ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট অব থিংস-আগামীর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

ইন্টারনেট অব থিংস-আগামীর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ

ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) বলতে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও ইন্টারনেট সংযুক্ত বস্তুর একটি সিস্টেমকে বোঝায় যা কোন মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ এবং স্থানান্তর করতে সক্ষম। আইওটি ডিভাইসে সেন্সর এবং মিনিকম্পিউটার প্রসেসর থাকে; যা মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে সেন্সর দ্বারা সংগৃহীত ডেটাগুলোতে কাজ করে। মেশিন লার্নিং হচ্ছে কম্পিউটার যখন মানুষের কাছ থেকে তার আশপাশের তথ্য সংগ্রহ করে একইভাবে শেখে। মূলত এটিই আইওটি ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট করে তোলে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অটো-আইটি সেন্টারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক কেভিন এ্যাশটন ইন্টারনেট অব থিংসের জনক হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৯ সালে পিএ্যান্ডজি কোম্পানির একটি প্রকল্পে কাজ করার সময় কেভিন সর্ব প্রথম ইন্টারনেট অব থিংস পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। আইওটির মৌলিক উপাদান হচ্ছে কানেক্টেড ডিভাইসেস, সেন্ট্রাল কন্ট্রোল হার্ডওয়্যার, ডেটা ক্লাউড, ইউজার ইন্টারফেস, নেটওয়ার্ক ইন্টারকানেকশন, সিস্টেম সিকিউরিটি এবং ডেটা এ্যানালিটিক্স। আইওটি মূলত এমবেডেড সিস্টেমগুলোকে আন্তঃসংযোগ করে ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি এবং সেন্সর এই দুটি বিকশিত প্রযুক্তিকে একত্রিত করে। এই সংযুক্ত এমবেডেড সিস্টেমগুলো স্বাধীন মাইক্রো-কন্ট্রোলারভিত্তিক কম্পিউটার, যা ডেটা বা তথ্য সংগ্রহের জন্য সেন্সর ব্যবহার করে থাকে। এই আইওটি সিস্টেমগুলো ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, বা একটি কাস্টম কমিউনিকেশন সিস্টেমের মতো ওয়্যারলেস প্রটোকল দ্বারা যৌথ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। নোড বিতরণ এবং সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কিং প্রোটোকল নির্বাচন করা হয়। এই তথ্যটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মূল কেন্দ্র বা কম্পিউটারে পাঠানো হয়। এই প্রধান কম্পিউটার তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে। এমনকি এই বিশ্লেষণের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সিস্টেম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। ইন্টারনেট অব থিংস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে- নাম ইন্টারনেট অব থিংস হওয়া সত্ত্বেও আইওটির আসলে সব সময় ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না, ইন্টারনেট ছাড়াও আইওটি সম্ভব। আজকের ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে ডিভাইস, মেশিন এবং যে কোন আকারের বস্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে, একে অপরের সঙ্গে কার্যকরভাবে রিয়েল টাইমে কথা বলতে পারে। আইওটির শীর্ষ সুবিধার মাঝে রয়েছে খরচ কমানো, দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা, ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করা, গ্রাহকের অভিজ্ঞতা, সক্রিয়তা এবং দ্রুততা। আইওটি ডিভাইসের চমৎকার কিছু উদাহরণ হলো স্মার্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেম, অটোনোমাস ফার্মিং ইকুইপমেন্ট, ওয়্যারেবল হেলথ মনিটর, স্মার্ট কারখানার সরঞ্জাম, ওয়্যারলেস ইনভেন্টরি ট্র্যাকার, অতি উচ্চ গতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট, বায়োমেট্রিক সাইবার সিকিউরিটি স্ক্যানার। মানুষের জীবনযাপনকে সহজতর করতে আইওটির ভূমিকা অপরিসীম। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের ব্যবহার্য বিভিন্ন ডিভাইস যেমন লাইট-ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্মার্টফোনের সাহায্যে কয়েকটি চাপেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অব থিংস এখন অনেক বড় এবং সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইওটির গ্রহণযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, ভোক্তা এবং সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। আমাজনের ইকো ডট থেকে শুরু করে লজিস্টিকের জন্য বিশেষায়িত এ্যাপ ব্যবসা ও ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই আইওটির রয়েছে উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ-বিধি। উল্লেখ্য, বিশ্বের সংযুক্ত আইওটি ডিভাইসের সংখ্যা ৩০ বিলিয়নের বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সংযুক্ত আইওটি ডিভাইসের সংখ্যা ৭৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার আইওটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্রহণ করছে নানা ধরনের উদ্যোগ। আইওটি নিয়ে কাজ করছে এমন স্টার্টআপ, এই প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পসহ মিরপুরে আইওটি ল্যাব নির্মাণের জন্য অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার, যা নতুন নতুন দেশীয় আইওটি ডিভাইস তৈরিসহ এই সেক্টরে গবেষণার নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করবে। আশা করা যায়, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে এই ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি। লেখক : পরামর্শক (গবেষণা প্রকৌশলী), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল [email protected]
×