ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে

মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন অভিবাদনে বিশ্বকবি রবিঠাকুরের অমিয় গীতি-কাব্যগাথার কয়েকটি পঙক্তি নিবেদন করতে চাই। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর\/মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,/ বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে\/গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রæত বেগে/করিছে পান, করিছে ম্লান, অক্ষয় কিরণে\’ সমগ্র বাঙালীর হৃদয় গভীরে ইতোমধ্যেই বিশ্ববরেণ্য উন্নয়ন রাজনীতির প্রতিমাস্বরূপ সফল ও সার্থক রাষ্ট্রনায়ক জননন্দিত শেখ হাসিনার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। সৃজন-মনন-নান্দনিকতা-মানবিকতা-অসাম্প্রদায়িকতার অপরূপ উপমারূপী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কালের অর্জনসমূহের সমাহার শুধু তাঁর স্বকীয় ভাবমূর্তিকে নয়; দেশকেও বিশ্বপরিমণ্ডলে করেছে আকাশচুম্বী মর্যাদাসীন। অবাক বিস্ময়ে পুরোবিশ্বে আলোকোজ্জ্বল সততা-ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই মহীয়সী রমণী ও প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের তেমন কোন বিশেষিত ভাষা এখনও যেন উন্মিলিত নয়। শ্বাশত বাংলার ঐতিহ্যিক আবর্তে প্রতিষ্ঠিত যে; শরতের শিউলি চাদরে আচ্ছাদিত অন্ধকার রাত্রি শেষে আলোকিত সকাল, শস্যপূর্ণ মাঠ, কৃষক-কিষানীর আনন্দের ফসলি গান ইত্যাদির সমন্বয়ে শরতের মায়াবী সাবলীল বিকাশমানতা। ঋতু পরিবর্তনের মাঙ্গলিক ধারায় ‘শরতকালে’ সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দের অনিন্দ্যসুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্যপটে প্রাণিত বাংলার মানুষ খুঁজে পায় দেশপ্রেমের নতুন ভাবনা এবং চেতনাসমৃদ্ধ উদ্ভাবনের মৃত্তিকাশক্তি। এই শরতে সামগ্রিক নয়নাভিরাম রূপবৈচিত্র্যের অনন্য প্রভাবে কাশফুল কন্যা খ্যাত বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার জন্ম এক অপরূপ দেশমাতৃকার প্রতি নিরন্তর ভালবাসার প্রতীক। কালক্রমে এজন্যই তিনি বিশ্ববরেণ্য এবং যুগরূপান্তে অপরূপ আলোকবর্তিকা হতে পেরেছেন। আজ বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করতে পারছে; জননেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালীর সমন্বিত শ্রদ্ধা-ভালবাসা এবং অসাধারণ নেতৃত্বের অপ্রতিদ্ব›দ্বী প্রতিবিম্ব। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া বঙ্গবন্ধুর সেই আদরের ‘হাসু’র শুভ জন্মদিনের এই ক্ষণে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। এটি সর্বজনবিদিত যে, পাশ্চাত্যের তুলনায় প্রাচ্য তথা বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষে নারীনেত্রীর বিকাশ তেমন প্রাচীন কিছু নয়। মূলত পাশ্চাত্যের ১৭ শতকে উচ্চবিত্ত মহিলাদের গৃহস্থালী কর্মযজ্ঞ থেকে সামাজিক পরিমণ্ডল অধিকমাত্রায় আকর্ষিত করে। ১৮ শতকের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণচাঞ্চল্য ও রাজনৈতিক সক্রিয়তা নারী সমাজের অংশগ্রহণকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। সে সময় ইংল্যান্ড ও ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের নারীরা শুধু সামাজিক ক্ষেত্রে নয়, আধুনিক ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সম্পর্ক এবং তার চর্চা এক নতুন মাত্রিকতায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠে। ইংল্যান্ডে এই মহিলা বুদ্ধিজীবীরা ‘বøুস্টকিংস বা জ্ঞানগরবিনী নারী’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। তারা সমসাময়িককালে বরেণ্য মনীষীদের বক্তব্য শুনে তা গ্রহণ-বর্জনের মতো চ্যালেঞ্জ প্রদান করে সমাজকে অনেক বেশি ঋদ্ধ করেছেন। ১৭৮৯ সালে বিপ্লবী নারী পরিষদের পক্ষ থেকে ফরাসী পুরুষদের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হলো ‘আপনারা অতীতের সকল কুসংস্কার দূর করলেও, সবচেয়ে ব্যাপক ও প্রাচীনতম কুসংস্কারটিকে বহাল থাকতে দিয়েছেন। এর ফলে গোটা দেশের অর্ধেক মানুষ রাষ্ট্রীয় পদ, অবস্থান, সম্মান, ও সর্বোপরি আপনাদের মাঝে অংশ গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’ এই প্রেক্ষিতে নারীবাদীদের অন্যতম নেত্রী অলিমপি দ্য গোজ রচিত ‘ডিক্লারেশন অব রাইটস অব উইমেন এ্যান্ড সিটিজেনস’ গ্রন্থটি নতুন প্রণোদনায় নারীদের এগিয়ে যাওয়ার অধিকারকে সমুন্নত করে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে বাংলার আকাশে বেগম রোকেয়াকেও ছাড়িয়ে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক