ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাচ মিসে ম্যাচ হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৫ অক্টোবর ২০২১

ক্যাচ মিসে ম্যাচ হার বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ছোট মাঠে হতে পারে লো-স্কোরিং ম্যাচ। কারণ ঐতিহাসিক শারজা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) ম্যাচ হয়েছে এবং টি২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডেরও দুই ম্যাচ হয়েছে। তাই উইকেট হবে ধীর, স্পিনাররা সহায়তা পাবেন। তবে হয়েছে উল্টোটা যা বাংলাদেশের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। বিগ-স্কোরিং ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ২ ক্যাচ হাতছাড়া করার খেসারত ৫ উইকেটের হারে দিয়েছে বাংলাদেশ। রবিবার দুপুরে শারজাতে হওয়া টি২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের গ্রুপ ওয়ানের ম্যাচে মুখোমুখি হয় প্রাথমিক রাউন্ড পেরোনো দুই দল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করে মুশফিকুর রহিম ও নাইম শেখের অর্ধশতকে ৪ উইকেটে ১৭১ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে ইনিংসে ছক্কা মাত্র দু’টি, রানও কম হয়েছে তা বোঝা গেছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে। ৬৩ রানে চারিথ আসালঙ্কা ও ১৪ রানে ভানুকা রাজাপাকসে সহজ ক্যাচ দিলেও লিটন দাস তা হাতছাড়া করেছেন। পরবর্তীতে এ দু’জনের বিধ্বংসী অর্ধশতকই ১৮.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭২ রান তুলে জয় এনে দিয়েছে লঙ্কানদের। প্রাথমিক রাউন্ড পেরিয়ে টি২০ বিশ্বকাপে আর কোন ম্যাচ না জেতা বাংলাদেশ আবারও হার দিয়েই শুরু করেছে। এমন ম্যাচে সাকিব আল হাসান ২ উইকেট নিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের সর্বাধিক উইকেটশিকারি হয়েছেন। দুই এশীয় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি নিয়ে শারজাতে ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের ছিল দারুণ উৎসাহ ও উদ্দীপনা। ২০১৮ সালে সর্বশেষ দু’দলের মুখোমুখিতে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রপাত হয়েছিল দু’দলের মধ্যে। কলম্বোয় হওয়া নিদাহাস ট্রফিতে সেবার দুইবার ঘটনাবহুল ম্যাচে স্বাগতিক লঙ্কানদের হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তাই দর্শকরা সকাল থেকেই শারজা স্টেডিয়ামের গেটে ভিড় করেছেন। এমন ম্যাচে বাংলাদেশ চলতি আসরে প্রথমবার দুই পেসার নিয়ে তাসকিন আহমেদকে বাইরে রেখে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে দিয়ে একাদশ সাজায়। আর লঙ্কানরা ফর্মের তুঙ্গে থাকা অফস্পিনার মাহিশ থিকশানাকে বাইরে রেখে বিনুরা ফার্নান্দোকে নেয়। টস জিতে তারা বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর পর অনেকেই সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করেছেন। সমালোচনাটি সত্য হয়েছে যখন পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৪১ রান তোলার পর। যদিও ৫.৫ ওভারে লিটন দাস (১৬ বলে ১৬) লাহিরু কুমারার বলে সাজঘরে ফিরলে পুরনো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দু’জন বিত-ায় জড়িয়ে ধাক্কাধাক্কিও করেছেন। কিন্তু আম্পায়ার ও ক্রিকেটারদের হস্তক্ষেপে সেই পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর ম্যাচের বাকি অংশে সেই উত্তেজনা আর দেখা যায়নি। লিটনের পর সাকিবও (১০) দ্রুতই ফিরে গেছেন। কিন্তু নাইম-মুশফিক ঝড় তুলেছেন। ফলে ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭২ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে ফর্মহীন মুশফিক বড় ম্যাচে যেন জ্বলে ওঠেন। সর্বশেষ ১২ আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে কোন অর্ধশতক না পাওয়া মুশফিক শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন। তবে আর কেউ তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাট চালাতে পারেননি। এমনকি নাইমও ছিলেন দারুণ ধীর, ছোট মাঠে ও ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও তিনি ৪৪ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ এবং চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় অর্ধশতক স্পর্শ করেন। ৫২ বলে ৬ চারে ৬২ রানে তিনি সাজঘরে ফেরেন ১৭তম ওভারের প্রথম বলে। তার ও মুশফিকের ৫১ বলে ৭৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটির পতন ঘটে। এরপরও দলের রান সমৃদ্ধ হয়েছে মুশফিক ৩২ বলে ফিফটি পাওয়াতে। তিনি শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন। যাকে নিয়ে ভয়, সেই লেগস্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩ ওভারে ২৯ রান দেন। তবে দারুণ বোলিং করে পেসার কুমারা ৪ ওভারে ২৯ রানে ১ উইকেট নেন। ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭১ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নামার পর ইনিংসের চতুর্থ বলেই ধাক্কা খায় লঙ্কানরা। ওপেনার কুসাল পেরেরাকে (১) বোল্ড করে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সাফল্য পান। কিন্তু সেটাই হয়তো শেষ সাফল্য বাংলাদেশের। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৫৪ রান তোলে লঙ্কানরা। দ্বিতীয় উইকেটে পাথুম নিশঙ্কা ও আসালঙ্কা ৬৯ রানের জুটি গড়েন ৪৫ বল থেকে। এতে জয়ের ভিত গড়ে ওঠে। যদিও নবম ওভারের প্রথম বলে নিশঙ্কাকে (২১ বলে ২৪) ও চতুর্থ বলে আভিস্কা ফার্নান্দোকে (০) বোল্ড করে দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব এবং টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানী কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদিকে (৩৯ উইকেট) ছাড়িয়ে সর্বাধিক উইকেটের মালিক হয়ে যান। হাসারাঙ্গাও (৬) দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। তখন বাংলাদেশের মুঠোয় চলে এসেছে ম্যাচ এমনটাই মনে হয়েছে। তবে তারপরই শুরু হয় বাংলাদেশী বোলারদের ছন্দপতন এবং আসালঙ্কা ও রাজাপাকসের তা-ব। এতেই দিক হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশী বোলাররা, হতে থাকেন আলগা বোলিং করে তুলোধুনো। এমনকি মিস ফিল্ডিংও শুরু করেন সবাই। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহজ দুটি ক্যাচ ফেলে দেন লিটন। বাংলাদেশের পরাজয়ে মূল ভূমিকাই রাখেন তিনি। বিধ্বংসী আসালঙ্কা ৩৭ বলে ৬৩ রানে মুস্তাফিজের বলে এবং আফিফের বলে রাজাপাকসে ১১ বলে ১৪ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। তারাই বাংলাদেশের ললাটে পরাজয় এঁকে দিয়েছেন। আফিফ ১৩তম ওভারে ১৫, মাহমুদুল্লাহ ১৪তম ওভারে ১৬, সাইফউদ্দিন ১৬তম ওভারে ২২ ও সাকিব ১৭তম ওভারে ১১ রান দিলে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল আর ঘুরে দাঁড়াতেই পারেনি। রাজাপাকসে মাত্র ২৮ বলে ফিফটি ছুঁয়ে অবশ্য ৩১ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৫৩ রানে নাসুমের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন। কিন্তু তখন জয় থেকে ১০ বলে ৭ রান দূরে শ্রীলঙ্কা। পঞ্চম উইকেটে তিনি ও আসালঙ্কা ৮৬ রানের জুটি গড়েছেন মাত্র ৫২ বল থেকে। বাকিটা ৩ বলেই করে ফেলেন আসালঙ্কা। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেয়েছেন তিনি বিশ্বকাপে এদিন, ৩২ বলে স্পর্শ করেছেন তা। আর অপরাজিত থেকেছেন ম্যাচজয়ী ৪৯ বলে ৫ চার, ৫ ছক্কায় ৮০ রানে। বাংলাদেশ ইনিংসে হয়েছে মাত্র ২ ছক্কা, আর লঙ্কান ইনিংসে হয়েছে ৯টি। লঙ্কানরা কোন ক্যাচ ছাড়েনি, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই ক্যাচ ছেড়েছেন এবং সেই সুযোগে দু’জনই করেছেন অর্ধশতক। ফলাফলটাও তাই গেছে নিজেদের বিপক্ষে। আবারও মূল পর্বে জয়ের দেখাটা প্রথম ম্যাচে হলো না, ৫ উইকেটে হারল বাংলাদেশ ৭ বল বাকি থাকতেই। ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৮০ রান করা লঙ্কানরা পরের ৮.৫ ওভারে তুলেছে ১ উইকেটে ৯২ রান, পেয়েছে সহজ জয়।
×