ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে নতুন শিশু

প্রকাশিত: ২১:৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

নতুন বছরে নতুন শিশু

নতুন বছর ২০২২ সালের প্রথম দিন প্রায় ৬০ হাজার নবজাতককে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। যা বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। ভারতের পিছনে রয়েছে চীন, নাইজিরিয়া ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে বছরের প্রথম দিন নতুন শিশুর জন্ম ৯,২৩৬। নতুন শিশুর স্বর্গীয় হাসি পৃথিবীর মানুষ দেখে থাকে প্রতিদিনই। ‘কুসুম ঝরিয়া পড়ে, কুসুম ফুটে’। রবিবাণীর গূঢ় অর্থ অনুধাবনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে জীবনের নিয়মই এই প্রবহমানতা। একদিকে মৃত্যুতে জীবনাবসান ঘটে, অন্যদিকে নতুন কুঁড়ির জন্ম হয়। আমাদের পিতৃপুরুষেরা যেমন আর এই ইহজগতে নেই, তারা অনুপস্থিত হয়ে গেছেন, তেমনি উত্তরপুরুষেরা তথা উত্তারাধিকার আগামী দিনের আগন্তুক। ধারাবাহিক ভাবেই তাদের আগমন। নতুন শিশু জন্ম নেবে, আবার ওই শিশুই একদিন হবে জন্মদাতা। ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ এসেছে নতুন সময়, নতুন বছর। বছরের প্রথম দিনই এই বঙ্গদেশে প্রকৃতির নিয়মে নতুন শিশুর জন্ম হয়েছে। বিশ্বব্যাপীই এই মহামারীর সঙ্কটের ভেতর নতুন শিশুর জন্মলাভ ঘটেছে। আমাদের দেশে যদি বছরের প্রথম দিনের মতো জন্মহার অব্যাহত থাকে তবে তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে জাতীয় জনসংখ্যায় যোগ হবে বহু শিশু। এই বাস্তবতা আমাদের সামনে প্রধান যে দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় তার প্রথমটি হলো সত্যি কি আগামীতে এই জনবিস্ফোরণ জনসম্পদে পরিণত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে? প্রতিটি মানবজন্মকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে হলে প্রত্যেকের জন্য চাই মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরণের সার্বিক সুব্যবস্থা। সীমাবদ্ধ আয়তনের একটি ভূখন্ডে প্রত্যেকের জন্যে নিদেনপক্ষে আবাসন ও খাদ্য নিশ্চিত করার পরিস্থিতি সত্যিকারার্থেই বিদ্যমান কিনা, সেটি ভেবে দেখা জরুরী। পরিবারের সুখ ও সমৃদ্ধির প্রয়োজনে একদা যে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম বেগবান করে তোলা হয়েছিল ক্রমান্বয়ে তাতে ভাটা পড়েছে। আগামীতে জন্মনিয়ন্ত্রণের মতো বাস্তবসম্মত বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের দিকে আমাদের যাওয়া সমীচীন হবে কিনা সেটি নীতিনির্ধারকদেরই বিষয় বটে। তবে শিক্ষিত ও আধুনিক দম্পতি স্বউদ্যোগেই সর্বদা পরিবারের সদস্যসংখ্যা সীমিত রাখেন। কবিরা হোন সত্যদ্রষ্টা, মানবসমাজের গূঢ় গহীন বক্তব্য তাদের বাণীতে উঠে আসে। কবির বক্তব্যের মর্মকথা হলো একটি নতুন শিশুর এই পৃথিবীতে ছাড়পত্র তখনই অর্থবহ হবে যখন পূর্বসূরিরা প্রাণপণে পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে সমর্থ হবেন। আজকের বাস্তবতায় নতুন শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রচে যেতে হলে মানবসমাজকে শত হাজার বছরের সামনের টালমাটাল দিনগুলোর কথা বিচক্ষণতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে সেই পথরেখা নির্মাণ করায় ব্রতী হতে হবে। তাতে জাতিতে জাতিতে ঐক্য ও সহমর্মিতা বাড়াতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে শিশুর জন্ম দেয়ার তুলনায় সেই শিশুর সমগ্র জীবনকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করে তুলবার অঙ্গীকার ও অভিজ্ঞান যে সুগভীর একটি ভাবনার বিষয়, সেটিই বছরের প্রথম দিনের শিশুজন্মের হার আমাদের সূক্ষ্মভাবে জানিয়ে গেল।
×