভব করলেও তা এড়িয়ে যেতে চেয়েছি সব সময়। সব বাধা মাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে কখনও পিছপা হব না। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছে। জনকণ্ঠ : নিজের সম্পর্কে... ড. শিরীণ আখতার : গ্রামেই জন্ম আমার। বাবার হাত ধরে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসা। পরিবারের আদর পেলেও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা, উপাচার্য হওয়া তিটি মুহূর্তেই সংগ্রাম ছিল। বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষেই আমার বিয়ে হয়েছে। তখন আমার পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম। অথচ শ্বশুরবাড়ির সবাই বেশ সচেতন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেশের সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা যেমন ছিল তখন নারীর প্রতি। ঘরের বউ পড়াশোনা করবে এটা তাদের কাছেও অচেনা ছিল। তবে স্বামীর সর্বোচ্চ সহায়তায় আমি পড়াশোনা শেষ করেছি। বাসায় সব সময় পড়ার পরিবেশ পেতাম না তখন দরজা-জানালা সব বন্ধ করে পড়তে বসতাম। আমার বন্ধুরাও এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে নানাভাবে। জনকণ্ঠ : বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে বেশিরভাগ কমিটি চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্যদের দিয়ে। এমনকি কয়েক যুগ ধরে চাকসু নির্বাচনও হচ্ছে না। এসব ব্যাপারে কী ভাবছেন? ড. শিরীণ আখতার : সিন্ডিকেট নির্বাচন আগে দেয়ার চেষ্টা করব। যতগুলো নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না সেগুলো একে একে সম্পন্ন হবে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি থেকে শুরু করে কর্মচারীদের সংগঠগুলোর নির্বাচন নিয়মিত হচ্ছে। আর ছাত্র সংসদ নিয়ে কিছু কথা আছে। এক্ষেত্রে আমরা এখন শিক্ষার্থীদের জন্য নানামুখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। এতে করে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন এর চেষ্টা করছি। যাতে করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। জনকণ্ঠ : উপচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভাবনা... ড. শিরীণ আখতার : বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন। জানি না সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারব কি না। এরই মধ্যে কিছু কিছু বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই। আগামী এক দুই মাসের মধ্যে ইনকিউবেটর সেন্টার হয়ে যাবে। যখন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাই তখন আমাদের সামনে ছিল আইটি পার্ক করা কিন্তু সেটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় থেমে আছে। চায়নার সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে তারা আমাদের ছয়তলা একটি ভবন নির্মাণ করে দেবে। সেখানে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দ্বিতীয় কলা অনুষদের কয়েকটি রুমে কার্যক্রম শুরু হবে। তথ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে কমফোর্ট জোন নির্মিত হচ্ছে। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সমৃদ্ধির সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নতি সাধনে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
×