ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

গণফোরামের কাউন্সিলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি

প্রকাশিত: ২১:১০, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

গণফোরামের কাউন্সিলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। এছাড়াও গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে জামায়াত ছাড়া দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে রাজপথে আন্দোলন শুরুর আহ্বান জানানো হয়। এদিকে মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী নেতৃত্বাধীন গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন। অসুস্থার কারণে জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নিতে না পারলেও লিখিত এক চিঠিতে ড. কামাল গণফোরামের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই কাউন্সিলের পর মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও গণফোরামের আরেক অংশের নেতা মোকাব্বির হোসেন আলোচনার মাধ্যমে গণফোরামে ঐক্যবদ্ধ হবেন বলে চিঠিতে আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন। জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনে চিঠিটি পড়ে শোনান মোস্তফা মোহসীন মন্টু। জাতীয় কাউন্সিলের উপস্থিত গণফোরামের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চিঠিতে ড. কামাল বলেন, আমি আমার অসুস্থার কারণে আপনাদের সামনে সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি। তবে জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের স্বাগত ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং আপনাদের সফলতা কামনা করছি। আমি সবসময় ঐক্যের কথা বলেছি। আশা করি, গণফোরামের সব নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবেন। আমি আশাকরি গণফোরাম যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, আপনারা গণফোরামের সব নেতা সম্মিলিতভাবে হাতে হাত রেখে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন। আপনাদের বর্তমান সম্মেলনের পরে আপনারা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে একসঙ্গে বসে ঐক্যমতে পৌঁছাবেন এবং গণফোরামকে দেশের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করবেন। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি। জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মানবিক বিবেচনায় হলেও বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে আমি খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছি। তার শারীরিক অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। তার কখন কি হয় বলা যায় না। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে আমি আজ কোন কথা বলছি না। তবে তারেকের উচিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ফোন করে বলা, আমাকে পছন্দ করেন আর না করেন, মায়ের জন্য সবাই দোয়া করেন, তার জীবন বাঁচান। বিচারপতিদের উদ্দেশে জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনারা খালেদা জিয়াকে জামিন দিতে পারেন। আমি তো মামলা তুলে নেয়ার কথা বলছি না। কিন্তু তাকে জামিনটা দিচ্ছেন না কেন ? কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী দেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, এ দলটির সঙ্গে আমি বেহেস্তে যেতেও রাজি নই। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী বিএনপি। কারণ, বিএনপি জামায়াতকে জোটে নিয়ে যেদিন থেকে রাজনীতি শুরু করেছে সেদিন থেকেই দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। তবে বঙ্গবন্ধুকে ছাড়িনি। আজীবন বঙ্গবন্ধুকে আমার বুকে লালন করে যাব। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, মুখে মুখে ঐক্য করবার চেষ্টা করলে হবে না। ঐক্যের জন্য তাগিদ থাকতে হবে। আর জামায়াতকে নিয়ে কোনদিন ঐক্য হবে না। তিনি বলেন, ৭৫ সালে সবাই আওয়ামী লীগ হয়েছিল। এমনকি জিয়াউর রহমান পর্যন্ত বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর কেউ দাঁড়ায়নি, কেউ কথা বলেনি। আমি বলেছিলাম বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে কামাল-জামাল-রাসেল মারা গেলেও আমি কাদের সিদ্দিকী মরিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ আমরা নেবই নেব। চেষ্টা করেছি। আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন, সেদিন যদি আমি অস্ত্র হাতে না নিতাম, প্রতিবাদ না করতাম, তাহলে বহু নেতাকে কবরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন আবার ৭৫ এর মতো। এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। জানি না এরপর আওয়ামী লীগের অবস্থা কি হবে। গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদের সভাপতিত্বে ও জগলুল হায়দার আফ্রিকের পরিচালনায় কাউন্সিলে আরও বক্তব্য রাখেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, দলের নেতা সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, আব্দুস সালাম প্রমুখ।
×