গুণগত শিক্ষা দর্শন উপস্থাপন করে নারী শিক্ষা, নারী জাগরণ, নারী ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের বিশ্বজয়ী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ইতিহাসের অধ্যায়ে নতুন অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। যদিও অনেকক্ষেত্রে এই অধিকার অর্জনের অজুহাতে মেধাবী ও যোগ্যতম নারীদের অপদস্ত করে ছলচাতুরী-অভিনয় শৈলী-প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মেধাশূন্য-অযোগ্য-অদক্ষ কুৎসিত চরিত্রের কতিপয় নারী অনৈতিক-অবৈধ পন্থায় তদবির-লবিং বাণিজ্যের মোড়কে সর্বত্রই দল ও সরকারে বিভিন্ন পদ-পদবি-পদক দখলে দেশবাসীকে হতবাক করার বিপুল জনশ্রæতি রয়েছে। ১৯৮১ সালে ১৭ মে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অকুতোভয় সংগ্রামী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করে যে অবিনস্বর কার্যক্রমের জন্য তিনি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন, তাহলো জাতির জনকের হত্যার বিচার-দাবি এবং ঐতিহাসিক এই বিচারিক রায়ের কার্যকর বাস্তবায়ন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন সরকার গঠনের পর ২ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার এজাহার দায়ের করে ১২ নবেম্বর মহান জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলকরণ ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। উল্লেখ্য, ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে ১ মার্চ ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারকার্য শুরু, ১৯৯৮ সালে ৮ নবেম্বর মাননীয় বিচারক কাজী গোলাম রসুল কতৃক ছিয়াত্তর পৃষ্ঠার রায়ে ঘোষিত ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২০০০ সালে ১৪ নবেম্বর হাইকোর্টে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলে দ্বিধাবিভক্ত রায় এবং তৃতীয় মাননীয় বিচারপতির আদেশে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার চ‚ডান্ত সিদ্ধান্তে বাঙালীর বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার এক যুগান্তকারী অভিযাত্রা সূচিত হয়। ৩৪ বছর ধরে সমগ্র বাঙালী জাতির হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে সম্মানিত করে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিসমাপ্তীর সফল উদ্যোগের সকল কৃতিত্ব জাতির আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক প্রাণপ্রিয় নেত্রী একমাত্র শেখ হাসিনার। প্রাচ্যের আধুনিক উন্নয়ন নায়কের যে নামটি অতি সম্মানের সঙ্গে বিশ্ব সভায় উচ্চারিত, তিনি হচ্ছেন মালেশিয়ার ড. মাহাথির মুহাম্মদ। ২২ বছরের অত্যন্ত দক্ষ, যোগ্য ও প্রজ্ঞার রাষ্ট্র- প্রশাসনের মাধ্যমে যিনি মালেশিয়াকে একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অতি উঁচু মার্গের প্রাচ্যখ্যাত উন্নত দেশে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর বিভিন্ন ভাষণে যে বার্তাটুকু অত্যন্ত নিপুণভাবে বিশ্ববাসীকে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তা হল চমৎকার দুটি প্রত্যয়; ক) ঐড়হবংঃু (সততা) ও খ) ঙঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু(সম্ভাবনা) অর্থাৎ সততার কর্ষণ, চর্চা, বিকাশ ও বিস্তার এবং সচল সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে অপার সম্ভাবনাকে জাতির কল্যাণে নিশ্চিত করা। অতুলনীয় এই ব্যক্তিত্বের প্রাণস্পন্দন ছিল তাঁর দেশের জনগণের আস্থা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। দৃঢ়চিত্তে পশ্চিমা বিশ্বের সকল লুম্পেন বুর্জোয়া ব্যবস্থা ও সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে আপন শক্তিতে মহিয়ান হয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে প্রজ্বলিত করতে তিনি পরিপূর্ণ সক্ষম হয়েছেন। অনুরূপ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর অনেক ভাষণে যে বিষয়টি দাবি করেছেন- ‘সত্যের জয় অনিবার্য ’ এবং ‘সততার জয়ও অবশ্যই অনিবার্য’ তথা বলিষ্ঠচিত্তে নির্ভীক স্বাধীনসত্তায় আত্মপ্রত্যয়ী এ দৃঢ়চেতা নেত্রী তথাকথিত উন্নত শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু ও অপপ্রচারণা এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল অশুভ চক্রান্ত ও প্ররোচণাকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিস্থাপন করতে যথার্থ অর্থে সফল ও সার্থক হয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র এবং পদ্মা সেতু নির্মাণকে নিয়ে যে মিথ্যা নাটকের অবতারণা তার স্বরূপ যথার্থভাবে বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল অঙ্কের প্রয়োজনীয় বাজেটের আওতায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ এক অভূতপূর্ব সাফল্য ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। কবি সুকান্তের কবিতার বিখ্যাত কয়টি পঙক্তি আজ বাঙালীর আবেগি এবং অবিনাশী শক্তিকে নতুন করে শাণিত করেছে; ‘সাবাশ বাংলাদেশ, এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় -জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই; বিশ্বখ্যাত পুরস্কার গ্রহণে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা শুধু নিজেই পুষ্পিত হননি; পুরো বাঙালী জাতিরাষ্ট্রকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে এক ঈর্ষণীয় পর্যায়ে মর্যদাসীন করেছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসমূহ হলো- ২০০০ সালে ‘চবধৎষ ঝ ইঁপশ’ অধিৎফ, ২০১০ সালে যথাক্রমে সহা¯্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিশেষ করে শিশু মৃত্যু হার ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ পুরস্কার এবং ‘Indira Gandhi Peace Prize’, ২০১১ সালে ‘ICT Award’, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে UNESCO কর্তৃক যথাক্রমে ‘Cultural Diversity’ এবং ‘Tree of Peace’ Award’ অধিৎফ, ২০১৩ সালে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ‘United Nations South-South’ Award, ২০১৪ সালে ‘United Nations South-South Cooperation Visionary’ Award, ২০১৫ সালে যথাক্রমে ‘Women in Parliament Global Forum’ Award, ‘ICT in Sustainable Development’ Award এবং ’Champion of the Earth’ Award,, ২০১৬ সালে ‘Planet 50-50 Champion’ and ‘Agent of Change’ Award, ২০১৯ সালে ‘Life Time Contribution For Women Empowerment’, ’Vaccine Hero’, ’Champion Development For Youth’ Award ইত্যাদি। এছাড়াও ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার মামলা জয় এবং ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত স্থায়ী আদালতে ভারতের কাছ থেকে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ পরিমাণ অঞ্চল অর্জনে শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। সততা-স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সুনিপুণ চাষাবাদে দেশ ও মানবপ্রেম সঞ্চারণ সভ্যতার ইতিহাসে সুনিপুণ সমাদৃত। অতি সম্প্রতি দেশরতœ শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘চেয়ার ও কারাগারের অবস্থান কাছাকাছি’ নিদারুণ জ্যোৎসাহে আবারও দেশবাসীকে উদ্বেলিত করেছে। ২০১৭ সালের নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘পিপলস এ্যান্ড পলিটিকিস’ কর্তৃক বিশ্বের ১৭৩ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের মধ্যে সততার বিশ্ব-শীর্ষ পাঁচজনকে নির্ধারণ করেছেন যার মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় স্থানে অধিষ্ঠিত। এই গবেষণা কর্মে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের সতেরোটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান শতকরা পঞ্চাশভাগ দুর্নীতিমুক্ত। একশত নম্বরের মধ্যে জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল পেয়েছেন ৯০ নম্বর, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং পেয়েছেন ৮৮ নম্বর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ৮৭ নম্বর, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গ পেয়েছেন ৮৫ নম্বর, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি পেয়েছেন ৮১ নম্বর। সততার জন্য বিশ্ব স্বীকৃতি যথার্থ অর্থে প্রমাণ করল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পরিপূর্ণ সৎ ও সকল ব্যক্তিগত লোভ লালসার উর্ধে। প্রায় চার বছরের অধিকাল পূর্বে রোহিঙ্গা জাতিসত্তার নিধনকল্পে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক পরিচালিত অমানবিক-অমানুষিক হত্যাযজ্ঞের ফলে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ-আবালবৃদ্ধ জনতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সামান্য আশ্রয়ের খোঁজে ¯্রােতের মতো প্রতিনিয়ত ঢুকেছিল, তা এক মারাত্মক সঙ্কট ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছিল বাংলাদেশ ও দেশের সরকারকে। জাতির জনকের সুযোগ্য তনয়া অত্যন্ত সাহসী ও নির্ভীক কণ্ঠে বিশ্বে বিরল অনবদ্য মানবিকতায় ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষ যেখানে পেটভরে খেতে পাচ্ছে, সেখানে পাঁচ-সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের যোগান দেয়া দেশের জন্য কোন কঠিন কাজ নয়। আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে আমরা তাদের পাশে থাকব।’ এক অত্যন্ত উঁচুমার্গের অন্যতম বিশ্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়কোচিত-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব-সরকারপ্রধান হিসেবে সুদৃঢ় এবং সুস্পষ্টভাবে বলেছেন ‘এটি মিয়ানমার সরকারের সৃষ্ট সঙ্কট, এই সঙ্কট তাদেরই সমাধান করতে হবে। এই বিতাড়িত জনগোষ্ঠীকে স্বসম্মানে-স্বমর্যদায় সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনা ছিল ‘সেফ জোন নির্মাণ এবং পূর্ণ মানবিক মর্যাদা-নিরাপত্তা-অধিকারের’ ভিত্তিতে তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই সমস্যার টেকসই এবং একমাত্র স্থায়ী সমাধান। করোনা অতিমারীর দুঃসহ প্রাদুর্ভাবের সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি সংক্রমণ বিস্তার ও প্রাণ সংহারের দৃশ্যপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনার প্রথম-দ্বিতীয় ও তৃতীয় তরঙ্গের আঘাত সুচারু পরিকল্পনায় প্রতিরোধ-সাফল্য বিশ্বনন্দিত। করোনা যুদ্ধজয়ের আপতিক গৌরবগাথা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে উন্নীত করেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা-গৃহীত পদক্ষেপের যথার্থ প্রতিপালনে সামষ্টিক অর্থনীতিকে সচল রেখে দেশবাসীর জীবনপ্রবাহে গতিসঞ্চারের মহিমায় সরকারের ভূমিকা সর্বত্রই সমাদৃত হয়েছে। ভ্যাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ ও প্রয়োগে যথাযথ ব্যবস্থাপনাও সমধিক প্রশংসিত। তাঁর সরকার কর্তৃক গৃহীত কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, পর্যাপ্ত পরীক্ষণ কিট সংগ্রহ, গণস্বাস্থ্য সংস্থাকে কিট তৈরির অনুমোদন, প্রবাসীদের প্রতি প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ, সেনা বাহিনীর সহায়তায় সংশ্লিষ্ট সুবিধার সম্প্রসারণ অবিমিশ্র সুদূরপ্রসারী বিচক্ষণতা স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা অর্থনীতির গতিশীলতা আনয়নে প্রচণ্ড সহায়ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া জীবন্ত কিংবদন্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বছরের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিক্রমা তথা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের রোড়ম্যাপে অগ্রসরমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্র্যতার হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শ্রমঘন রফতানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উন্নয়ন, পোশাক ও ওষুধ শিল্পকে রফতানিমুখীকরণ ইত্যাদি আজ দেশের আর্থ-সামাজিক মানচিত্রে যুগান্তকারী অভিধায় সমুজ্জ্বল। অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামো, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুত, গ্যাস, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পদ্মা সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, মেট্রোরেল, টানেল নির্মাণ, পরিকল্পিত নগরায়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয়-ব্যবহার যোগ্য পানি প্রকল্প ও সুয়ারেজ প্রকল্পের বাস্তবায়নসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা-সক্ষমতা অর্জন বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ গরিব মেহনতি জনতার সুগভীর দরিদ্রতাকে উৎপাটন করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন; তারই আলোকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা ইতোমধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সুদৃঢ় লক্ষ্যস্থির নিশ্চিত করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন- এটিই আজকের দিনের প্রত্যাশিত প্রার্থনা। পরিশেষে ভারতবর্ষের প্রখ্যাত কবি নরেশ গুহ রচিত ‘জন্মদিনে’ কবিতার পঙক্তি উপস্থাপনে নিবন্ধের ইতি টানছি- ‘কত কিছু দৈবে ঘটে ধরণীর পদপ্রান্তে এসে!/বাউল নদীর স্রোত পাড়ি-ধসা দুঃস্বপ্নের শেষে/আশার সমুদ্রে মেশে। জনতার মেলা/ধাবমান প্রহরের ডঙ্কা শোনে। ভেঙ্গে গেলে খেলা/সোনার বিকেল পড়ে বসন্তের পাতায় পল্লবে;/ সব হবে-মন বলে-আবার সব হবে।/দ্রæত ট্রেন দুদণ্ডের শ্বাস ফেলে স্টেশনে দাঁড়ায়,/ জানালায় হাত নেড়ে যারা যায় তারা শুধু যায়?/ পিছু ফিরে তাকায় না, যদি চোখ ঘোর হয়ে আসে!/ দিনান্ত ফেরায় রঙ বীরভূমের আকাশে আকাশে।’ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা, জয়তু শেখ হাসিনা।
×