ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত

কর্ণফুলীর দু’পারে থমকে আছে উচ্ছেদ অভিযান

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

কর্ণফুলীর দু’পারে থমকে আছে উচ্ছেদ অভিযান

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের অর্থনীতির প্রাণ কর্ণফুলী নদী। এই নদীর চ্যানেলেই অবস্থান প্রধান বন্দরের, যার মাধ্যমে হয়ে থাকে আমদানি রফতানির সিংহভাগ। কিন্তু দখল ও ভরাটে ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে কর্ণফুলী। উচ্ছেদ চালাতে আদালতের আদেশ, জেলা প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি এবং আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় আল্টিমেটাম-কোন কিছুই কার্যকর হচ্ছে না। অভিযান শুরু হয়েও থমকে যায় অজ্ঞাত কারণে। এ অবস্থায় বন্দরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নদী পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেশ ঘটা করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু আড়াইশ’র মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর সেই অভিযান থমকে যায়। এরপর অত্যন্ত জরুরী এ কাজটি আর এগোয়নি। এরমধ্যেই সেই জায়গায় আরও গড়ে উঠতে শুরু করে স্থাপনা। সব মিলিয়ে অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা আরও বেড়েছে। কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা নিরূপিত হয়েছিল ২ হাজার ১৮৭টি। দু’পাশেই এমন স্থাপনা থাকলেও শহর প্রান্তেই এই সংখ্যা বেশি। যে বন্দর চ্যানেল সচল রাখা নিয়ে এত উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, সেই বন্দর কর্তৃপক্ষই নদীর তীরবর্তী ভূমি ইজারা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আদালত থেকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বন্দরের ওপরও নির্দেশনা রয়েছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের। এ ব্যাপারে দফায় দফায় প্রশাসনের সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দখলদাররা রয়েছে বহাল তবিয়তে। এ অবস্থায় নদী রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে নাগরিক সমাজ। দেয়া হয়েছে আল্টিমেটাম। কিন্তু এতে কোন ভ্রুক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নিজেই উচ্ছেদের নোটিস দিয়ে কেন সক্রিয় হয় না এ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। দখলদাররা খোদ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কর্ণফুলী রক্ষায় আন্দোলনকারীরা এমন অভিযোগ তুলছেন। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান জানিয়েছেন, উচ্ছেদে ২০১৬ সাল থেকে পাঁচ বছরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাতবার নোটিস জারি হয়েছে। কিন্তু দফায় দফায় নোটিসের পরও উপেক্ষিত থেকে যায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। অভিযান হয়নি। হুমকি শোনা গেলেও কার্যক্রম মাঠে গড়ায়নি। তিনি বলেন, প্রশাসনের সকল উচ্ছেদ নোটিস ও নতুন করে দখলের সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রার্থনা করে আমরা আদালতে যাব। আন্দোলনকারী সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমান জেলা প্রশাসক গত ১২ নবেম্বর একমাসের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুইমাস অতিবাহিত হলেও এখনও উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি, যা হাইকোর্টকে তথ্য উপাত্তসহ উপস্থাপন করা হবে। নদীকে জীবন্তসত্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু সেই আদেশ লঙ্ঘন করে কর্ণফুলী নদীকে হত্যা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা, এমনই অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। সরকারী সংস্থাগুলো যেন অভিযান চালিয়ে নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনে, সেই দাবি তুলেছেন সংগঠনটির নেতারা। অন্যথায় তারা আদালত অবমাননার বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করে প্রতিকার চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নদী দখলের তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ফিরিঙ্গি বাজার মোড় থেকে মেরিনার্স পার্ক নতুন মাছবাজার এবং ভেড়া মার্কেট থেকে বাকলিয়া চরের মোড় পর্যন্ত অনেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা, যা কর্ণফুলীকে গিলে খাচ্ছে। আইনত নদী তীর কোনভাবেই ইজারা দেয়া যায় না। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার বিভিন্ন সংস্থাকে ইজারা দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে চুয়েট প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিতের নেতৃত্বে এক জরিপে উঠে আসে, চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় নদী ভরাট করে মাছবাজার গড়ে ওঠায় উজানের চেয়ে ভাটির মোহনা অংশ উঁচু হয়ে গেছে।
×