ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রুনা তাসমিনা

শীতেও থাকুন মনোরম

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৩ জানুয়ারি ২০২২

শীতেও থাকুন মনোরম

হেমন্ত শেষ হয়ে আসছে। দিনে গরম থাকলেও শেষ রাতের হিমেল বাতাস, কুয়াশার হালকা চাদরে শীতের আমন্ত্রণ। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীত এলো বলে। গাছের পাতায় বাদামি রং বলে দিচ্ছে পাতা ঝরার দিন সামনে দাঁড়িয়ে। শীত ঋতু মানেই পিঠা-পুলির ধুম। শীত ঋতু মানেই বেড়াতে যাওয়ার উৎসব। পর্যটন কেন্দ্র মুখরিত হয়ে ওঠে ভ্রমণপিপাসুদের পদভারে। শুধু কী পর্যটন কেন্দ্র! পাহাড় নদী সাগর গ্রাম সবকিছুই থাকে ঘুরে আসার তালিকায়। কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও শীতের আচরণ কিছুটা নিষ্ঠুর। পৃথিবী এখনও করোনামুক্ত নয়। সেটি মাথায় রাখতে হবে আগে। আমাদের দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ ঠিকই চলে যাবে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। যেখানেই যাওয়া হোক না কেন একটি পূর্বপ্রস্তুতি সবার থাকে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্থবির তবুও শঙ্কা মুক্ত নই কেউ-ই। তাই ব্যাগ গোছানোর সময় সর্বপ্রথম যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে রাখা দরকার তার মধ্যে আছে মাক্স, হ্যন্ড স্যানিটাইজার, শীতবস্ত্র। শীতের রুক্ষ আচরণের সঙ্গে মিশে থাকে নানা ধরনের অসুখ। আর্দ্র আবহাওয়ায় ত্বক হারায় লাবণ্য। তাই এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে বৈরী পরিবেশেও পরিবার ও নিজেকে সুস্থ, সুন্দর রাখার। ঠিকঠাকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে শীতেও সুস্থ, সুন্দর থাকা কঠিন নয়। শীতকালে ত্বক আর্দ্রতা হারায়। ঘর ও বাইরে দুই রকম আবহাওয়ার কারণে ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই ত্বক ভাল রাখতে দিনে তিন চারবার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। শীতকালে শরীরের অয়েল গ্রান্ড থেকে তেল কম নিঃসৃত হয় বলে হাত-পায়ের ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। ত্বকের শুষ্কভাব দূর করতে গ্লিসারিন কিংবা অলিভ অয়েল নিয়মিত লাগালে ত্বক আর্দ্র থাকে। গ্লিসারিন হলো সবচেয়ে ভাল ময়েশ্চারাইজার। একভাগ গ্লিসারিনের সঙ্গে দুভাগ পানি কিংবা গোলাপজল মিশিয়ে নিয়ে লাগানো যায়। চুলেও প্রভাব পড়ে শীতের। আগা ফাটা, নির্জীব হয়ে যাওয়া, গ্রোথ কমে যাওয়া, খুসকি ও চুলপড়া সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত তেল ম্যাসেজ করতে হবে। সপ্তাহে দুইবারের বেশি শ্যাম্পু না করা ভাল। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। শরীরের নিয়মিত পরিচর্যার অংশ হিসেবে শীতকালীন প্রসাধনী ময়েশ্চারাইজার, ক্রিম, স্নো, পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, বড়ি লোশন, লিপজেল, গ্লিসারিন, গোলাপজল কিনে রাখা দরকার শীত আসার আগে। শীতের পোশাকগুলো বের করে ধুয়ে রাখতে হবে। সারা বছর ব্যবহার না হওয়ার ফলে তাতে লেগে থাকতে পারে জীবাণু। শীতের আগমনী খবর যখন প্রকৃতি আমাদের দিয়েই দিয়েছে তাই প্রস্তুতির শুরু এখন থেকেই করতে হবে। সোয়েটার, কার্ডিগান, জ্যাকেট, স্যুট, প্যান্ট, মাফলার, মোজা, কানটুপি সব ঠিক আছে কিনা দেখে নেয়া দরকার। প্রয়োজনে কিনে রাখতে হবে। প্রসাধনী ব্যবহার করে ত্বক ঠিক রাখা যায়। গরম কাপড় শীত থেকে রক্ষা করে। তবুও কোন ফাঁক দিয়ে শরীরে ঠিকই হানা দেয় অসুখ বলা যায় না। জ্বর, সর্দি, নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি জাতীয় ঠা-াজনিত অসুখে আক্রান্ত হয় অনেকেই। তাই শরীর যাতে সুস্থ থাকে তার জন্য তরল ও গরম জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। হালকা গরম পানি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। চায়ের সঙ্গে আদা, লেবু, মধু মেশানো চা এ সময়ে শরীরের জন্য বেশি উপকারী। ঠা-া পানির পরিবর্তে হালকা গরম পানিতে গোসল করা ভাল। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বাতাসে ধুলোবালি উড়িয়ে নিয়ে এসে ময়লা করে ফেলে ঘরদোর। আসবাবপত্র, ঘরের মেঝে, কার্পেটে পড়ে ধুলোর আস্তর। এগুলো নিয়মিত ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে। ধুলো পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করা যায় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। জানালা ও দরজায় লাগানো যায় ভারি পর্দা। কম্বল, কাঁথা, লেপ, তোষক, জাজিম, বালিশ কেনার দরকার হলে দেরি না করে এখনই কিনে রাখা দরকার। শীতের মেজাজ রুক্ষ। তবুও গরমের চাইতে এই ঋতুকে নিয়েই আমরা মেতে উঠি নানা আয়োজনে। গ্রামের ঘরে, হাটে-বাজারে, নগরের রাস্তায় বসে গরম ভাপা পিঠা খেতে কে না ভালবাসে। বনভোজনে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। কিন্তু সব আনন্দই আনন্দময় হয় যখন পরিবার, পরিজন সবাই সুস্থ থাকে। সুস্থ থাকার উপায় হলো সচেতনতা। বৈশ্বিক মহামারী এখনও চলছে। আমরা শীত ঋতু উদযাপন করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
×