ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ

৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ॥ সালমান

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ৩০ নভেম্বর ২০২১

৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ॥ সালমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুইদিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে ৫ বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে। তিনি বলেন, যদিও এবারের সম্মেলনে বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাতগুলোকে তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। সোমবার সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এসব তথ্য জানান। রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে দুইদিনের এ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। দুইদিনের এ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বক্তব্য রাখেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ জায়গা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিদেশী ব্যবসায়ীদের বলব আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ অত্যন্ত নিরাপদ। এখানকার নীতিসমূহ বিনিয়োগ উপযোগী করা হয়েছে। আপনি এখানে বিনিয়োগজনিত মুনাফা দেশে নিয়ে যেতে পারবেন।’ সম্মেলনের শেষ দিনে সোমবার বিষয়ভিত্তিক মোট ছয়টি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে ৫৪ দেশের ৬ হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। পোশাক ও বস্ত্র খাত নিয়ে আয়োজিত কর্ম অধিবেশনে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, নীতি-কৌশলেরও ধারাবাহিকতা জরুরী। যত দ্রুত সম্ভব মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি। এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, পোশাক খাতে কাস্টমস ও এনবিআর সংক্রান্ত অনেক জটিলতা রয়েছে এখনও। এগুলো দূর করতে হবে। এনবিআরকে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, ব্যবসার উন্নতি ঘটাতে যানজট নিরসনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কর্ম অধিবেশনে উপস্থিত বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সরকারের নীতি-কৌশলের ধারাবাহিকতার রক্ষার আশ্বাস দেন। টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ শিরোনামে দিনের অন্য এক কর্ম অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশে এখন ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ। করোনা মহামারীর মধ্যেও দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি সাড়ে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। আর্থিক খাতও বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা। এ অধিবেশনে অন্য বক্তারা বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপীর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। খেলাপী ঋণ যেন আর বাড়তে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। এ সময় তারা আর্থিক খাতের সংস্কার, এসএমই খাত ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের বিষয়ে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দেন তারা। দিনের আরেক অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য অনেক ভৌত অবকাঠামো বানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি একটি ভাল আইনী কাঠামোও তৈরি করেছেন, যাতে বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে ভাল একটি প্রটেকশন পায়। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি বর্তমান সময়ের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি বড় সাফল্য। কোভিড-১৯ আঘাত হানার ঠিক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল আট শতাংশের ওপরে এবং গত এক দশকে তা ছয় শতাংশের বেশি ছিল। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভাল ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নীতির কারণে। বাংলাদেশ এই সফলতা ধরে রাখতে পারলে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ সফলতা ধরে রাখতে সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কোম্পানি আইনও সংশোধন করেছে। ‘পরিবহন ও লজিস্টিকস’ শীর্ষক কারিগরি/প্যারালাল শীর্ষক এক অধিবেশনে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এমন কোন অপ্রত্যাশিত নীতি কার্যক্রম গ্রহণ করবে না যা আপনাদের বিনিয়োগের বিপক্ষে যেতে পারে। আপনাদের বিনিয়োগ এই দেশের আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, লজিস্টিকস খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
×